Quantcast
Channel: QuranerAlo.com – কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
Viewing all 402 articles
Browse latest View live

সালাত ও পবিত্রতা –শর্ত, ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ

$
0
0

solat1

 শায়খ আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায (রহিমাহুল্লাহ)

অনুবাদ : মোহাম্মদ রকীবুদ্দীন আহমাদ হুসাইন |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

সালাতের শর্তাবলী

সালাতের শর্তাবলী মোট ৯টি। যথাঃ

  1. ইসলাম
  2. বুদ্ধিমত্তা
  3. ভাল-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান হওয়া
  4. নাপাকি দূর করা
  5. ওজু করা
  6. সতরে আওরাত অর্থাৎ লজ্জাস্থানসহ শরীরের নির্ধারিত অঙ্গগুলো আবৃত রাখা
  7. সালাতের সময় উপস্থিত হওয়া
  8. কিবলামুখী হওয়া এবং
  9. নিয়ত করা, নিয়ত পড়া নয়

ওজুর ফরজসমূহ

এগুলো মোট ৬টি। যথাঃ

  1. মুখমণ্ডল ধৌত করা; পানি দিয়ে নাক ঝাড়া ও কুলি করা এর অন্তর্ভুক্ত,
  2. কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত করা,
  3. সম্পূর্ণ মাথা মসেহ করা; উভয় কান উহার অন্তর্ভুক্ত,
  4. গোড়ালী পর্যন্ত উভয় পা ধৌত করা,
  5. ওজুর কার্যাবলী পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা এবং
  6. এগুলো পরপর সম্পাদন করা

উল্লেখ থাকে যে, মুখমণ্ডল, উভয় হাত ও পা তিনবার করে ধৌত করা মুস্তাহাব। একইভাবে কুলি করা ও নাকে পানি দিয়ে তিনবার ঝাড়া মুস্তাহাব। ফরজ মাত্র একবারই। তবে, মাথা মসেহ একাধিকবার করা মুস্তাহাব নয়। এই ব্যাপারে কতিপয় সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে।

 

সালাতের রুকন (ফরজ)সমূহ

সালাতের রুকন ১৪টি। যথাঃ

  1. সমর্থ হলে সালাতে দণ্ডায়মান হওয়া,
  2. ইহরামের তাকবীর বলা,
  3. সূরা ফাতিহা পড়া,
  4. রুকুতে যাওয়া,
  5. রুকু হতে উঠে সোজা দণ্ডায়মান হওয়া,
  6. সপ্তাঙ্গের উপর ভর করে সিজদা করা,
  7. সিজদা থেকে উঠা,
  8. উভয় সিজদান মধ্যে বসা,
  9. সালাতের সকল কর্ম সম্পাদনে স্থিরতা অবলম্বন করা,
  10.  সকল রুকন ধারাবাহিকভাবে তরতীবের সাথে সম্পাদন করা,
  11.  শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়া,
  12.  তাশাহহুদ পড়ার জন্য শেষ বারে বসা,
  13.  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়া এবং
  14.  ডানে-বামে দুই সালাম প্রদান করা।

 

সালাতের ওয়াজিবসমূহ

এগুলোর সংখ্যা হলো মোট ৮টি। যথাঃ

  1. ইহরামের তাকবীর ব্যতীত অন্যান্য তাকবীরগুলো বলা,
  2. ইমাম ও একা নামাজীর পক্ষে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ বলা,
  3. সকলের পক্ষে ‘রববানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলা,
  4. রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আজীম’ বলা,
  5. সিজদায় ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা’ বলা,
  6. উভয় সিজদার মধ্যে ‘রাব্বিগফিরলী’ বলা,
  7. প্রথম তাশাহ্হুদ পড়া
  8. দ্বিতীয় রাকা‘আতে প্রথম তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসা।[1]


[1] বি.দ্র.: এখানে ওজুর শর্তাবলীসহ সালাতের শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবগুলো মাননীয় মুফতী প্রধান শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায কর্তৃক লিখিত কিতাব ‘গুরুত্বপূর্ণ দরসসমূহ’ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। — অনুবাদক


সালাত ও পবিত্রতা –ওজু, গোসল ও সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি

$
0
0

how-to-perform-salah--the-muslim-prayer_eng

শায়খ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)

অনুবাদ : মোহাম্মদ রকীবুদ্দীন আহমাদ হুসাইন |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ওজু, গোসল ও সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি

সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য এবং দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম ও সৃষ্টির সেরা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীগণের উপর।

আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুখাপেক্ষী বান্দাহ মুহাম্মদ ইবন ছালেহ আল-উসাইমীন বলছিঃ

আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূলের আলোকে, ওজু, গোসল ও সালাত সম্পর্কে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি লিখা হলো।

ওজুর পদ্ধতি

ওজু

এটি একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা ছোট ছোট নাপাকী যেমন পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গমণ, গভীর নিদ্রা ও উটের গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি থেকে অর্জন করতে হয়।

ওজু সম্পাদনের পদ্ধতি

  1. প্রথমে মনে মনে ওজুর নিয়ত করবে। এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা যাবে না। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজু, সালাত বা অন্য কোনো ইবাদতের শুরুতে নিয়ত উচ্চারণ করেননি। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তা‘আলা তো অন্তরের সবকিছু সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত, সুতরাং অন্তরস্থ কোনো বিষয় সম্পর্কে উচ্চারণ করে তাঁকে খবর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
  2. এরপর আল্লাহ নাম নিতে গিয়ে বলবেন : “বিসমিল্লাহ”।
  3. তারপর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে।
  4. অতঃপর কুলি করবে এবং পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝাড়বে।
  5. এরপর আপন চেহারা তিনবার ধৌত করবে, প্রস্থে এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত এবং দৈর্ঘ্যে মাথার চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নীচ পর্যন্ত।
  6. এরপর উভয় হাত আঙ্গুলির অগ্রভাগ থেকে কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডানহাত পরে বামহাত ধৌত করবে।
  7. এরপর ভিজা হাতদ্বয় দিয়ে একবার মাথা মসেহ করবে; হাতদ্বয় প্রথমে মাথার সম্মুখভাগ থেকে পশ্চাৎভাগে নিয়ে যাবে এবং পুনরায় মাথার অগ্রভাগে নিয়ে আসবে।
  8. তারপর উভয় কান একবার করে মসেহ করবে; উভয় তর্জনী অঙ্গুলীর অগ্রভাগ উভয় কানের ভিতরে ঢুকাবে এবং উভয় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে বহির্ভাগ মসেহ করবে।
  9. এরপর উভয় পা আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ থেকে উভয় গোড়ালী পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডান পা পরে বাম পা ধৌত করবে।

গোসল

গোসল

একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা জানাবাত ও হায়েয (ঋতু) জাতীয় বড় নাপাকি থেকে অর্জন করতে হয়।

গোসল করার পদ্ধতি

  1. প্রথমতঃ অন্তরে গোসলের নিয়ত করবে; মুখে তা উচ্চারণ করা যাবে না।
  2. এরপর আল্লাহ তা‘আলার নাম নিতে গিয়ে বলবে : ‘বিসমিল্লাহ’
  3. তারপর পূর্ণভাবে ওজু করবে।
  4. এরপর মাথার উপর পানি ঢালবে; পানি যখন ছড়িয়ে পড়বে তখন গায়ের উপর তিনবার ব্যাপকভাবে পানি ঢেলে দিবে।
  5. অতঃপর সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করবে।

তায়াম্মুম

তায়াম্মুম

একটি অপরিহার্য পবিত্রতা, যা পানি না পাওয়া অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম অবস্থায় মাটির দ্বারা ওজু বা গোসলের পরিবর্তে অর্জন করা হয়।

 তায়াম্মুম করার পদ্ধতি

প্রথমে অজু বা গোসল যে বিষয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে তার নিয়ত করবে। অতঃপর মাটিতে অথবা মাটি সংশ্লিষ্ট দেয়াল বা অন্য কিছুর উপর হাত মারবে এবং চেহারা ও উভয় পাঞ্জা মসেহ করবে।

সালাত

সালাত

আর তা বহুবিধ কথা ও কাজ সম্বলিত এমন একটি ইবাদত যার শুরু হয় ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবার) বলে এবং শেষ হয় ‘সালাম’ (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলে।

যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে তখন তার উপর ওয়াজিব হয় সে যেন এর পূর্বে ওজু করে যদি সে ছোট নাপাকি অবস্থায় থাকে; অথবা সে যেন তায়াম্মুম করে যদি সে পানি না পায় অথবা পানি ব্যবহারে সে অক্ষম হয়। এরপর সে যেন তার সমস্ত শরীর, কাপড় ও সালাতের স্থান নাজাসাত (নাপাক বস্তু) থেকে পবিত্র রাখে।

 সালাত আদায়ের পদ্ধতি

  1. প্রথমে সম্পূর্ণ শরীরসহ কিবলামূখী হবে; অন্য কোনো দিকে ফিরবে না বা লক্ষ্যও করবে না।
  2. এরপর যে সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে অন্তরে তার নিয়ত করবে; এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করবে না।
  3. এরপর ইহরামের তাকবীর দিতে গিয়ে বলবে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং তাকবীরের সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
  4. তারপর ডান হাতের পাঞ্জা বাম হাতের পাঞ্জার বহির্ভাগে ধরে বুকের উপর রাখবে।
  5. এরপর ইস্তেফতাহের (প্রারম্ভিক) দু‘আ পড়বে এবং বলবে,

«اللهم باعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب اللهم تقّني من خطاياي كما ينقى الثوب الأبيض من الدنس اللهم أغسلني من خطاياي بالماء والثلج والبرد»

উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা বা-ইদ বাইনী বাইনা খাতায়ায়া- কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কীনী মিন খাতায়ায়া কামা ইনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্ দানাসী, আল্লাহুম্মাগছিলনী মিনাল খাতায়ায়া- বিল মা-ঈ ওয়াস সালজী ওয়াল বারাদি।”

অর্থ: হে আল্লাহ! পূর্ব ও পশ্চিম যেমন পরস্পর থেকে দূরে আমাকে তেমনি আমার পাপ থেকে দূরে রাখ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পাপ মুক্ত করে এমনভাবে পরিস্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড় ধৌত করলে তা ময়লা থেকে পরিস্কার হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।” অথবা বলবেঃ

«سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»

উচ্চারণঃ “সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারাকাস্ মুকা ওয়াতা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।”

অর্থ: “সমস্ত মর্যাদা ও গৌরব তোমারই হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা কেবল তোমারই জন্য, তোমার নামেই সমস্ত বরকত ও কল্যাণ এবং তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে। আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই।

  1. এরপর বলবেঃ

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم

“আউজু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রজীম” অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ তা‘আলার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

  1. অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বে এবং বলবেঃ

﴿ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ [الفاتحة: ١،  ٧]

অর্থ: ১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের রব্ব। ২. যিনি অতি মেহেরবান ও পরম দয়ালু। ৩. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। ৪. হে আল্লাহ, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ৫. আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ দেখাও। ৬. ঐ সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ। ৭. ওদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গজব নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।

তারপর বলবেঃ ‘আমী-ন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ কবুল কর’।

  1. এরপর পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে যে পরিমাণ সহজসাধ্য হয় পড়বে, তবে ফজরের সালাতে দীর্ঘ ক্বিরাত পড়ার চেষ্টা করবে।
  2. তারপর রুকুতে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি তা‘যীম প্রদর্শনার্থে মাথাসহ আপন পিঠ নত করবে। রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে। সুন্নাত হলোঃ নামাজী রুকুতে তার পিঠ নত করবে, মাথা তার বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলিগুলি খোলা অবস্থায় উভয় হাঁটুতে রাখবে।
  3.  রুকুতে তিনবার سبحان ربي العظيم ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলবে। আর যদি এর অতিরিক্ত ‘সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি’ বলে তা হলে উত্তম হয়।
  4. তারপর রুকু হতে এই বলে মাথা উঠাবেঃ سمع الله لمن حمده ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ এবং উভয় হাত উভয় কাঁধ বরাবর উঠাবে। মুক্তাদী হলে উহার পরিবর্তে বলবেঃربنا ولك الحمد  ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি আমাদের রব এবং তোমারই জন্য সর্ববিধ প্রশংসা।
  5.  এরপর রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর বলবেঃ

ربنا ولك الحمد ملء السموات والأرض وملء ما شئت من شيء بعد

উচ্চারণঃ “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদ ওয়া মিলআ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু”

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা যা আকাশ ভর্তি করে দেয়, যা পৃথিবী পূর্ণ করে দেয় এবং এই গুলি ছাড়া তুমি অন্য যা কিছু চাও তা পূর্ণ করে দেয়।

  1.  এরপর বিনীত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রথম সিজদা করবে এবং সিজদায় গিয়ে বলবেঃ ‘আল্লাহু আকবার’ অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। সাতটি অঙ্গের উপর সিজদাহ করবে; অঙ্গগুলো হলো: নাকসহ কপাল, উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের অগ্রভাগ। উভয় মাসল শরীরের উভয় কিনারা থেকে ব্যবধানে রাখবে, যমীনের উপর উভয় বাহু কনুই পর্যন্ত বিছাবে না এবং অঙ্গলীসমূহের অগ্রভাগ কিব্লার দিকে রাখবে।
  2. সিজদায় গিয়ে তিনবার বলবেঃ سبحان ربي الأعلى “সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা” অর্থাৎ আমার সর্বোচ্চ প্রভুর প্রশংসা করছি।

আর যদি এর অতিরিক্ত নিম্নের তাসবীহও পাঠ করে তাহলে উত্তম হয়ঃ

سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী”

অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার প্রশংসা সহকারে, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর।”

  1. এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদাহ থেকে মাথা উঠাবে।
  2. তারপর উভয় সিজদাহ’র মধ্যবর্তী সময়ে বাম পায়ের উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। ডান হাত ডান জানুর শেষ প্রান্তে অর্থাৎ হাটু সংলগ্ন অংশের উপর রাখবে এবং খিনছির ও বিনছির আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে রাখবে, তর্জনী উঠিয়ে রাখবে ও দু‘আর সময় নাড়াবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীর অগ্রভাগ মধ্যমাঙ্গুলীর অগ্র ভাগের সাথে গোলাকারে মিলিয়ে রাখবে। এইভাবে বাম হাতের আঙ্গুলগুলি খোলা অবস্থায় হাঁটু সংলগ্ন বাম জানুর উপর রাখবে।
  3. উভয় সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে বলবেঃ

رب اغفرلي وارحمني واهدني وارزقني واجبرني وعافني

  1. এরপর আল্লাহর প্রতি বিণীত হয়ে কথা ও কাজে প্রথম সিজদাহ’র মত দ্বিতীয় সিজদাহ্ করবে এবং সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে।
  2. এরপর দ্বিতীয় সিজদাহ থেকে আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাবে এবং কথা ও কাজে প্রথম রাকা‘আতের মত দ্বিতীয় রাকা‘আত পড়বে, তবে প্রথম রাকা‘আতের মত প্রারম্ভিক দু‘আ পড়তে হবে না।
  3. তারপর দ্বিতীয় রাকা‘আত শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বসবে এবং উভয় সিজদাহর মধ্যবর্তী বৈঠকের মতই বসবে।
  4. এই বৈঠকে তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়বে; আর তাশাহ্হুদ হলোঃ

التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله -

«اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنّك حميد مجيد» (رواه البخاري ومسلم)

উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্ব ত্বাইয়্যিবাতু আস্‌সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল্-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ-লা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।

অর্থ: “যাবতীয় সম্মান-সম্ভাষণ, সকল সালাত, ও পবিত্রতা সমস্তই আল্লাহর জন্য, হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি সালাত প্রেরণ কর, যেমনভাবে সালাত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত প্রেরণ কর, যেমনভাবে বরকত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।

এরপর বলবেঃ

أعوذ بالله من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ومن فتنة المحيا والممات ومن فتنة المسيح الدجال -

উচ্চারণঃ “আঊযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন ফিত্নাতিল্ মাহ্ইয়া ওয়াল মামাতি ওয়া মিন ফিত্নাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জালি।

অর্থ: “আমি আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে।”

এরপর আপন প্রভু- প্রতিপালকের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল চেয়ে পছন্দমত যে কোনো দু‘আ করতে পারে।

  1. পরিশেষে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলবে। এই ভাবে বাম দিকেও মুখ ফিরিয়ে সালাম বলবে।
  2. সালাত যদি তিন রাকা‘আতী অথবা চার রাক‘আতী হয় তা হলে প্রথম তাশাহ্হুদ অর্থাৎ আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু” পড়ে থেকে যাবে।
  3. এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
  4. এরপর অবশিষ্ট সালাত দ্বিতীয় রাকা‘আতের বর্ণনা অনুযায়ী আদায় করবে; তবে সালাতের এই অংশে দাঁড়িয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে।
  5. এরপর তাওয়াররুক করে বসবে অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা ডান পায়ের নিম্ন দিয়ে বের করে রাখবে। পাছা যমীনের উপর স্থির রাখবে এবং উভয় হাত উভয় জানুর উপর সেইভাবে রাখবে যেভাবে প্রথম তাশাহ্হুদের সময় রেখেছিল।
  6. এই বৈঠকে পূর্ণ তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠ করবে।
  7. অবশেষে “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম করবে।

 যে সব বিষয় সালাতে মাকরূহ

  1. সালাতের মধ্যে মাথা বা চক্ষু দিয়ে এদিক-ওদিক ভ্রুক্ষেপ করা। আকাশের দিকে চক্ষু উত্তোলন করা হারাম।
  2. সালাতের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে নড়া-চড়া করা।
  3. সালাতের মধ্যে ব্যস্ত রাখে অথবা মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন কোনো বিষয় সঙ্গে রাখা; যেমন, ভারী কোনো বিষয় বা রঙ্গিন কোনো কিছু যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
  4. সালাতের মধ্যে তাখাছ্ছুর অর্থাৎ কোমরে হাত রাখা।

যে সব বিষয় সালাত বাতিল করে

  1. ইচ্ছাকৃত কথাবর্তা বলা, তা কম হলেও।
  2. সম্পূর্ণ শরীর ক্বিবলার দিক হতে ফিরে যাওয়া।
  3. পিছন দিক থেকে বাতাস বের হওয়া অথবা ওজু গোসল ওয়াজিব করে এমন কোনো বিষয় ঘটে যাওয়া।
  4. বিনা প্রয়োজনে পরপর অধিক মাত্রায় নড়াচড়া করা।
  5. হাসি, তা কম হলেও সালাত বাতিল করে।
  6. ইচ্ছা করে অতিরিক্ত রুকু, সিজদা, ক্বিয়াম বা উপবেশন করা।
  7. ইচ্ছা করে ইমামের আগে-আগে যাওয়া।
  8. ওজু ভেঙ্গে যাওয়া।

সালাতে ভুলের সিজ্দাহ আদায় সম্পর্কে কয়েকটি হুকুম

  1. যদি কেউ সালাতে ভুল করে অতিরিক্ত কোনো রুকু, সিজদাহ ক্বিয়াম বা উপবেশন করে ফেলে তাহলে সে প্রথম সালাম ফিরিয়ে ভুলের জন্য দু’টি সিজদাহ্ দিবে এবং আবার সালাম করবে।

উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে পঞ্চম রাকা‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে গেল, অতঃপর তার ভুল স্মরণ হ’ল অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, তখন সে বিনা তাকবীরে ফিরে গিয়ে বসে পড়বে এবং তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ে সালাম ফিরাবে; তারপর দুই সিজদাহ্ দিয়ে উভয় দিকে সালাম ফিরাবে। এ ভাবে যদি সে এই অতিরিক্ত কাজ সম্পর্কে সালাত শেষ হওয়ার পূর্বে অবগত না হয় তাহলে শেষ পর্যায়ে সে ভুলের দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম ফিরাবে।

  1. কেউ যদি ভুলে সালাত শেষ করার পূর্বে সালাম করে ফেলে এবং কিছু সময়ের মধ্যে তা স্মরণ হয়ে যায় অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তখন সে প্রথম সালাতের উপর ভিত্তি করে অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করবে, তারপর সালাম করবে; অতঃপর দু’টি সিজদাহ দিয়ে আবার সালাম করবে।

উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে ভুল করে তৃতীয় রাকা‘আতে সালাম করে ফেললো, অতঃপর স্মরণ হলো অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল; তখন সে উঠে চতুর্থ রাকা‘আত পড়ে সালাম করবে, তারপর ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিয়ে পুনরায় সালাম করবে। আর যদি সালাতের অনেক পরে এই ভুল স্মরণ হয় তাহলে সালাত প্রথম থেকে পুনরায় পড়তে হবে।

  1. যদি কোনো লোক প্রথম তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ) অথবা সালাতের অন্য কোনো ওয়াজিব ভুলে ছেড়ে দেয়, তাহলে সে সালামের পূর্বে শুধু ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করলে চলবে; অন্য কিছু করতে হবে না। আর যদি স্থান ত্যাগের পূর্বে স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই তা পড়ে নিবে; অন্য কিছু করতে হবে না। তবে স্থান ত্যাগের পর এবং পরবর্তী স্থানে পৌঁছার পূর্বে যদি স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সেই স্থানে ফিরে তা আদায় করে নিবে।

উদাহরণঃ যদি নামাজী প্রথম তাশাহ্হুদ ভুলে না পড়ে তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য পূর্ণ ভাবে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে আর প্রত্যাবর্তন না করে শেষ বৈঠকে সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ আদায় করবে। আর যদি তাশাহহুদের জন্য বসে তাশাহহুদ পড়া ভুলে যায়, এরপর দাঁড়ানোর পূর্বে তার স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই সে তাশাহহুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তার অন্য কিছু করতে হবে না। এ ভাবে যদি সে তাশাহ্হুদের জন্য না বসে দাঁড়িয়ে যায় এবং পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর পূর্বে তা স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সে ফিরে বসে তাশাহ্হুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তবে আলেমগণের মতে এমতাবস্থায় সে ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করবে। কেননা, সে তাশাহহুদ না পড়ে উঠতে গিয়ে সালাতে অতিরিক্ত কাজ করে ফেলেছে।

  1. কারো যদি সালাতে সন্দেহ হয় যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একটির প্রতি তার বেশী ঝোঁক না হয়, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।

উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে দ্বিতীয় রাকা‘আতে সন্দেহে পতিত হয়, এটা দ্বিতীয় রাকা‘আত না তৃতীয় রাকা‘আত? এবং কোনো একদিকে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।

  1. কেউ যদি সালাতে সন্দেহ করে যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একদিকে তার অধিকতর ঝোঁক থাকে তখন সে ঐ দিকের উপর ভিত্তি করে, তা কম হোক অথবা বেশী হোক, সালাত পূর্ণ করবে; অতঃপর সে সালামের পর দু’টি ভুলের সিজদাহ আদায় করে আবার সালাম করবে।

উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকা‘আতে তার সন্দেহ হলো: সালাত দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত; তবে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে তিন রাকা‘আতের। এমতাবস্থায় সে তিন রাকা‘আত ধরেই সালাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে; অতঃপর ভুলের দুই সিজদা দিয়ে পুনরায় সালাম করবে।

সালাত শেষ করার পর যদি কারো সন্দেহ হয় তা হলে এর প্রতি সে যেন ভ্রুক্ষেপ না করে। হ্যাঁ, যদি স্থির বিশ্বাস হয় তা হলে সে সেমতেই কাজ করবে।

যদি কেউ বেশী বেশী সন্দেহ পোষণকারী হয় তাহলে সে তার সন্দেহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না। কারণ, এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা।

আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয়নবী, তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

সালাত ও পবিত্রতা –রোগীর সালাত

$
0
0

11982_10151631702843033_1921499306_n

শায়খ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)

অনুবাদ : মোহাম্মদ রকীবুদ্দীন আহমাদ হুসাইন |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

রোগী কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে

  1. রোগীর উপর ওয়াজিব হলো পানির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। সুতরাং সে ছোট নাপাকি থেকে অজু করবে এবং বড় নাপাকি থেকে গোসল করবে।
  2. আর যদি পানির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে সে সামর্থ না হয়, তা অপারগতা, রোগবৃদ্ধির ভয় অথবা আরোগ্য লাভে দেরী হওয়ার আশঙ্কায় হোক, সে তখন তায়াম্মুম করতে পারে।
  3. তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলোঃ সে তার উভয় হাত মাটির উপর মেরে তার দ্বারা প্রথমে সম্পূর্ণ চেহারা মসেহ করবে, তারপর উভয় পাঞ্জা একটি দিয়ে অপরটি মসেহ করবে।
  4. যদি রোগী নিজে নিজে পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে তাহলে অপর কোনো ব্যক্তি তাকে ওজু বা তায়াম্মুম করাবে।
  5. যদি রোগীর পবিত্রতা অর্জনের (ওজুর) কোনো অঙ্গে জখম থেকে থাকে তাহলে সে তা ধৌত করে নিবে। আর যদি ধুইলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে ভাল করে মসেহ করে নিবে অর্থাৎ পানির দ্বারা হাত সিক্ত করে জখমের উপর বুলিয়ে নিবে। আর মসেহ দ্বারাও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হলে সে তায়াম্মুম করে নিবে।
  6. পবিত্রতা অর্জনের কোনো অঙ্গে যদি ভাঙ্গন থাকে এবং নেকড়া অথবা জিব্স জাতীয় কিছুর দ্বারা পট্টি দেওয়া থাকে তা হলে সেই অঙ্গ না ধুয়ে তার উপর দিয়ে মসেহ করে নিবে। তায়াম্মুম করার কোনো প্রয়োজন নেই; কেননা, মসেহ ধোয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়ে গেছে।
  7. দেয়াল অথবা অন্য কোনো ধুলাযুক্ত পবিত্র বস্তুর উপর হাত মেরে তায়াম্মুম করা জায়েয আছে। যদি দেয়াল মাটি জাতীয় নয় এমন কোনো বস্তু দ্বারা প্রলেপ করা হয়, যেমন রং এর আস্তরণ, তাহলে তার দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে না।
  8. মাটির উপর অথবা ধুলাযুক্ত দেয়াল অথবা অন্যকিছুর উপর তায়াম্মুম করা সম্ভব না হলে একটি পাত্র বা রুমালের মধ্যে মাটি রেখে তা থেকে রোগী তায়াম্মুম করে নিতে পারে।
  9. যদি কোনো এক সালাতের জন্য রোগী তায়াম্মুম করে এবং অপর সালাত পর্যন্ত তার পবিত্র বহাল থাকে তা হলে সে প্রথম তায়াম্মুম দিযে পরবর্তী সালাত পড়ে নিতে পারে, দ্বিতীয় সালাতের জন্য তাকে আবার তায়াম্মুম করতে হবে না। কেননা, সে পবিত্র অবস্থায় বহাল রয়েছে এবং তা বাতিল হয়নি।
  10. রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, তার সম্পূর্ণ শরীর নাজাসাত (অপবিত্র বিষয়) থেকে পবিত্র করা। আর যদি তা সম্ভব না হয় তা হলে সেই অবস্থায়ই সালাত পড়ে নিবে, পুনরায় তা পড়তে হবে না।
  11. রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, পবিত্র কাপড়ে সালাত পড়া। যদি কাপড় নাপাক হয়ে যায় তাহলে উহা ধুয়ে নিবে অথবা উহার পরিবর্তে অন্য পবিত্র কাপড় বদলে নিবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে ঐ অবস্থায়ই সালাত পড়লে তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে; পুনরায় সালাত পড়তে হবে না।
  12. রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, পবিত্র স্থান ও বস্তুর উপর সালাত পড়া। যদি স্থান অপবিত্র হয় তা হলে তা ধৌত করে নিবে অথবা পবিত্র কোনো বস্তু দিয়ে বদলে নিবে অথবা এর উপর পবিত্র কোনো কিছু বিছিয়ে নিবে। তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে যে অবস্থায় থাকে সে অবস্থায়ই সালাত পড়ে নিবে। সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় সালাত পড়তে হবে না।
  13. পবিত্রতা অর্জনে অপারগ হওয়ার কারণে রোগীর পক্ষে নির্ধারিত সময়ের পর দেরী করে সালাত পড়া জায়েয নয়; বরং সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে সময়মত সালাত পড়ে নিবে; যদিও তার শরীরে বা কাপড়ে অথবা সালাতের স্থানে এমন নাজাসাত থেকে যায় যা দূর করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

রোগী কিভাবে সালাত পড়বে

  1. রোগীর উপর ওয়াজিব হলো সে ফরজ সালাত দাঁড়িয়ে পড়বে; তা নত হয়ে হোক আর প্রয়োজনে লাঠির উপর অথবা দেয়ালের উপর ভর দিয়ে হোক।
  2. রোগী দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে সালাত পড়বে। তবে উত্তম হলো দাঁড়ানো ও রুকুর ক্ষেত্রে চার জানু হয়ে বসা।
  3. যদি রোগীর পক্ষে বসে সালাত পড়া সম্ভব না হয় তাহলে সে ক্বিবলামূখী হয়ে পার্শ্বের উপর কাত অবস্থায় সালাত আদায় করবে। ডান পার্শ্বে কাত হওয়া ভাল। আর যদি ক্বিবলামূখী হওয়া সম্ভব না হয় তা হলে যে দিকে আছে সে দিকেই মুখ করে সালাত পড়ে নিলে তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় সেই সালাত পড়তে হবে না।
  4. রোগী যদি পার্শ্বের উপর কাত হয়ে সালাত পড়তে অপারগ হয় তা হলে ক্বিবলার দিকে পা রেখে চিত হয়ে সালাত পড়ে নিবে। তবে উত্তম হবে মাথাটি একটু উপরে তুলে রাখা, যাতে করে সে ক্বিবলামূখী হতে পারে। যদি পা ক্বিবলার দিকে রাখতে না পারে তা হলে যেভাবেই থাকে সেভাবেই রেখে সালাত পড়ে নিবে এবং পুনরায় সেই সালাত তাকে পড়তে হবে না।
  5. রোগীর উপর ওয়াজিব হলো, সালাতে সঠিকভাবে রুকু ও সিজদাহ সম্পাদন করা। আর যদি সম্ভব না হয় তা হলে ইশারায় রুকু ও সিজদাহ আদায় করবে। তবে রুকুর চেয়ে সিজদায় মস্তক অধিকতর নত করবে। যদি রোগী রুকু আদায় করতে সমর্থ হয় এবং সিজদা করতে না পারে তা হলে সে সঠিক ভাবে রুকু আদায় করবে এবং ইশারার মাধ্যমে সিজদাহ আদায় করবে আর যদি সে সিজদাহ করতে পারে এবং রুকু করতে না পারে না তা হলে সে সঠিক অবস্থায় সিজদাহ আদায় করবে এবং ইশারার মাধ্যমে রুকু সম্পাদন করবে।
  6. রোগী যদি রুকু ও সিজদাহ মাথার ইশারায় আদায় করতে সমর্থ না হয় তা হলে তা চোখের ইশারায় আদায় করবে এবং রুকুর বেলায় সামান্য এবং সিজদাহর বেলায় একটু বেশী পরিমাণে চোখ দাবাইবে। হাতের দ্বারা ইশারা করা, যেমন - কোনো কোন রোগী করে থাকে, শরীয়ত সম্মত নয়। এর কোনো আসল না কুরআন বা সুন্নাতে আছে, না বিশ্বস্ত আলেমবর্গের কোনো বক্তব্যে রয়েছে।
  7. যদি রোগীর পক্ষে মাথার দ্বারা বা চোখের দ্বারা ইশারা করা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দিয়ে সালাত পড়বে, এরপর অন্তর দিয়ে রুকু, সিজদাহ, ক্বিয়াম ও উপবেশনের নিয়ত করবে। কারণ, প্রত্যেক লোকের নিয়তানুসারে তার কাজের মূল্যায়ন করা হয়।
  8. রোগীর উপর ওয়াজিব হলো: প্রত্যেক সালাত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা এবং সাধ্যমত ওয়াজিবসমূহ সঠিকভাবে সম্পাদন করা। যদি প্রত্যেক সালাত তার নির্ধারিত সময়ে পড়া তার পক্ষে কঠিন হয় তাহলে যোহর ও আসর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়বে। সে পরবর্তী সালাত অর্থাৎ যোহরের সাথে আসর এবং মাগরিবের সাথে এশার সালাত আগেই একত্র করে পড়তে পারে। তবে ফজরের সালাত তার পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী কোনো সালাতের সাথে কোনো অবস্থায় একত্র করে পড়া জায়েয নয়।
  9. যদি কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে মুসাফির অবস্থায় থাকে তখন সে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত চার রাকা‘আতের সালাত অর্থাৎ যোহর, আছর ও এশার সালাত দু’রাকাআত করে পড়তে পারে। তার সফর দীর্ঘ মেয়াদী হোক অথবা স্বল্পমেয়াদী তাতে কোনো পার্থক্য হবে না।

আল্লাহই আমাদের তাওফীকদাতা

ইত্তেবায়ে রাসূল

$
0
0

559426_326322267436320_2034527550_n

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের | সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

ইত্তেবার অর্থ:

আভিধানিক অর্থে ইত্তেবা অর্থ হল; কারো পদচিহ্ন দেখে দেখে চলা। এ শব্দটি অনুসরণ, অনুকরণ, মান্যকরণ, আদর্শ জ্ঞান করণ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

শরিয়তের পরিভাষায় ইত্তেবা:

দ্বীনের সকল বিষয় তথা ‘আক্বিদা-বিশ্বাস, কথা, কাজ, গ্রহণ- বর্জন সহ সর্বক্ষেত্রে রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণ করাকে ইত্তেবা বলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজটি যেভাবে করেছেন সেটি ঠিক সেভাবে করাই হল রাসূলের ইত্তেবা বা অনুসরণ। রাসূলের ইত্তেবা ছাড়া কোন ইবাদত শুদ্ধ হয় না। এ কারণেই ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূলের ইত্তেবার কোন বিকল্প নাই। আর রাসূলের ইত্তেবা সম্পর্কে এবং আল্লাহর রাসূল কোন কাজ কিভাবে করেছেন সে সম্পর্কে জানতে হলে হাদিস বা সূন্নাহ অধ্যয়ন ছাড়া আর কোন পথ নাই। কেবল হাদিস বা সূন্নাহের অধ্যয়নের মাধ্যমে রাসূলের ইত্তেবা সম্পর্কে জানা যাবে।

আল কুরআনে ইত্তেবার গুরুত্ব:

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করার নির্দেশ দেন। কারণ, আল্লাহর রাসূল হল আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি দূত। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেন। রাসূলের মাধ্যমেই আল্লাহর আদেশ নিষেধ বাস্তবায়িত হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। তাই আল্লাহ মানুষকে তার প্রেরিত রাসূলের অনুকরণ করার নির্দেশ দেন।  আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 ﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣ ﴾ [الانعام: ١٥٣] 

“আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এ গুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”।[1]

ইমাম কুরতবী রহ. বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যাতে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূলের ইত্তেবা করার আদেশ দিয়েছেন এবং তার পথের ইত্তেবা ছাড়া অন্য সব পথ পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর আয়াতে সীরাতে মুস্তাকীম-এর অর্থ হল, আল্লাহর পথ যে পথের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে আহ্বান করেছেন। আর তা হল রাসূলের ইত্তেবা ও তার সুন্নাতের অনুসরণ।[2]

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور : ٦٣]

“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরোধিতা করে, তারা যেন তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক্আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সুরা নূর - ৬৩]

ইমামুল লুগাহ আল্লামা রাগেব আল ইসফাহানী রহ. বলেন, মুখালাফা অর্থ হল, কথা, কাজ ও কর্মে কোন ভাইয়ের বিরোধিতা করা এবং সে যে পথ চলা আরম্ভ করে তার বিপরীত পথে চলতে শুরু করা।[3]

আল্লামা ইবনুল আরাবী রহ. যুবাইর ইবনে বুকার হতে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মালেক ইবনে আনাস রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্দুল্লাহ আমি কোথা থেকে ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেন, জুল হুলাইফা হতে- যেখান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধেছেন। তখন লোকটি বলল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদ থেকে এহরাম বাঁধতে চাই। তিনি বললেন, না, তুমি তা করো না। লোকটি বলল, আমি মসজিদের পাশে রাসূলের কবরের নিকট থেকে এহরাম বাঁধব। তিনি বললেন, না তুমি তা করো না, আমি ভয় করছি তুমি কোন ফিতনায় আক্রান্ত হবে। লোকটি বলল, কিসের ফিতনা। তখন তিনি বললেন, এর চেয়ে বড় ফিতনা আর কি হতে পারে যে, তুমি মনে করছ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক ফযিলত লাভ করবে, যা তিনি লাভ করতে পারেননি। আল্লাহ বলেন,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور : ٦٣]

 “অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”।[4]

ইমাম মালেক রহ. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যে ব্যক্তি এ উম্মতের দীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, যা ইতিপূর্বে দীনের মধ্যে ছিল না, তাহলে সে যেন এ কথা দাবী করল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের বিষয়ে খিয়ানত করেছেন। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائ‍دة: ٣]

“আজ তোমাদের জন্য দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”।[5] আয়াতে আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পূর্বেই দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা তার দীনকে পূর্ণতা দান করার পর দীনের মধ্যে কোন কিছু বাড়ানোর কোন অবকাশ নাই। যদি কেউ দ্বীনের মধ্যে কোন কিছু বাড়ান বা কমান তার অর্থ হল আল্লাহ দীনকে পূর্ণতা দান করেননি দীনকে অসম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছেন এবং অবশিষ্ট কাজের জন্য কোন মাখলুককে দায়িত্ব বা অধিকার দিয়েছেন।[6]

ইত্তেবায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গুরুত্ব:

কোন ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য বা ইবাদতটি ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য শর্ত হল, তার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইত্তেবা পাওয়া যেতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতটি যেভাবে করেছেন সেভাবে আদায় করতে হবে এবং তার মধ্যে কোন প্রকার বিকৃতি বা কমবেশ করা চলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি প্রসিদ্ধ হাদিসে এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেন। হাদিস দ্বয়ে তিনি ইবাদত যেভাবে করেছেন সেভাবে করার নির্দেশ দেন।

প্রথম হাদিস:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

صلوا كما رأيتموني أصلي

এটি পূর্ণ হাদিসের একটি অংশ মাত্র। পুরো হাদিসটি ইমাম বুখারি রহ. স্বীয় কিতাব সহীহ আল বুখারিতে আবু কালাবাহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মালেক বিন হুয়াইরাস রা. হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

 (أتينا رسول الله - صلى الله عليه وسلم - ونحن شببة متقاربون فأقمنا عنده عشرين يوماً وليلة وكان رسول الله - صلى الله عليه وسلم - رحيماً رفيقاً فلما ظن أنا قد اشتهينا أهلنا أو قد اشتقنا سألنا عمن تركنا بعدنا فأخبرناه. قال: ارجعوا إلى أهليكم فأقيموا فيهم وعلموهم ومروهم وذكر أشياء أحفظها أو لا أحفظها وصلوا كما رأيتموني أصلي فإذا حضرت الصلاة فليؤذن لكم أحدكم وليؤمكم أكبركم).

“আমরা একে অপরের কাছাকাছি ও সম পর্যায়ের কতক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে বিশ দিন অবস্থান করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তারপর যখন তিনি অনুভব করলেন আমরা আমাদের পরিবারের নিকট যেতে চাই তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের বাড়ীতে কাদের রেখে আসছি? আমরা তাদের বিষয়গুলো বললে, তিনি আমাদের বলেন, তোমরা তোমাদের বাড়িতে ফিরে যাও, তাদের মধ্যে তোমরা অবস্থান কর, তাদের তোমরা দীন শেখাও, ভালো কাজের আদেশ দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় আদেশ করেন তার সবগুলো আমার স্মরণ নাই। আর তোমরা সালাত আদায় কর, যেভাবে তুমি আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ। যখন সালাতের সময় হয়, তোমাদের মধ্য হতে একজন আযান দেবে, আর তোমাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি ইমামতি করবে”।[7]

বিশুদ্ধ হাদিসটি উপরে উল্লেখিত মূলনীতি-ইবাদতের ক্ষেত্রে আসল হল রাসূলের ইত্তেবা- কে আরও স্পষ্ট করেন। অর্থাৎ, সালাত আদায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুরোপুরি ইত্তেবা করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সালাত আদায় করেছেন, সেভাবে সালাত আদায় করতে হবে। তার মধ্যে কোন প্রকার কমবেশ করা যাবে না।

দ্বিতীয় হাদিস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-তিনি বলেন, (خذوا عني مناسككم) “তোমরা আমার থেকে হজের আহকামগুলো শিখে নাও”। মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাযা।  

হজ বিষয়ে উল্লেখিত হাদিসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও মৌলিক-যেমনি ভাবে সালাত বিষয়ে উপরের হাদিসটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক। উল্লেখিত দুটি হাদিসই প্রমাণ করে ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূন্নাত ও পদ্ধতিই হল মূল বিবেচ্য ও অনুকরণীয়। তিনি যে ইবাদত যেভাবে করেছেন ঠিক সে ইবাদত সেভাবেই করতে হবে। তাতে কোন প্রকার কমবেশ করার কোন সুযোগ নাই।

ছয়টি বিষয়ে ইত্তেবা জরুরি:

মোট কথা, যে কোন ইবাদতে রাসূলের ইত্তেবা জরুরী। মনগড়া কোন ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য নয়। আমলের ক্ষেত্রে ইত্তেবা সহীহ হওয়া ও আমলটি শরীয়ত অনুযায়ী হওয়ার জন্য ছয়টি বিষয়ে এক ও অভিন্ন হতে হবে।

এক- ইবাদতের কারণটি শরিয়ত অনুযায়ী ও অনুমোদিত হতে হবে। সুতরাং, যদি কোন মানুষ এমন একটি কারণ দেখিয়ে ইবাদত করে যে কারণটি শরিয়ত অনুমোদন করেনি তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত হবে। যেমন, কিছু মানুষ রজব মাসের সাতাশ তারিখ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করে থাকে। তাদের যুক্তি হল, এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এ রাতেই ফরয করা হয়েছে। সুতরাং, এ রাতে সালাত আদায় করা সাওয়াবের কাজ ও পূন্যময়। কিন্তু এখানে যে কারণটি উল্লেখ করা হয়েছে, তা শরিয়তের দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। কারণ, এ কারণটি দেখিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বা তার কোন সাহাবী এ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করেনি। তাই এ রাতে সালাত আদায় ও ইবাদত বন্দেগী করা বিদআত। সুতরাং, ইবাদতের কারণটি শরীয়তের মুয়াফেক হওয়া খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। যদি কারণটি শরিয়ত অনুমোদিত কিনা তা জানা যায়, তবে অনেক বিদআত থেকে বাঁচা যাবে। কারণ, আমরা এ ধরনের অনেক ইবাদতকে শরীয়ত মনে করি। কিন্তু বাস্তবে তা শরিয়ত নয় বরং বিদআত।

দুই: ইবাদতের ধরনটি শরিয়ত অনুমোদিত হতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি কোন একটি ইবাদত আল্লাহর জন্য করে থাকে কিন্তু তার ধরনটি শরিয়ত অনুমোদন করেনি। তাহলে সে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন, এক ব্যক্তি ঘোড়া কুরবানি করল, এ লোকের কুরবানি সহীহ হবে না। কারণ, লোকটি কুরবানির পশুর ধরনের মধ্যে শরিয়তের বিরোধিতা করছে। কারণ, শরিয়ত কুরবানি করার জন্য চতুষ্পদ জন্তু হতে কেবল গরু, ছাগল উটকেই নির্ধারিত করেছেন।

তিন- পরিমাণ:

পরিমাণ শরিয়ত অনুমোদিত হবে। যদি কোন মানুষ পরিমাণ বাড়ায় বা কমায় তাহলে তার ইবাদত শুদ্ধ হবে না। যেমন, যদি কোন মানুষ জোহরের সালাত চার রাকাতের জায়গায় পাঁচ রাকাত আদায় করে, তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের সালাত কখনো পাঁচ রাকাত আদায় করেননি।

চার- পদ্ধতি:

পদ্ধতি শরিয়ত অনুমোদিত হতে হবে। যেমন, যদি কোন ব্যক্তি ওজু করার সময় হাত দোয়ার পূর্বে পা দুয়ে ফেলে তাহলে সেও সূন্নাতের বিরোধিতা করল। তার ওজু ঠিক হবে না। কারণ, লোকটি ওজু করার পদ্ধতিতে ভুল করেছেন এবং শরিয়তের বিরোধিতা করেছে।

পাঁচ- সময়:

সময়টি শরিয়ত অনুযায়ী হতে হবে। যদি কোন ইবাদত শরিয়ত নির্ধারিত সময়ে না করে নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে করে তাহলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না এবং ইবাদত সঠিক হবে না। যেমন, কোন ব্যক্তি জিল হজ মাসের প্রথমে কুরবানি করে ফেলল বা ঈদের সালাতের পূর্বে কুরবানি করল, তাহলে তার কুরবানি সহীহ হবে না। বরং এটি গোস্ত খাওয়ার জন্য জবেহ করা হবে। অনুরূপ যদি কেউ রমযান মাসে কুরবানি করে তাহলে তার কুরবানি শুদ্ধ হবে না। সুতরাং, ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়টি শরিয়ত সম্মত হতে হবে।

ছয়-স্থান:

ইবাদতের স্থানটি শরিয়ত অনুমোদিত হবে। যদি স্থানটি শরিয়ত সম্মত না হয়, তবে ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হবে না। যেমন- শরিয়ত অনুযায়ী ইতিকাফ করার স্থান হল, মসজিদ। যদি কোন ব্যক্তি মসজিদের বাইরে ইতেকাফ করে তার ইতেকাফ করা শুদ্ধ হবে না। যদি কোন নারী বলে আমি স্বীয় ঘরে সালাতের স্থানে ইতেকাফ করব, তাহলে তার ইতেকাফ শুদ্ধ হবে না। কারণ, ইতেকাফের স্থান হল, মসজিদ। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে গিয়ে দেখে সেখানে অনেক ভিড় তখন সে সেখান থেকে ফিরে মহল্লার মসজিদে তাওয়াফ করা আরম্ভ করল তার তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। কারণ তাওয়াফ করার স্থান হল, মসজিদ। আল্লাহ তা’আলা তার স্বীয় বন্ধু ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে বলেন,

﴿ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ ﴾ [البقرة: ١٢٥]

“তোমরা ইতেকাফ কারী, তাওয়াফকারী ও রুকু- সেজদাকারীদের জন্য আল্লাহর ঘরকে পবিত্র কর”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]

নবী আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইত্তেবা তথা অনুসরণ ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসে প্রচুর উদ্ধৃতি বিদ্যমান। সবগুলো এ সংক্ষিপ্ত বইতে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। যেমন:  আল্লাহ তা’আলা বলেন:

 ﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

“রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”।[8]

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন:

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ ﴾ [النساء: ٨٠]

“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকারান্তরে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, আমি আপনাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি”।[9]

 عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছে”।[10]

অপর একটি হাদিস আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ "

“তিনটি জিনিষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সাধ গ্রহণ করবে। এক- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তার নিকট দুনিয়ার সব কিছু হতে প্রিয় হওয়া। দুই- কোন মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। তিন- ঈমান আনার পর কুফরিতে ফিরে যাওয়াতে এমন অপছন্দ করবে, যেমন আগুনে নিক্ষেপ করাকে অপছন্দ করে”।[11]

সুন্নাহ বা হাদিস যার মাধ্যমে রাসূলের ইত্তেবা করা হয় তার গুরত্ব:

সুন্নাহ শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তাই সুন্নাহ। কুরআনে রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ বলতে সুন্নাহকেই বুঝানো হয়েছে। হাদিসের অপর নাম সুন্নাহ। হাদিস অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, খবর, প্রাচীন ও পুরাতনের বিপরীত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদিস বলে।

১. সুন্নাহ হল এক প্রকার ওয়াহী:

ওয়াহী দুই প্রকার: এক- ওয়াহী মাতলু দুই- ওয়াহী গাইরে মাতলু। ওয়াহী মাতলু হল, কুরআন মাজীদ। আর ওয়াহী গায়রে মাতলু হল, সুন্নাহ বা হাদিস। সূন্নাহ বা হাদিস ও আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রেরিত ওহী। আল্লাহ তা’আলা বলেন-

﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [النجم: ٣،  ٤]

“আর সে মনগড়া কথাও বলে না । তাতো ওয়াহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়”।[12]

হাসান বিন আত্বিয়া বলেন, জিবরীল (আঃ) যেরূপ কুরআন নিয়ে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট অবতীর্ণ হতেন তেমনি হাদিস নিয়েও অবতীর্ণ হতেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কুরআনের ন্যায় হাদিসও শিক্ষা দিতেন।

২. সুন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা:

সূন্নাহ হল কুরআনের ব্যাখ্যা। সূন্নাহ বাদ দিয়ে কুরআনের উপর আমল করা বা কুরান বুঝা সম্ভব নয়। যেমন, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ইত্যাদি আদেশ কুরআনে দেয়া হয়েছে কিন্তু সালাত কীভাবে আদায় করতে হবে এবং যাকাত কি পরিমাণ আদায় করতে হবে, কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে এবং কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে না। তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। এ সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হাদিসেই করা হয়েছে।

﴿ بِٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلزُّبُرِۗ وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤ ﴾ [النحل: ٤٤]

“(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”।[13]

﴿ وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِي ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٦٤ ﴾ [النحل: ٦٤]

“আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে  তারা বিতর্ক করছে, তা  তাদের জন্য তুমি  স্পষ্ট করে দেবে এবং (এটি), হেদায়েত ও রহমত সেই কওমের জন্য যারা ঈমান আনে”।[14]

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

“রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”।[15]

﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهِۦ لِيُبَيِّنَ لَهُمۡۖ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٤ ﴾ [ابراهيم: ٤]

“আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের নিকট বর্ণনা দেয়, সুতরাং, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”।[16]

আল্লাহ প্রত্যেক রাসূলের উপর তার নিজ ভাষায় কিতাব নাযিল করেছেন যাতে রাসূলগণ ব্যাখ্যা করে জনগণকে ভালভাবে বুঝাতে পারেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন যা হাদিসের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা সংরক্ষণ করেছেন। যদিও হাদিসের মধ্যে রাসূলের নামে অনেক কথাই বিদ্যমান। কিন্তু সম্মানিত মুহাদ্দিস ইমামগণ কোনটি রাসূলের কথা আর কোনটি রাসূলের কথা নয়, তা পৃথক করেছেন। জঈফ ও জাল বা মিথ্যা হাদিস অবশ্যই বর্জন করতে হবে যা রাসূলের নামে মিথ্যুকরা চালিয়ে দিয়েছে। আমরা কেবল সহীহ ও হাসান হাদিসই গ্রহণ করব। যদি কখনো কোন জঈফ হাদিস উল্লেখ করতে হয়, তবে স্পষ্ট করে দিতে হবে।

وَعَن مَالك بن أنس مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ . رَوَاهُ فِي الْمُوَطَّأ

মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদিস”।[17]

৩. সুন্নাহ বা হাদিস হল হিকমাহ (প্রজ্ঞা)

আল্লাহ তা’আলা তা’আলা কুরআনে সূন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ ١١٣ ﴾ [النساء: ١١٣]

“এবং আল্লাহ তোমার প্রতি গ্রন্থ ও হিকমাহ (হাদিস) অবতীর্ণ করেছেন এবং তুমি যা জানতে না, তিনি তাই তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন”।[18]

আয়াতে আল্লাহ তা’আলা যেমনিভাবে কুরআন নাযিল করার কথা বলেন, অনুরূপভাবে হিকমাহ অর্থাৎ সূন্নাহ নাযিল করার কথাও বলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সূন্নাহও আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিলকৃত অহী। সুতরাং কুরআন যেমন আল্লাহর ওহী অনুরূপভাবে সূন্নাহও আল্লাহর ওহী। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ ١٦٤ ﴾ [ال عمران: ١٦٤]

“নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শোনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ (হাদিস) শিক্ষা দিচ্ছে”।[19]

আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿ وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا ٣٤ ﴾ [الاحزاب: ٣٤]

“আল্লাহর আয়াত ও হিকমাহ (হাদিস) এর কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মèদর্শী ও সর্ব বিষয়ে অবহিত”।[20]

অনেক বিদ্বানরা বলেছেন, হিকমাহ হল সুন্নাহ বা হাদিস। কেননা কুরআন ছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের গৃহে যা পাঠ করা হত, তা ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাহ। এ জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

"أَلَا إِنِّيْ أُوْتِيْتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ"

সাবধান! আমাকে কিতাব (কুরআন) ও তার সঙ্গে অনুরূপ কিতাব (হাদিস) দেওয়া হয়েছে।[21]

৪.  সুন্নাহর বাইরে যে আমল করা হয়, তা পরিত্যাজ্য।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد»

“আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”।[22]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ جَاءَ ثَلَاثَة رَهْط إِلَى بيُوت أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أخبروا كَأَنَّهُمْ تقالوها فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أحدهم أما أَنا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْل أبدا وَقَالَ آخر أَنا أَصوم الدَّهْر وَلَا أفطر وَقَالَ آخر أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ: «أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مني»

আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন ব্যক্তি  রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের নিকট তার ইবাদতের অবস্থা জানার জন্য আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইবাদতের খবর শুনে তারা যেন তার ইবাদতকে কম মনে করলেন। তারা পরস্পর আলাপ করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর তুলনায় আমরা কী? আল্লাহ তা’আলা তার আগের-পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তাদের একজন বললেন, আমি সারা রাত সালাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করবো না। তৃতীয় জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের এই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে পড়লেন এবং বললেন, “তোমরা কি এ ধরনের কথাবার্তা বলেছিলে? খবরদার! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশী তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন ছেড়ে দিই। রাতে সালাত আদায় করি আবার ঘুমও যাই। নারীদেরকে  বিয়েও করি। এটাই আমার পথ। তাই যে ব্যক্তি আমার পথ ছেড়ে দিয়েছে সে আমার ( উম্মতের মধ্যে) গণ্য হবে না”।[23]

সুতরাং ভাল কাজ বিশুদ্ধ নিয়তে করলেও কোনই লাভ হবে না যতক্ষণ না রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাত অনুযায়ী হয়। আর জেনে রাখা ভাল যে, সহীহ ও হাসান হাদিস ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত প্রমাণিত হয় না।

৫.  সুন্নাহ ছাড়া আমল হল বিদআত, আর বিদআত হল ভ্রষ্টতা, আর ভ্রষ্টতা হল জাহান্নামের পথ।

إِنَّ أَحْسَنَ الحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ، وَأَحْسَنَ الهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَشَرَّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, “সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ”।[24]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলূল্লাহ  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: অতঃপর অবশ্য অবশ্যই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার কিতাব। আর সর্বোচ্চ পথ হচ্ছে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দ্বীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)”।[25]

وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ

জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দ্বীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই বিদআত। এরূপ সব বিদআত-ই-গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)। এরূপ সব গুমরাহী (পথভ্রষ্ট) হবে জাহান্নামের আগুনে অবস্থিতির কারণ।[26]

৬.  সুন্নাহ হল নাজাতের অসীলা, মুক্তির পথ।

সুন্নাহর অনুসরণ করার মধ্যেই নাজাত ও মুক্তি। সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা ছাড়া নাজাত বা মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ، حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ، حَدَّثَنَا هِلاَلُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى» ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى»

আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আমার সকল উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই ( জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল”।[27]

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ ﴾ [النساء : ١٣]

“এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার  রাসূলের হুকুম অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য”।[28]

আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করাকে মহা সাফল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩ ﴾ [النساء : ٦٩]

যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দিক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন, তারা কতই না উত্তম সঙ্গী![29]

﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢ ﴾ [ال عمران: ١٣٢]

“আল্লাহর ও রাসূলের হুকুম মান্য কর, যাতে তোমরা কৃপা প্রাপ্ত হতে পার”।[30]

﴿ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“যে আল্লাহ ও তার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তার (রাসূলের) অনুসরণ কর, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার”।[31]

﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢ ﴾ [النور : ٥٢]

“যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তার অবাধ্যতা পরিহার করে চলে তারাই কৃত কার্য”।[32]

﴿ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٥٤ ﴾ [النور : ٥٤]

বল, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।[33]

﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [الاحزاب : ٧١]

 যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে সাফল্য লাভ করে-মহা সাফল্য।[34]

﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ ﴾ [النساء : ١٣]

আর যে কেউই আল্লাহ ও তার রাসূলের  আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর যে কেউ পিঠ ফিরিয়ে নিবে, তিনি তাকে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন।[35]

৭. রাসূলের ফায়সালার সামনে মু’মিনের আর কোন এখতিয়ার বা স্বাধীনতা থাকে না। বরং শুনলাম ও মানলাম বলা।

﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء : ٦٥]

“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে”।[36]

﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١ ﴾ [الانفال: ١]

“তোমরা যদি মু’মিন হয়ে থাক তবে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর”।[37]

﴿ إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١ ﴾ [النور : ٥١]

“মু’মিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মু’মিনদের জওয়াব তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম”।[38]

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ ٢٠ ﴾ [الانفال: ٢٠]

“ওহে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং আদেশ শোনার পর তা অমান্য কর না”।[39]

﴿ وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب : ٣٦]

“আল্লাহ ও তার রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী উক্ত নির্দেশের ভিন্নতা করার কোন অধিকার রাখে না। যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে গুমরাহ হয় সুস্পষ্ট গুমরাহীতে”।[40]

৮. রাসূলের অনুসরণই আল্লাহর আনুগত্য:

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ ﴾ [النساء : ٨٠]

“যে রাসূলের হুকুম মানল, সে তো আল্লাহরই হুকুম মানল, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি তোমাকে তাদের প্রতি পাহারাদার করে পাঠাইনি”।[41]

রাসূল সা. বলেন,

مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ

“যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করল, সে আল্লাহরই অনুসরণ করল, আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে তো আল্লাহর নাফরমানী করল”।[42]

৯. মু’মিন জীবনের আদর্শ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম):

একজন মুমিনের জন্য রাসূল সা. এর জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আল্লাহর রাসূলই হল একজন মুমীনের অনুকরনীয় আদর্শ।

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الاحزاب : ٢١]

“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে”।[43]

﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [القلم: ٤]

“তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত”।[44]

১০. আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার মাধ্যম রাসূলের অনুসরণ:

আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে, রাসূলের ইত্তেবার কোন বিকল্প নাই। রাসূলের ইত্তেবার মাধ্যমেই আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]

“বলে দাও,‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমার অনুসরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাসমূহ ক্ষমা করবেন, বস্তুত, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[45]

১১. কুরআন ও সুন্নাহই সকল সমস্যার সমাধান:

একজন মুমীনের জন্য কুরআন ও সূন্নাহই হল সব সমস্যার সমাধানের মূল।

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء : ٥٩]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গেরও ; তবে যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাতে ঈমান আন ; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা”।[46]

﴿ وَلَا يَأۡتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَأَحۡسَنَ تَفۡسِيرًا ٣٣ ﴾ [الفرقان: ٣٣]

“তোমার কাছে তারা এমন কোন সমস্যাই নিয়ে আসে না যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি”।[47]

﴿ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَٰزَعُواْ فَتَفۡشَلُواْ وَتَذۡهَبَ رِيحُكُمۡۖ وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ٤٦ ﴾ [الانفال: ٤٦]

“আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, পরস্পরে ঝগড়া বিবাদ কর না, তা করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে, তোমাদের শক্তি-ক্ষমতা বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন”।[48]

১২. সহীহ হাদিস যখন আহ্বান করবে, তখন সকলকে সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া জরুরী। সহীহ হাদিসের বিপরীতে কোন দূর্বল হাদিস বা যুক্তির পিছলে আমল করা যাবে না।

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمۡ لِمَا يُحۡيِيكُمۡۖ ٢٤ ﴾ [الانفال: ٢٤]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহ্বান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে”।[49]

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ، يَأْتِيهِ الْأَمْرُ مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ، أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ، فَيَقُولُ: لَا أَدْرِي، مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ "

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আমি যেন তোমাদের মাঝে কাউকে এমন না পাই, সে তার খাটের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর আমি যা আদেশ দিয়েছি অথবা যা থেকে নিষেধ করেছি, তা তার কাছে পৌছলে সে তখন বলবে: এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করি”।[50]

﴿ لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور : ٦٣]

“রাসূলের ডাককে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের ডাকের মত গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, তাদের উপর পরীক্ষা নেমে আসবে কিংবা তাদের উপর নেমে আসবে ভয়াবহ শাস্তি”।[51]

সালাত ছেড়ে রাসূলের ডাকে সাড়া দান।

১৩. আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসা ঈমানী কর্তব্য:

দুনিয়ার সব কিছু হইতে আল্লাহর রাসূলকে সর্বোচ্চ ভালো বাসতে হবে। সকল কিছুর উপর রাসূলের ভালোবাসাকে প্রাধ্যান্য দিতে হবে।

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে কেউ মু’মিন হতে পারবে না , যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তানাদি এবং সকল মানুষ হতে বেশী প্রিয় না হবো”।[52]

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَمَنْ أَحَبَّ عَبْدًا لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَمَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ، بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ، مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ "

আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তির মধ্যে তিনটি জিনিস পাওয়া যাবে, সে ঈমানের সঠিক স্বাদ আস্বাদন করেছে। প্রথমত: তার মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা দুনিয়ার সকল জিনিস অপেক্ষা বেশী হবে। দ্বিতীয়ত: যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালবাসে। তৃতীয়ত: যে ব্যক্তি কুফরির অন্ধকার হতে বের হয়ে ঈমান ও ইসলামের আলো গ্রহণ করার পর আবার কুফরির অন্ধকারে ফিরে যাওয়াকে এত খারাপ মনে করে যেমন মনে করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে।

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ١ ﴾ [الحجرات: ١]

“ওহে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের  আগে বেড়ে যেয়ো না , আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”।[53]

১৪. মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাহ শাশ্বত ও চিরন্তন। তাঁর শরীয়ত পূর্বের সমস্ত শরীয়তকে রহিত বা বাতিল করেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা রহিত থাকবে।

فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " والذي نفس محمد بيده لو بدا لكم موسى فاتبعتموه وتركتموني لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وأدرك نبوتي لاتبعني )  رواه الدارمي

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- “আল্লাহর কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন। যদি মুসা আ: তোমাদের মাঝে প্রকাশ পেতেন তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে,ফলে তোমরা সহজ -সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। অথচ মুসা আ: যদি এখন জীবিত থাকতেন ও আমার নবুওতের কাল পেতেন তাহলে তিনি নিশ্চিত আমার আনুগত্য করতেন”।[54]

﴿ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ لِمَ تَلۡبِسُونَ ٱلۡحَقَّ بِٱلۡبَٰطِلِ وَتَكۡتُمُونَ ٱلۡحَقَّ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٧١ ﴾ [ال عمران: ٧١]

“হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান”।[55]

মুসলিম হওয়ার পর খ্রিষ্টান হল কিন্তু কবর তার মৃতদেহ গ্রহণ করল না। সুতরাং পূর্বের সমস্ত ধর্ম বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য বা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ رَجُلٌ نَصْرَانِيًّا فَأَسْلَمَ، وَقَرَأَ البَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ، فَكَانَ يَكْتُبُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَعَادَ نَصْرَانِيًّا، فَكَانَ يَقُولُ: مَا يَدْرِي مُحَمَّدٌ إِلَّا مَا كَتَبْتُ لَهُ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ فَدَفَنُوهُ، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا: هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ فَأَعْمَقُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَقَالُوا: هَذَا فِعْلُ مُحَمَّدٍ وَأَصْحَابِهِ، نَبَشُوا عَنْ صَاحِبِنَا لَمَّا هَرَبَ مِنْهُمْ  فَأَلْقَوْهُ، فَحَفَرُوا لَهُ وَأَعْمَقُوا لَهُ فِي الأَرْضِ مَا اسْتَطَاعُوا، فَأَصْبَحَ وَقَدْ لَفَظَتْهُ الأَرْضُ، فَعَلِمُوا: أَنَّهُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ، فَأَلْقَوْهُ "

আনাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “এক খ্রিষ্টান মুসলিম হল এবং সূরা বাকারা ও আল ইমরান শিখে নিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য অহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিষ্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশী কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিষ্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিষ্টানরা বলতে লাগল-এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এবারও তারা বলতে লাগল, এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরও গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল, কবরের মাটি আবার তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল”।

আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না।

﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣ ﴾ [المائ‍دة: ٣]

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিলাম”।[56]

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]

আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।[57]

১৫.  মৃত সুন্নাত জীবিত করার মর্যাদা:

যখন কোন সূন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়, তার উপর মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করা এবং তার উপর আমল করার ফযীলত অনেক। রাসূল সা. বলেন,

مَنْ أَحْيَا سُنَّةً مِنْ سُنَّتِي، فَعَمِلَ بِهَا النَّاسُ، كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، لَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ ابْتَدَعَ بِدْعَةً، فَعُمِلَ بِهَا، كَانَ عَلَيْهِ أَوْزَارُ مَنْ عَمِلَ بِهَا، لَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِ مَنْ عَمِلَ بِهَا شَيْئًا

“যে ব্যক্তি আমার একটি (মৃত) সুন্নাত জীবিত করে এবং লোকেরা তদনুযায়ী আমল করে, সেও আমল কারীর অনুরূপ পুরস্কার পাবে। এতে আমলকারীর পুরস্কার কিছুমাত্র কম হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোন বিদআতের উদ্ভাবন করে এবং সে অনুযায়ী আমল করা হয়, তার উপর আমলকারীর পাপের বোঝার অনুরূপ বোঝা বর্তাবে। এতে আমলকারীর পাপের পরিমাণ কিছুই কমানো হবে না”।[58]

১৬. যারা আল্লাহ ও রাসূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা মু‘মিন নন। বরং তারা মুনাফিক, যালিম, কাফির।

আল্লাহ তা’আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,

﴿ وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعۡنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٞ مِّنۡهُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَۚ وَمَآ أُوْلَٰٓئِكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٤٧ ﴾ [النور : ٤٧]

“তারা বলে- আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম আর রাসূলের প্রতিও আর আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যকার একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা মু’মিন নয়”।[59]

﴿ وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ ٤٨ ﴾ [النور : ٤٨]

“তাদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ ও তার রাসূলের পানে আহ্বান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়”।[60] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

﴿ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيۡتَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودٗا ٦١ ﴾ [النساء : ٦١]

“যখন তাদেরকে বলা হয়-তোমরা আল্লাহর অবতীর্ণ হুকুমের এবং রাসূলের দিকে এসো,তখন তুমি ঐ মুনাফিকদের দেখবে, তারা তোমার কাছ থেকে ঘৃণা ভরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে”।[61]

﴿كَيۡفَ يَهۡدِي ٱللَّهُ قَوۡمٗا كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ وَشَهِدُوٓاْ أَنَّ ٱلرَّسُولَ حَقّٞ وَجَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٦ ﴾ [ال عمران: ٨٦]

“আল্লাহ কীরূপে সেই সম্প্রদায়কে সুপথ দেখাবেন যারা ঈমান আনার পর, এ রাসূলকে সত্য বলে স্বীকার করার পর এবং তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল আসার পর কুফরি করে? বস্তুত: আল্লাহ যালিম কওমকে পথ দেখান না”।[62]

﴿ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٢ ﴾ [ال عمران: ٣٢]

“বল, ‘তোমরা আল্লাহর ও রাসূলের আজ্ঞাবহ হও’। অতঃপর যদি তারা না মানে, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না”।[63]

১৭. যারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অমান্য করবে তারা জাহান্নামী।

তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤ ﴾ [النساء : ١٤]

“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার  রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করাবেন, সে তাতে চিরকাল থাকবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে”।[64] আল্লাহ তা’আলা তাদের বিষয়ে বলেন,

﴿ وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ ﴾ [النساء : ١١٥]

“যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব, কত মন্দই না সে আবাস”![65] আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿إِلَّا بَلَٰغٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِسَٰلَٰتِهِۦۚ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ٢٣ ﴾ [الجن: ٢٣]

“আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তার পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে”।[66]

﴿ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِٱلۡكِتَٰبِ وَبِمَآ أَرۡسَلۡنَا بِهِۦ رُسُلَنَاۖ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُونَ ٧٠ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ فِي ٱلۡحَمِيمِ ثُمَّ فِي ٱلنَّارِ يُسۡجَرُونَ ٧٢ ﴾ [غافر: ٧٠،  ٧٢]

“যারা কিতাবকে আর আমি আমার রাসূলদেরকে যা দিয়ে পাঠিয়েছি তাকে অস্বীকার করে, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।  যখন তাদের গলায় থাকবে বেড়ি আর শিকল; তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে - ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে দগ্ধ করা হবে”।[67]

১৮. যারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য পরিহার করবে তাদের সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া কোন আমল কাজে আসবে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣﴾ [محمد : ٣٣]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের আনুগত্য কর আর তোমাদের আমলগুলোকে নষ্ট করে দিও না”।[68]

১৯. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের পথ অবলম্বন করুন। রাসূলের পথ বাদ দিয়ে শয়তানের পথে চলার পর অনুশোচনা, কোন কাজে আসবে না।

সুতরাং সময় থাকতে তওবা করে কুরআন ও সহীহ হাদিসের দিকে আসুন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ ﴾ [الفرقان: ٢٧]

“যালিম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম”।[69]

﴿ يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ ﴾ [الفرقان: ٢٨]

“হায় আমার দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম”।[70]

﴿ لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ ﴾ [الفرقان: ٢٩]

“আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। আর শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়”।[71]

২০. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ যেরূপ হওয়া উচিত:

فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ: «إِنَّ اللَّهَ بَعَثَ إِلَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا نَعْلَمُ شَيْئًا، فَإِنَّمَا نَفْعَلُ كَمَا رَأَيْنَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُ

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন: “আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের নিকট প্রেরণ করেছেন, আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে রূপ করতে দেখি, আমরাও সেরূপ করি”।[72]

كَانَ ابْنُ عُمَرَ :إِذَا سَمِعَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثًا لَمْ يَعْدُهُ، وَلَمْ يُقَصِّرْ دُونَهُ»

ইবনে উমার রা. যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস শুনতেন, তাতে তিনি কোন কিছু বাড়াতেন না এবং তা থেকে কিছু কমাতেন না।[73]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: اتَّخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ، فَاتَّخَذَ النَّاسُ خَوَاتِيمَ مِنْ ذَهَبٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي اتَّخَذْتُ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ» فَنَبَذَهُ، وَقَالَ: «إِنِّي لَنْ أَلْبَسَهُ أَبَدًا» ، فَنَبَذَ النَّاسُ خَوَاتِيمَهُمْ

ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সোনার আংটি পরতেন। তখন লোকেরাও সোনার আংটি পড়তে লাগল। এরপর (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি সোনার আংটি পরছিলাম-তারপর তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন: আমি আর কোন দিনই তা পরব না। ফলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলো ছুঁড়ে ফেলল”।[74]

عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّهُ جَاءَ إِلَى الحَجَرِ الأَسْوَدِ فَقَبَّلَهُ، فَقَالَ: «إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ»

উমার রা. হতে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, “আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না”।[75]

২১. হাদিস অমান্য কারীর সঙ্গে সম্পর্ক কিরূপ হওয়া চাই:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، أَنَّهُ كَانَ جَالِسًا إِلَى جَنْبِهِ ابْنُ أَخٍ لَهُ، فَخَذَفَ، فَنَهَاهُ، وَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهَا وَقَالَ: «إِنَّهَا لَا تَصِيدُ صَيْدًا، وَلَا تَنْكِي عَدُوًّا، وَإِنَّهَا تَكْسِرُ السِّنَّ، وَتَفْقَأُ الْعَيْنَ» قَالَ: فَعَادَ ابْنُ أَخِيهِ يخذفَ فَقَالَ: أُحَدِّثُكَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهَا، ثُمَّ عُدْتَ تَخْذِفُ، لَا أُكَلِّمُكَ أَبَدًا

আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রা. থেকে বর্ণিত। একদা তার কাছে তার এক ভাতিজা বসা ছিল। সে তখন কংকর নিক্ষেপ করছিল। তিনি তাকে তা থেকে নিষেধ করলেন এবং বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে নিষেধ করছেন। তিনি আরও বললেন: এতে না শিকার করা হয়, আর না শত্রু পরাভূত হয়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় অথবা চক্ষু নষ্ট করে দেয়। রাবী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় পাথর নিক্ষেপ করলে তিনি [ইবনে মুগাফ্ফাল রা.] বলেন: আমি তোমাকে হাদিস শুনাচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। অথচ এরপরও তুমি কংকর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সাথে আর কখনও কথা বলব না।[76]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ أَنْ يُصَلِّينَ فِي الْمَسْجِدِ» فَقَالَ ابْنٌ لَهُ: إِنَّا لَنَمْنَعُهُنَّ، فَقَالَ: فَغَضِبَ غَضَبًا شَدِيدًا، وَقَالَ: أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وتقولُ: إِنَّا لَنَمْنَعُهُنَّ؟

ইবনে উমার থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (মহিলাদের) মসজিদে সালাত আদায় করতে মানা করো না। তখন ইবনে উমারের এক পুত্র বললেন: আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব। রাবী বলেন: এতে তিনি (ইবনে উমার) ভয়ানক রাগান্বিত হয়ে বললেন: আমি তোমার নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস বর্ণনা করছি, অথচ তুমি বলছ যে, আমরা অবশ্যই তাদের নিষেধ করব [77]?

২২. হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। কারণ মিথ্যা হাদিস বর্ণনাকারী জাহান্নামী। তাই সহীহ ও হাসান হাদিস ছাড়া জাল বা জঈফ হাদিস আমল করার জন্য বর্ণনা করা যাবে না। তবে বর্জন করার জন্য জঈফ ও জাল হাদিস জানা দরকার। জঈফ হাদিস রাসূলের সূন্নাহর ব্যাপারে কিছু অনুমান-ধারণার সৃষ্টি করে মাত্র। “হে মু’মিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক ; কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ”।   আর জাল বা মিথ্যা হাদিস যা স্পষ্ট রাসূলের কথা নয়। সুতরাং হাদিস যাচাই করতে হবে। তাক্বলিদ করা চলবে না (বিনা দলিল-প্রমাণে কারও কথা মেনে  নেওয়া)।

كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ

“কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়”।[78]

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن جَآءَكُمۡ فَاسِقُۢ بِنَبَإٖ فَتَبَيَّنُوٓاْ أَن تُصِيبُواْ قَوۡمَۢا بِجَهَٰلَةٖ فَتُصۡبِحُواْ عَلَىٰ مَا فَعَلۡتُمۡ نَٰدِمِينَ ٦ ﴾ [الحجرات: ٦]

“মুমনিগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করবে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও”।[79]

سَمِعْتُ عَلِيًّا، يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَكْذِبُوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ»

আলী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে জাহান্নামে যাবে।[80]

عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ لِلزُّبَيْرِ: إِنِّي لاَ أَسْمَعُكَ تُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا يُحَدِّثُ فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ؟ قَالَ: أَمَا إِنِّي لَمْ أُفَارِقْهُ، وَلَكِنْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতা যুবায়রকে বললাম: আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মতো আল্লাহর রাসূলের হাদিস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেন: জেনে রেখ আমি তার (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাকে বলতে শুনেছি, যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।[81]

قَالَ أَنَسٌ: إِنَّهُ لَيَمْنَعُنِي أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِبًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদিস বর্ণনা করতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়[82]।’

عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ يَقُلْ عَلَيَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

সালামাহ ইবনে আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়’।[83]’

২৩. মত বিরোধপূর্ণ পরিবেশে সুন্নাত ও হিদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। আর বিদআত পরিত্যাগ করতে হবে।

عَلَيْكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا، وَسَتَرَوْنَ مِنْ بَعْدِي اخْتِلَافًا شَدِيدًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي، وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَالْأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর শুনবে ও মানবে, যদিও তোমাদের নেতা হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা কঠিন মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর আমার সুন্নাত ও হিদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শের উপর অবিচল থাকা অপরিহার্য। তোমরা তা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। সাবধান ! তোমরা বিদআত পরিহার করবে। কেননা প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি-পথভ্রষ্ট।[84]

২৪. যুগে যুগে ইত্তেবায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সুন্নাতের অনুসরণে যারা অগ্রবর্তী। যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বা আল জামায়াতের অনুসারী। যে জামায়াত আঁকড়ে ধরার জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং যারা কুরআন হাদিসের অনুসরণকে বাদ দিয়ে যুক্তির পিছনে ছুটে বেড়ায় তাদের পথ পরিহার করতে হবে। আমাদেরকে আহলুর রায় থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং কুরআন ও সহীহ হাদিসের অনুসারী হতে হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: تَفَرَّقَتِ اليَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ أَوْ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَالنَّصَارَى مِثْلَ ذَلِكَ، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً.

আবু হুরাইর রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইয়াহুদী জাতি ৭১ বা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। নাসারাও তাই। আর আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে।[85]

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَرَقَتِ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، فَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَافْتَرَقَتِ النَّصَارَى عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، فَإِحْدَى وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَتَفْتَرِقَنَّ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ» ، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ؟ قَالَ: «الْجَمَاعَةُ»

আওফ ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-ইয়াহুদী জাতি ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। একদল জান্নাতী আর ৭০ দল জাহান্নামী। খ্রিস্টানরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। ৭১ দল জাহান্নামী আর একদল জান্নাতী। সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, অবশ্যই আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল হবে জান্নাতী। আর ৭২টি দল হবে জাহান্নামী। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারা জান্নাতী ? তিনি বললেন: আল জামায়াত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের জামায়াত)।[86]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ افْتَرَقَتْ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَإِنَّ أُمَّتِي سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، كُلُّهَا فِي النَّارِ، إِلَّا وَاحِدَةً وَهِيَ: الْجَمَاعَةُ "

আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-বনী ইসরাঈল ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭২ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। আর তা হচ্ছে আল জামায়াত।[87]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بني إسرائيل حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ، حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ، وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বনূ ইসরাঈলের যে অবস্থা এসেছিল অবশ্যই আমার উম্মাতের মধ্যে অনুরূপ অবস্থা আসবে। এমনকি তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে আমার উম্মাতেরও কেউ তাতে লিপ্ত হবে। বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবাই হবে জাহান্নামী। বলা হল একটি দল (যারা জান্নাতী) কারা ? তিনি বললেন: আমি এবং আমার সাহাবীরা আজকের দিনে যার উপর (প্রতিষ্ঠিত)”।[88]

যুগে ইত্তেবায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সুন্নাতের অনুসরণে যারা অগ্রবর্তী তাদের তালিকা নিম্নে দেয়া হল।

সাহাবী-

১.  আবুবকর সিদ্দিক ১৩ হি

২.  ওমর ইবনুল খাত্তাব ২৩ হি/ বর্ণিত হাদিস ৫৩৯

৩.  ওসমান বিন আফ্ফান ৩৫ হি

৪.  আলী ইবনু আবী তালিব ৪০ হি/ বর্ণিত হাদিস ৫৮৬

৫.  আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ৩২ হি/ বর্ণিত হাদিস ৮৪৮

৬.  আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ৬৮ হি / বর্ণিত হাদিস ২৬৬০-তাফসীরে ইবনে আব্বাস

৭.  আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ৭৩ হি / বর্ণিত হাদিস ১৬৩০

৮.  আয়েশা বিনতে আবু বকর ৫৮ / বর্ণিত হাদিস ২২১০

৯.  যায়দ ইবনে সাবিত ৪৫হি

১০. আবূ মুসা আশ’আরী ৪৪ হি

১১. মুয়ায বিন জাবাল ১৭ হি/ বর্ণিত হাদিস ১৫৭

১২. উবাই ইবনু কা’ব ৩২ হি/ বর্ণিত হাদিস ৬৪

১৩. আবু হুরাইরা ৫৮ হি / বর্ণিত হাদিস ৫৩৭৪

১৪. আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের ১-৭৩ হি

১৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ ৭৪ হি / বর্ণিত হাদিস ১৫৪০

১৬. আনাস ইবনু মালেক ৯১হি/ বর্ণিত হাদিস ২২৮৬

১৭. আবু সাঈদ খুদরী ৭৪ বর্ণিত হাদিস ১১৭০

১৮. আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস হি ৬৫/বর্ণিত হাদিস ৭০০

তাবেঈ-

১৯. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব ১৫হি -৯৪ হি/৭১৩ সন

২০. ওরওয়াহ বিন যুবায়ের ইবনুল আওয়াম ২২-৯৪ হি

২১. সুলায়মান বিন ইয়াসার ৯৪ হি

২২. সাঈদ ইবন যুবায়ের ৯৫ হি

২৩. কাসিম বিন মুহাম্মদ বিন আবুবকর সিদ্দিক ১০১ হি

২৪. ইকরামা ১০৫ হি

২৫. তাউস ইবন কাইসান ১০৬ হি

২৬. সালিম বিন আবদুল¬াহ বিন ওমর ১০৬ হি

২৭. আতা বিন আবী রিবাহ ১১৪ হি

২৮.        মুহাম্মদ বিন মুসলিম ওরফে ইবনু শিহাব যুহরী ৫৮-১২৪ হি

২৯. মুজাহিদ বিন জাবার ১১৪ হি

৩০. হাসান বিন ইয়াসার ওরফে হাসান বসরী ২১-১১০ হি

৩১. মুহাম্মদ ইবনু সীরীন ৩৩-১১০ হি /৭২৯ সন

তাবে-তাবেঈ-

৩২. নুমান বিন সাবিত ওরফে ইমাম আবু হানিফা ৮০-১৫০ হি

৩৩. সুফিয়ান বিন সাঈদ ওরফে ইমাম সুফিয়ান ছাওরি ৯৭-১৬১ হি

৩৪. মালিক ইবনু আনাস ৯৩-১৭৯ হি: আল-মুয়াত্তা

৩৫. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক ১৮১ হি: আয-যুহদ

৩৬. নাফে বিন ওমর আল জামহী ১৭৯ হি

৩৭. আব্দুর রহমান বিন আমর ওরফে ইমাম আওযাঈ ৮৮-১৫৭ হি

মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমামগণ-

৩৮.        শাফেয়ী, মুহাম্মদ বিন ইদরীস ১৫০-২০৪ হি: আল-উম্ম, আর-রিসালা, আল মুসনাদ

৩৯. আব্দুর রাজ্জাক সানআনী ২১১ হি: আল মুসান্নাফ

৪০. ইবনু আবী শাইবা, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ ২৩৫ হি: আল মুসান্নাফ

৪১. ইসহাক ইবনে ইব্রাহিম ওরফে ইমাম ইসহাক্ব বিন রাহওয়াই ১৬৬-২৩৮ হি: আস-সুনান

৪২. আহমদ ইবনু হাম্বাল ১৬৪-২৪১ হি: আল-মুসনাদ/ শরাহু ফাতহুর রব্বানী

৪৩. আবদ ইবনু হুমাইদ ২৪৯ হি: আল-মুসনাদ

৪৪. দারিমী, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমান ১৮১-২৫৫ হি: আস-সুনান

৪৫. বুখারী, মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল ১৯৪-২৫৬ হি: আস-সহীহ, শারহু ফাতহুল বারী

৪৬. মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ ২০৪-২৬১ হি: আস-সহীহ, শারহু আলমিনহাজ্জ

৪৭. আবু দাউদ, সুলাইমান ইবনু আশ’আস ২০২-২৭৫ হি: আস-সুনান

৪৮. ইবনু মাজাহ, মুহাম্মদ ইবনু ইয়াজিদ ২০৯-২৭৩ হি: আস-সুনান

৪৯. তিরমিযী, মুহাম্মদ ইবনু ঈসা ২৭৯ হি: জামি তিরমিযী/আস-সুনান, কিতাবুশ শামাইল

৫০. ইবনু আবীদ দুনিয়া ২৮১ হি: কিতাবুত সামত ও আদাবুল লিসান, মাওসূআতু ইবনু আবীদ দুনিয়া

৫১. বায্যার, আবুবকর আহমদ ইবনু আমর ২৯২ হি: আল-মুসনাদ

৫২. নাসাঈ, আহমদ ইবনু শু’আইব ৩০৩ হি: আস-সুনান, আস-সুনানুল কুবরা

৫৩. আবু ইয়ালা আল-মাউসিলী ৩০৭ হি: আল-মুসনাদ

৫৪. ইবনু খুযাইমা, আবুবকর মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক ৩১১ হি: আস-সহীহ

৫৫. ইবনু হিব্বান, মুহাম্মদ ইবনু হিব্বান ৩৫৪ হি: আস-সহীহ

৫৬. তাবারানী, সুলাইমান ইবনু আহমদ ৩৬০ হি: আল মুজামুল কাবীর, আল মুজামুল আউসাত, আল মুজামুস সগীর

৫৭. আলী ইবনু উমার আদ্-দারাকুতনী ৩৮৫ হি: আস-সুনান

৫৮.        হাকিম নাইসাপুরী, মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ ৩২১-৪০৫ হি: আল মুসতাদরাক

৫৯. ইবনু হাযম, আলী ইবনু আহমদ ৪৫৬ হি: আল মুহাল্লা

৬০. বাইহাকী, আহমদ ইবনুল হুসাইন ৪৫৮ হি: আস-সুনানুল কুবরা, শুআবূল ঈমান

৬১. ইবনুল জাউযী, আবুল ফারাজ আব্দুর রাহমান ইবনু আলী ৫৯৭ হি: আল-মাউযুআত, আয-যুয়াফা ওয়াল মাতরূকুন

৬২. কুরতুবি, আবু আব্দুল¬াহ মুহাম্মদ বিন আহমদ ৬৭১ হি: আল-জামেলি আহকামুল কুরআন

৬৩. নব্বী, ইয়াহইয়া ইবনু শারাফ ৬৩১-৬৭৬হি: আল মিনহাজ্জ ফি শারহু সহীহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন, জামিউস সুন্নাহ, আল মাজমূ শারহুল মাহযাব আন্ নভবী ২০ খন্ড

৬৪. ইমাম ইবনু তাইমিয়া, আহমদ ইবনু আব্দুল হালীম ৬৬১-৭২৮ হি: মাজমূ’উ ফাতাওয়া , মিনহাজুস্সুন্নাহ

৬৫. ইমাম যাহাবী, মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ৬৭৩-৭৪৮ হি: মীযানুল ইতিদাল, সিয়ারু আলামিন নুবালা, তাযকিরাতুল হুফফায

৬৬. ইমাম ইবনূল কাইয়্যেম, মুহাম্মদ বিন আবু বকর ৬৯১-৭৫১হি: যাদুল মা‘আদ

৬৭. ইমাম ইবনু কাসীর ইসমাঈল ইবনু উমার ৭০১-৭৭৪ হি: তাফসীর আল-কুরআন আল-আযীম

৬৮.        হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী, আহমদ ইবনু আলী ৭৭৩-৮৫২ হি: লিসানুল মিযান, ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, তাকরীবুত তাহযীব, তাহযীবুত তাহযীব, তালখীসুল হাবীর, বুলুগুল মারাম-শারহু সুবুলুস সালাম

৬৯. শাওকানী, মুহাম্মাদ ইবনু আলী ১১৭২-১২৫৫ হি: আল ফাওয়ায়েদ আল মাজমুয়া ফিল আহাদিসিল মাওযুয়াহ, নাইলুল আওতার, তাফসীরে ফাতহুল কাদীর

৭০. আলবানি, মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন ১৯১৪-১৯৯৯ সন: সিলসিলাতুল আহাদীসিস যাঈফাহ, সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ, ইরওয়াউল গালীল, তামামুল মিন্নাহ

৭১. মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন ১৩৪৭-১৪২১ হি: মাজমূআ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ২৬ খন্ড, শারহু মুমতা‘আ আলা যাদুল মুসতাক্বনি ১৫ খন্ড,  আল কাওলুল মুফিদ আলা কিতাবিত তাওহীদ, শারহু আক্বীদাতুল ওয়াসিতিয়া

সুন্নাতের অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী:

হাদীস গ্রন্থ:

১.  বুখারী, মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল: আস-সহীহ

২.  ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী

৩.  মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ: আস-সহীহ

৪.  আল মিনহাজ্জ ফি শারহু সহীহ মুসলিম

৫.  আবু দাউদ: আস-সুনান

৬.  আবু দাউদ: শারহু আওনুল মাবুদ

৭.  ইবনু মাজাহ: আস-সুনান

৮.  তিরমিযী: জামি তিরমিযী-আস-সুনান

৯.  তিরমিযী: শারহু তুওফাতুল আহওয়াযী

১০. নাসাঈ: আস-সুনান,

১১. ইবনু খুযাইমা: আস-সহীহ

১২. ইবনু হিব্বান: আস-সহীহ

১৩. হাকিম নাইসাপুরী: আল মুসতাদরাক

১৪. বাইহাকী: আস-সুনানুল কুবরা

১৫. রিয়াদুস সালেহীন

১৬. তালখীসুল হাবীর

১৭. বুলুগুল মারাম

১৮. সুবুলুস সালাম

১৯. মাযমাউয যাওয়ায়েদ-হাইসামী ৭৩৫-৮০৭ হি

২০. ইরওয়াউল গালীল -আলবানি

২১. সিলসিলাতুল আহাদীসিস যাঈফাহ- আলবানি

২২. সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ- আলবানি

ফিকহী গ্রন্থ:

২৩. আল মুহাল্লা -ইবনু হাযম ৪৫৬ হি

২৪. আল-মুগনী -ইবনে কুদামা

২৫. আল মাজমু -নব্বী, ইয়াহইয়া ইবনু শারাফ -২০খন্ড

২৬. মাজমূ’উ ফাতাওয়া -ইমাম ইবনু তাইমিয়া -৩৭ খন্ড

২৭. যাদুল মা‘আদ- ইমাম ইবনূল কাইয়্যেম -৫খন্ড

২৮.        নাইলুল আওতার -শাওকানী

২৯. মাজমূআ ফাতাওয়া বিন বায-শাইখ আবদুল আযীয বিন বায

৩০. মাজমূআ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ২৬ খন্ড - মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন

৩১. আশ-শারহু মুমতা‘আ আলা যাদুল মুসতাক্বনি ১৫ খন্ড- মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন

৩২. ফিকহুস সুন্নাহ -সাইদ সাবিক (তাহক্বীক তামামুল মিন্নাহ-আলবানী)

৩৩. সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ- আবু মালিক কামাল বিন সাইদ সালিম-৪ খন্ড

৩৪. আল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আর-বাআ

৩৫. বিদাআতুল মুজতাহিদ-ইবনে রুশদ

৩৬. ফাতাওয়া ইসলামিয়া

৩৭. ফাতাওয়া লাজনা আদ দায়েমা

৩৮.        আল মাওসুআতু ফীকহীয়া কুয়েতীয়া-৪৫ খন্ড

আক্বীদা:

৩৯. শারহু আক্বীদাতুল ওয়াসীতিয়া - ইবনে ওসাইমিন

৪০. আল কাওলুল মুফিদ আলা শারহু কিতাবিত তাওহীদ- ইবনে ওসাইমিন

তাফসীরুল কুরআন:

৪১. আল-জামে লি আহকামুল কুরআন-কুরতুবি ৬৭১ হি

৪২. তাফসীর আল-কুরআন আল-আযীম-ইমাম ইবনু কাসীর ইসমাঈল ইবনু উমার ৭০১-৭৭৪ হি

৪৩. তাফসীরে ফাতহুল কাদীর -শাওকানী ১১৭২-১২৫৫ হি

হাদীসের রাবীদের জীবনী-রিজাল শাস্ত্র: সহীহ ,হাসান, যঈফ, জাল নির্ণয়

৪৪. মীযানুল ইতিদাল-ইমাম যাহাবী, মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ৬৭৩-৭৪৮ হি:

৪৫. লিসানুল মিযান-হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী ৭৭৩-৮৫২ হি

৪৬. তাকরীবুত তাহযীব-হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী

৪৭. তাহযীবুত তাহযীব-হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী:

৪৮. আর রাহীকুল মাখতূম -সফিউর রহমান মুবারকপুরী

আরবী অভিধান:

৪৯. আলকামুসুল মুহীত্ব-আল ফিরোযাবাদী ৭২৯-৮১৭ হি

৫০. লিসানুল আরব -ইবনু মানযুর ৬৩০-৭১১ হি



[1] সূরা আনআম, আয়াত: ১৫৩

[2] তাফসীরে কুরতবী, ১৩৭/৭

[3] আল মুফরাদাত ফি গরীবিল কুরআন, পৃ: ১৫৬

[4] সূরা নূর আয়াত: ৬৩

[5] সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৩

[6] আল মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ: ২৩/৮

[7] বুখারি, হাদিস: ২৫২

[8] সূরা হাশর, আয়াত: ৩

[9] সূরা নিসা, আয়াত: ৮০

[10] মুসলিম: ৩৪

[11] বুখারি: ১৬

[12] সূরা নজম, আয়াত: ৩, ৪

[13] সূরা নাহাল, আয়াত: ৪৪

[14] সূরা নাহাল, আয়াত: ৬৪

[15] সূরা হাসর, আয়াত: ৭

[16] সূরা ইব্রাহীম, আয়াত: ৪

[17] মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৩৩৩৮

[18] সূরা নিসা, আয়াত: ১১৩

[19] আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪

[20] আহযাব: ৩৪

[21] আহমদ হাদিস: ১৭১৭৪ আবু দাউদ হাদিস: ৪৬০৪

[22] বুখারি, হাদিস: ২৪৭৯, মুসলিম, হাদিস: ১৭১৮

[23] বুখারি, হাদিস: ৫০৬৩

[24] বুখারি, হাদিস: ৬০৯৮, আহমদ হাদিস: ১৪৪৩১

[25] মুসলিম, হাদিস: ৮৬৭

[26] নাসায়ী, হাদিস: ১৫৭৮

[27] বুখারি, হাদিস: ৭২৮০

[28] নিসা, আয়াত: ১৩

[29] নিসা, আয়াত: ৬৯

[30] আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২

[31] সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭

[32] সূরা নূর, আয়াত: ৫২

[33] সূরা নূর, আয়াত: ৫৪

[34] সূরা আহযাব, আয়াত: ৭১

[35] সূরা নিসা, আয়াত: ১৩

[36] সূরা নিসা, আয়াত: ৬৫

[37] সূরা আনফাল, আয়াত: ১

[38] সূরা নূর, আয়াত: ৫১

[39] সূরা আনফাল, আয়াত: ২০

[40] সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৬

[41] নিসা, আয়াত: ৮০

[42] বুখারি, হাদিস: ২৯৫৭

[43] সূরা আহযাব, আয়াত: ২১

[44] সূরা কলম, আয়াত: ৪

[45] সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৩১

[46] সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯

[47] সূরা ফরকান, আয়াত: ৩৩

[48] সূরা আনফাল, আয়াত: ৪৬

[49] সূরা আনফাল, আয়াত: ২৪

[50] আহমদ, হাদিস: ২৩৮৭৬; আবুদ দাউদ, হাদিস: ৪৬০৫; ইবনু মাযা, হাদিস: ১৩; তিরমিযি, হাদিস: ২৬৬৩

[51] সূরা নূর, আয়াত: ৬৩

[52] বুখারি, হাদিস: ১৬

[53] সূরা হুজরাত, আয়াত: ১

[54] দারমী হাদিসি: ৪৪৯

[55] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭১

[56] সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩

[57] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫

[58] ইবনু মাযাহ, হাদিস: ২০৯

[59] সূরা নূর, আয়াত: ৪৭

[60] সূরা নূর, আয়াত: ৪৭

[61] সূরা নিসা, আয়াত: ৬১

[62] আলে ইসরান, আয়াত: ৮৬

[63] আলে ইসরান, আয়াত: ৩২

[64] সূরা নিসা, আয়াত: ১৪

[65] সূরা নিসা, আয়াত: ১১৫

[66] সূরা জিন, আয়াত: ২৩

[67] সূরা গাফের, আয়াত: ৭০-৭২

[68] সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৩৩

[69] সূরা ফুরকান, আয়াত: ২৮

[70] সূরা ফুরকান, আয়াত: ২৮

[71] সূরা ফুরকান, আয়াত: ২৯

[72] ইবনু মাযা, হাদিস: ১০৬৬ আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ লি গাইরিহি বলে আখ্যায়িত করেন।

[73] ইবনু মাযা, হাদিস: ৪ আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।

[74] বুখারি, হাদিস নং ৭২৯৮

[75] বুখারি, হাদিস: ১৫৯৭

[76] মুসলিম, হাদিস: ১৯৫৪

[77] ইবনু মাযা, হাদিস: ১৬ হাদিসটি সহীহ

[78] মুসলিম, হাদিস: ১০

[79] সূরা হুজরাত, আয়াত: ৬

[80] সহীহ আল বুখারি, হাদিস: ১০৬

[81] বুখারি, হাদিস: ১০৭

[82] বুখারি, হাদিস: ১০৮; মুসলিম, হাদিস: ২

[83] বুখারি, হাদিস: ১০৯

[84] ইবনু মাযাহ, হাদিস: ৪২

[85] তিরমিযি, হাদিস: ২৬৪০; ইবনু মাযাহ, হাদিস: ৩৯৯১

[86] ইবনু মাযাহ, হাদিস: ৩৯৯২

[87] ইবনু মাযাহ, হাদিস: ৩৯৯৩

[88] তিরমিযি, হাদিস: ২৬৪১

জ্ঞানার্জন সম্পর্কে বিদ্বানদের উক্তি

$
0
0
১:লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে বলেন, হে বৎস! তুমি এ জন্য জ্ঞানার্জন করো না যে তুমি জ্ঞানীদের সাথে অহংকার করবে কিংবা মূর্খদের উপর নিজেকে জাহির করবে অথবা বিভিন্ন মজলিসে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করবে। তুমি জ্ঞানকে উদাসীনতায় পরিত্যাগ করো না বা মূর্খতার মাঝে নিক্ষেপ করো না। হে বৎস! তুমি আপন চোখ দিয়ে দ্বীনী মজলিস বাছাই করে নাও। যখন কোন দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখবে তখন তাদের সাথে যোগ দিবে। তুমি যদি আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখ তাহলেও তা তোমার জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আর যদি তা তোমার অজানা থাকে তবে তোমার নতুন কিছু জানা হবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর রহমত নাযিল করবেন যার একটি অংশ তুমিও প্রাপ্ত হবে। আর যে দল আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের সাথে বসবে না। কেননা যদি আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে তোমার জ্ঞান থাকে তাহলে তা তোমাকে কোন ফায়দা দেবে না। পক্ষান্তরে যদি তা তোমার অজানা থাকে তাহলে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট ও অক্ষম করে ফেলবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন যা তোমাকেও স্পর্শ করবে (আহমাদ হা/১৬৫১, দারেমী হা/৩৭৭, সনদ হাসান)।

:আলী (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্থ-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা জ্ঞান তোমাকেই পাহারা দেয় কিন্তু অর্থকে পাহারা দিতে হয়। অথচ জ্ঞান হলো শাসক, আর অর্থ হলো শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায় (গায্যালী, ইহয়াউল উলূম, ১/১৭-১৮)।

: মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, তোমরা জ্ঞানার্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাঁকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাংখা করা ইবাদত। জ্ঞান চর্চা করা হলো তাসবীহ। জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জিহাদ। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেওয়া ছাদাকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের কারণ। আর তা হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের ধ্রুবক, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে (আল-আজুরী, আখলাকুল ওলামা, পৃঃ ৩৪-৩৫)।

: আবু দারদা (রাঃ) বলেন, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপার্জিত হয় যেমন ধৈর্য ধৈর্যধারণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যে ব্যক্তি কল্যাণের খোঁজে ব্যতিব্যস্ত হয় সে কল্যাণ লাভ করে। যে অকল্যাণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে সে অকল্যাণ থেকে রক্ষা পায় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)।
তিনি বলেন, কোন মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্ম নেয় না। তাকে জ্ঞান অর্জন করতে হয় (কিতাবুল ইলম, ইবনে খায়ছামাহ, পৃঃ ২৮)।

: হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, অজ্ঞ আমলকারী পথহারা পথিকের ন্যায়। সে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশী করে। অতএব তুমি জ্ঞানার্জন কর এমনভাবে যাতে তা ইবাদতকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, আবার ইবাদত কর এমনভাবে যেন তা জ্ঞানার্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একদল লোক এমনভাবে ইবাদতে ডুবে থাকে যে তারা জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায় না, অথচ তারা উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর তরবারী চালিয়ে দেয়। যদি জ্ঞান থাকত তাহলে তারা এরূপ কর্মে লিপ্ত হতে পারত না।
মুজাহিদ বিন জুবায়ের বলেন, লজ্জা ও ভয় হলো জ্ঞানার্জনের প্রতিবন্ধকতা (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী , ১/২২৮ পৃঃ)।

: সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, যে বিষয় আমি জেনেছি তা যদি আমল করি তবেই আমি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী, আর যদি প্রাপ্ত জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করি তবে দুনিয়ার বুকে আমার চেয়ে অজ্ঞ আর কেউ নেই।

: ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে আর মু’মিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ হয় তার আমলের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, যদি জ্ঞানের অধিকারীগণ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করতেন এবং যথার্থ স্থানে তাকে রাখতেন তবে তাঁরা দুনিয়াবাসীর উপর জয়লাভ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তাঁরা জ্ঞানকে দুনিয়াদারদের কাছে সমর্পণ করেছেন দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের অভিপ্রায়ে। ফলে তাঁরা অপদস্ত হয়েছেন।

আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল –পর্ব ১

$
0
0

লেখিকাঃ আসমা বিনতে রাশেদ আর-রুয়াইশেদ   | অনুবাদ : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের   | সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 পর্ব ১  |  পর্ব ২ 

 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি যাবতীয় প্রশংসায় প্রশংসিত এবং সব ধরনের মহত্তর গুণে গুণান্বিত। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি তার বান্দাদের প্রিয় বস্তুর দিক রাস্তা দেখান এবং প্রিয় বস্তু-গুলোকে বান্দার জন্য সহজ করেন। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক বিশেষভাবে বাছাইকৃত রাসূলের উপর যিনি আমানতদার। আর আমার প্রভুর সালাত ও সালাম কিয়ামত অবধি সব সময় বর্ষিত হোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। আমীন।

অতঃপর,

যে সব আমল আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে অধিক পছন্দ করেন এবং অধিক খুশি হন, আল্লাহর গোলামীকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে একজন বান্দা সে আমলগুলি করতে, যে চেষ্টা ও পরিশ্রম করে তারই ভিত্তিতে আল্লাহর প্রতি বান্দার মহব্বত পূর্ণতা লাভ করে এবং বান্দার প্রতি তার রবের মহব্বত বাস্তব রূপ নেয়।

বিষয়টি যেহেতু এমনই, তাহলে একজন বান্দাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলা যে সব আমল পছন্দ করেন এবং যে সব আমলে তিনি অধিক খুশি হন, তা জানতে হবে। তারপর তাকে অবশ্যই সে আমলগুলো জানার পর তদনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করতে হবে ও সেটা বাস্তবায়ণ ও সার্বক্ষনিক সেটার অনুগামী হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর আল্লাহর দরবারে সেসব আমল করার তাওফিক চাইতে হবে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে এ বলে প্রার্থনা করতেন-

«اللهم إني أسألك حبك وحب من يحبك، وحب العمل الذي يبلغني حبك، اللهم اجعل حبك أحب إلي من نفسي وأهلي ومن الماء البارد».

“হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট তোমার মহব্বত কামনা করি, তোমাকে যে মহব্বত করে, তার মহব্বত কামনা করি এবং যে আমল তোমার মহব্বত পর্যন্ত পৌছায়, সে আমল কামনা করি। হে আল্লাহ! তোমার মহব্বতকে আমার নিকট আমার জান-মাল, পরিবার-পরিজন এবং ঠাণ্ডা পানি হতে অধিক প্রিয় করে দাও”  [1]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপার অনুগ্রহ ও হিকমত হল, যে অভীষ্ট লক্ষ্যকে তিনি বান্দার জন্য পছন্দ করেন এবং মহব্বত করেন, তা হাসিল করার জন্যে আল্লাহ্ তা‘আলা এমন একটি মাধ্যম নির্ধারণ করেন, যার দ্বারা বান্দা তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার সবচেয়ে মহান উদ্দেশ্য ও সর্বোত্তম লক্ষ্য- আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তার সন্তুষ্টি অর্জন তা- হাসিলের জন্য কিছু মাধ্যম ও উপকরণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে, আল্লাহর উপর ঈমান এবং সৎ আমল করা; যা আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য শরী‘আত হিসেবে প্রদান করেছেন এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন। এমনকি ইসলাম ইসলাম, তার যাবতীয় আকীদা ও বিধান সবই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যকে বাস্তবায়িত করে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ وَجَٰهِدُواْ فِي سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣٥﴾ [المائ‍دة: ٣٥] 

হে মুমিনগণ, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তার নৈকট্যের অনসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও। [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩৫]

 

আল্লাহর বাণী:  وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَএর অর্থ হল, তোমরা নেক আমল তালাশ কর, যাতে তা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পার। আর তা হচ্ছে, যাবতীয় নেক আমলসমূহ, যা দ্বারা একজন বান্দা তার রবের নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি, মহব্বত ও কাছে থাকার সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়।

এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, ইসলামী শরিয়তে যত প্রকার নেক আমলের কথা বলা হয়েছে, সব নেক আমলের ফযিলত ও মর্যাদা এক নয় এবং সমান নয়। যদিও সমস্ত নেক আমলের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, আল্লাহ তা পছন্দ করেন এবং তাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট ও খুশি হন, কিন্তু আল্লাহর নিকট প্রিয় ও পছন্দনীয় হওয়ার বিবেচনায় আমলসমূহের মধ্যে পার্থক্য আছে এবং আমলসমূহের বিভিন্ন স্তর আছে। একটি আমল অপর আমলের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া বা আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় হওয়া স্বাভাবিক। এ কারণে দেখা যায়, কোন আমল অধিক উত্তম আবার কোন আমল কম উত্তম আবার কোন আমল শুধু উত্তম। আমলের স্তর ও মর্যাদা অসংখ্য ও অগণিত।

আর মানুষও এ সব আমলে প্রবিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের হয়। প্রত্যেকেই প্রথমত আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃক তার প্রতি প্রদত্ত তাওফীক অনুসারে, তারপর আল্লাহর নাম, সিফাত ও কর্মসমূহ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে তারতম্যের ভিত্তিতে, তারপর শরী‘আত অনুমোদিত নেক আমলসমূহের ফযীলত, সেগুলোর বৈধ সময়, ও অবৈধ সময় সম্পর্কে জানার পার্থক্যের ভিত্তিতে তা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কারণ, একই নেক আমল শুধুমাত্র আমল হিসেবে কখনও কখনও আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে থাকে; তখন আল্লাহর নিকট সেটি অন্য আমলের তুলনায় বড় হিসেবে গণ্য হয়, আর সে জন্য আল্লাহ সেটাকে অধিক ভালোবাসেন। যেমন, ঈমান, সালাত ইত্যাদি নেক আমলসমূহ। অনুরূপভাবে সময়ের কারণেও অনেক সময় নেক আমলসমূহের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে তুলনামূলক কম ফজিলতপূর্ণ আমল তার বৈধ সময়ে আদায় করাতে আমলটির সাওয়াব অধিক ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হয়ে থাকে, ঐ সময়ে তুলনামূলক অধিক ফজিলত-পূর্ণ আমলসমূহ আদায় করার তুলনায়। যেমন, আযানের সময় কুরআন তিলাওয়াত করার তুলনায় মুয়াজ্জিনের সাথে আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করা অধিক উত্তম। অথচ সাধারণত কুরআন তিলাওয়াত করা সামগ্রিক দিক বিবেচনায় সর্বোত্তম যিকির।

আবার অনেক সময় আল্লাহ্ তা‘আলা কোনো কোনো আমলকে অন্যান্য আমলের তুলনায় অধিক মহব্বত করেন। কারণ, তার ফায়দা ও প্রভাব অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং তা জনকল্যাণমুখী হয়ে থাকে। যেমন, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখা, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া, দান খায়রাত করা ইত্যাদি।

এ বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেন, মহামান্য দুই ইমাম; শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এবং তার ছাত্র আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ.। তারা বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেন:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইব্‌ন তাইমিয়্যাহ র. মাজমু‘ ফাতওয়ায় [২২/৩০৮] উল্লেখ করেন,

“অনেক আলেম বলেন, হাদিস লিপিবদ্ধ করা, নফল সালাত হতে উত্তম। আবার কোন কোন শেখ বলেন, রাতের অন্ধকারে যখন কেউ দেখে না, তখন দুই রাকাত সালাত আদায় করা, একশ হাদিস লিপিবদ্ধ করা হতে উত্তম। অপর একজন ইমাম বলেন, বরং উত্তম হল, এ কাজ করা ও কাজ করা। মানুষের অবস্থার ভিন্নতার কারণে আমলসমূহের উত্তম হওয়ার বিষয়টিও বিভিন্ন হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, একই আমল কখনো সেটি উত্তম হয়, আবার কখনো তা উত্তম হয় না অথবা তা নিষিদ্ধ হয়ে থাকে। যেমন, সালাত: সালাত আদায় করা কুরআন তিলাওয়াত হতে উত্তম। আর কুরআন তিলাওয়াত যিকির করা হতে উত্তম, আর যিকির করা, দু‘আ করা হতে উত্তম। তারপর নিষিদ্ধ সময়ে সালাত আদায় করা, যেমন ফজরের সালাতের পর, আসরের সালাতের পর এবং জুমার খুতবার সময় সালাত আদায় করা হারাম। তখন কুরআন তিলাওয়াত করা, অথবা যিকির করা অথবা দু’আ করা অথবা (খুতবা) মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা সালাতের থেকে উত্তম”।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. ‘মাদারে-জুস সালেকীন’ গ্রন্থে ইবাদতে এই দূরবর্তী ফিকহ সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছেন, এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে আমরা তা বর্ণনা করছি। তিনি বলেন,

‘মনে রাখবে, সর্বাবস্থায় এবং সব জায়গায় উত্তম হল, ঐ অবস্থা ও সময়ের মধ্যে কোন কাজটি করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মহব্বত অর্জন করা যায়, তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং ঐ সময়ের দাবি ও চাহিদা অনুযায়ী সে আমল করা যে আমলে আল্লাহ্ তা‘আলা রাজি-খুশি ও সন্তুষ্ট হন।

আর এরাই হল, প্রকৃত ইবাদতকারী। এর পূর্বে যাদের কথা উল্লেখ করা হয়, তারা হলেন, বিশেষ প্রকৃতির ইবাদতকারী। তাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন কোনো ধরনের ইবাদত, যার সাথে সে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে, যখন সে তা থেকে নিজেকে পৃথক করে তখন সে মনে করতে থাকে যে, তার ইবাদতে ঘাটতে হয়েছে ও সে ইবাদত করা ছেড়ে দিয়েছে। এতে করে এ লোকটির আল্লাহর ইবাদত একপেশে পদ্ধতিতে হয়। পক্ষান্তরে যে প্রকৃত ইবাদতকারী তার ইবাদত কোনো কিছুকে অন্য কিছুর উপর প্রাধান্য দেওয়ার মত সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। বরং তার উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসন্ধান করা; তা যেখানেই পাওয়া যাক না কেন। ফলে তার ইবাদতের ভিত্তি হল, সব সময় দাসত্বের বিভিন্ন স্তরে স্থানান্তরিত হতে থাকা। যখনই তার জন্য কোনো একটি ইবাদতের স্থান উদয় হয়, তখন সে তার পিছনে ছুটতে থাকবে এবং তা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, যতক্ষণ না তার জন্য অপর একটি ইবাদতের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এ হল, তার চলার পথের পদ্ধতি; এ ভাবেই শেষ হতে থাকে তার গতি। তুমি যখন আলেমদের দেখবে তখন, তাকেও আলেমদের সাথে দেখতে পাবে। আবার যখন তুমি আবেদদের দেখবে, তাকেও তাদের সাথে দেখবে। অনুরূপভাবে যখন তুমি মুজাহিদদের দেখবে, তাকেও তাদের সাথে দেখবে। আর যখন তুমি যিকিরকারীদের দেখবে, তখন তুমি তাকেও যিকিরকারীদের সাথে দেখবে। আর যখন তুমি মুহসিনদের দেখবে, তখন তুমি তাকেও তাদের সাথে দেখবে। এরা হল, প্রকৃত ইবাদতকারী যারা কোনো নির্ধারিত ধরা-বাঁধা নিয়ম নয়, আর যারা কোনো শর্তের বন্ধনেও আবদ্ধ নয়।’

আল্লাহর নিকট প্রিয় আমল কোনটি তার আলোচনা শুরু করার পূর্বে আমাদের জন্য জরুরি হল, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা, যার উপর নেক আমল কবুল হওয়া না হওয়া, সাওয়াব লাভ করা না করা এবং আখিরাতের আমলের দ্বারা উপকার লাভ করা না করা ইত্যাদি জরুরি বিষয়সমূহ নির্ভর করে। আর তা হল:-

এক - সমস্ত আমল কেবল আল্লাহর জন্য করা। অর্থাৎ আমল করা দ্বারা উদ্দেশ্য হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তাকে রাজি-খুশি করা, আল্লাহ নিকট বান্দার জন্য যে সব নেয়ামত ও বিনিময় রয়েছে, তার আশা করা। আর অন্তরকে মানুষের দৃষ্টি হতে সম্পূর্ণ খালি করা এবং দুনিয়াতে মানুষ থেকে কি লাভ করবে তার প্রতি কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ না করা। আর অন্তর দ্রুততম যে ফলের আশা করতে থাকে তা থেকেও মুক্ত করা।

দুই - ইবাদতে নিয়তের পার্থক্য করা। অনেকে মনে করে, এ শর্ত এবং ইখলাস একই কথা। কিন্তু বাস্তবতা হল, দুটি এক নয়, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, ‘ইবাদতে নিয়ত করা ইখলাস থেকে আরও একটি বর্ধিত ও অতিরিক্ত বিষয়। কারণ, ইবাদতে ইখলাস হল, অন্যকে বাদ দিয়ে কেবল মা‘বুদেরই ইবাদত করা। আর ইবাদতের নিয়তের দুটি স্তর আছে:

১. ইবাদতকে স্বাভাবিক কাজ-কর্ম থেকে পার্থক্য করা।

২. এক ইবাদতকে অপর ইবাদত থেকে পার্থক্য করা।

তিন - ইবাদতে যত্নবান হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা যেভাবে ইবাদত করাকে পছন্দ করেন এবং বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, সেভাবে ইবাদতকে বাস্তবায়ন ও আদায় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। এ শর্তের দাবি হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত ও তার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত তার অনুকরণ-অনুসরণ করা।

চার - নেক আমলসমূহের সাওয়াবের হেফাজত ও সংরক্ষণ করা। আর তা হল, আমলকে নষ্ট বা বরবাদ করার কারণ হয়, এমন সব বিষয় হতে বিরত ও সতর্ক থাকা। যেমন, রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য আমল করা, মানুষকে খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়া, আত্মতৃপ্তিতে ভোগা, গণক ও জাদুকরদের নিকট যাওয়া, ইত্যাদি কর্মকাণ্ড।

অনুরূপভাবে একজন আমলকারীকে অবশ্যই এমন সব কিছু থেকে বিরত থাকবে, যেগুলো নিজের আমলের সাওয়াব অন্যের নিকট চলে যাওয়ার কারণ হয়। এটি অনেক সময় দুনিয়াতে কারো উপর জুলুম করার কারণে হয়ে থাকে অথবা কারো হক নষ্ট করা বা কোনো ধরনের কষ্ট দেয়ার কারণে হয়ে থাকে। যেমন, গীবত করা, গালি দেয়া, চুরি করা, মুমিন ভাইকে পরিত্যাগ করা- যে পরিত্যাগ শরী‘আতে নিষিদ্ধ, ইত্যাদি।

আমরা এখন আল্লাহর নিকট প্রিয় আমলসমূহের বর্ণনা করব। সে গুলো হল নিম্নরূপ:

এক. আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা:

যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 «أحبُّ الأعمال إلى الله إيمانٌ بالله»

“আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা” [2]

আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ: তাওহীদের প্রতি ঈমান আনা। অর্থাৎ যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য করা। আর তা সংঘটিত হবে, অন্তরের আমলসমূহ কেবল আল্লাহর জন্য করা। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল অন্তরের আমলসমূহের অনুসারী। কারণ, ঈমান অনেকগুলো শাখা প্রশাখা ও অসংখ্য আমলের নাম। তার মধ্যে কিছু আছে অন্তরের আমল, আবার কিছু আছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল। আর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হল, অন্তরের আমল। কারণ, অন্তরের আমল সব সময় এবং সর্বাবস্থায় প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য আবশ্যকীয়। যখন কোনো বান্দা থেকে অন্তরের আমল দূর হয়ে যায়, তখন তার ঈমানও দূর হয়ে যায়। যেমনিভাবে ঈমানের বাহ্যিক আমলসমূহ অর্থাৎ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল, তা বিশুদ্ধ হওয়া ও গ্রহণযোগ্য হওয়া নির্ভর করে অন্তরের ঈমানের উপর; যা মূল বলে স্বীকৃত। এ কারণেই আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. ‘বাদায়ে‘উল ফাওয়ায়েদ’ কিতাবে লিখেন:

‘সুতরাং অন্তরের বিধান কি তা জানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিধান জানা হতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটিই হচ্ছে আসল, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিধি-বিধান এর শাখা-প্রশাখা’। 

একজন মুমিনের নিকট দ্বীনের আসল মূলকথা ও মূল ভিত্তি হচ্ছে যে সে তার অন্তরের আমল থেকে শুরু করবে, যার সূচনা হবে ইলমের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানা ও তার রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সংবাদের উপর, যা থেকে অন্তরের সকল আমলের ফলাফল লাভ হয়। যেমন, আল্লাহর প্রতি দৃঢ়-বিশ্বাস, দ্বীন বা আনুগত্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা, আল্লাহর জন্য মহব্বত করা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, আল্লাহর শর‘ঈ ও কাদরী ফায়সালার উপর ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহর নিকট আশা করা, আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও দুশমনি করা, আল্লাহর জন্য বিনয়ী হওয়া, আল্লাহর জন্য অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়া, আল্লাহর ফায়সালায় প্রশান্তি লাভ করা ইত্যাদি বহু আমলকে আবশ্যক করে।

ঈমানের প্রকাশ্য ও গোপন আমলসমূহ পালন করার পদ্ধতি ও পরিমানের দিক বিবেচনায় মানুষেরও মর্যাদা ও শ্রেণীর বিভিন্নতা হয়ে থাকে; [সবাই এক পর্যায়ের বা এক স্তরের হয় না।] তাদের মধ্যে কতক মানুষ আছে, যারা তাদের নিজেদের উপর জুলুমকারী। আবার কতক আছে, মধ্যপন্থী, আবার কতক আছে, যারা ভালো কাজে অগ্রসর। এ তিনটি স্তরের মানুষের মধ্যে প্রতি স্তরের মানুষের আরও অসংখ্য শ্রেণী বিন্যাস আছে, যা আয়ত্ত করা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

আল্লামা ইবনে রজব রহ.  «ألا وإن في الجسد مضغة .. الحديثَ» “মনে রাখবে দেহের মধ্যে একটি গোস্তের টুকরা আছে” এ হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,

‘এখানে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পাদিত যাবতীয় কর্মকাণ্ড সঠিক হওয়া, হারাম থেকে বিরত থাকা এবং সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকা, ইত্যাদি সবই বান্দার অন্তরের কর্মকাণ্ডের পরিশুদ্ধতা অনুযায়ীই হয়ে থাকে। যখন অন্তর হবে নিরাপদ, তার মধ্যে আল্লাহর মহব্বত এবং আল্লাহ্ তা‘আলা যা মহব্বত করে, তার প্রতি মহব্বত করা ছাড়া আর কোন কিছুর মহব্বত তার অন্তরে স্থান পাবে না বা থাকবে না এবং একমাত্র আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহ যা অপছন্দ করে তাতে পতিত হওয়ার ভয় ছাড়া, আর কোন ভয় তার অন্তরে থাকবে না, তখন তার সমগ্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল ঠিক হয়ে যাবে। তখন বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা কোনো নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত হবে না এবং সন্দেহ, সংশয়যুক্ত বিষয়সমূহ থেকে হারামে পতিত হওয়ার আশঙ্কায় বেঁচে থাকবে। 

এখানে একটি প্রশ্ন যুক্তিসংগত, তা হচ্ছে, ঈমান কেন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল?

উত্তর: কারণ, ঈমানের বাস্তবায়নের মাধ্যমে একজন বান্দা সমস্ত মাখলুকাত থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। বান্দার অন্তর আল্লাহ ছাড়া সব কিছুকে বাদ দিয়ে একমাত্র এক আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। আর এটিই হল, ইবাদতের হাকীকত ও মর্মার্থ; যার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষ ও জ্বীন সৃষ্টি করেছেন, কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন, অসংখ্য নবী ও রাসূলকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন এবং সাওয়াব ও শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. মাজমু‘ ফাতাওয়ায় বলেন,

‘মানুষের অন্তর কখনোই সমস্ত মাখলুকাত হতে অমুখাপেক্ষী হবে না, কিন্তু তখন হবে, যখন আল্লাহই হবে তার এমন অভিভাবক যার ইবাদত ছাড়া আর কারো ইবাদত সে করে না, তার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে সে সাহায্য চায় না, তার উপর ভরসা করা ছাড়া আর কারো উপর সে ভরসা করে না, আর একমাত্র আল্লাহ যে সব কিছুকে পছন্দ করেন তা ছাড়া অন্য কোন কিছুতে সে খুশি হয় না এবং যে সব কিছুতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তা ছাড়া অন্য কোনো কিছুতে স সন্তুষ্ট হয় না। আর আল্লাহ যে সবকে অপছন্দ ও ঘৃণা করেন, সে সব কিছুকে সে অপছন্দ ও ঘৃণা করে। আল্লাহ যাদের সাথে দুশমনি রাখেন তাদের ছাড়া আর কারো সাথে দুশমনি রাখে না। আল্লাহ যাদের সাথে বন্ধুত্ব করেন, তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করে। তাদের ছাড়া আর কারো সাথে বন্ধুত্ব করে না। কাউকে বাধা দিতে বা বারণ করতে হলে, আল্লাহর জন্যই বাধা দেয় ও বারণ করে। সুতরাং যখনই একজন বান্দার দ্বীনে আল্লাহর জন্য শক্তিশালী ইখলাস থাকবে, তখনই তার দাসত্ব পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং সৃষ্টিকুল থেকে সে অমুখাপেক্ষী হবে। আর আল্লাহর জন্য দাসত্ব পরিপূর্ণতা লাভ করলেই তা বান্দাকে শিরক ও কুফর থেকে বাঁচাতে পারবে।”

এ কারণেই ঈমান, সর্বোত্তম ও সর্বাধিক প্রিয় আমল।  আর এ ছাড়া যত আমল আছে, সব আমল আল্লাহর নিকট ফজিলতের দিক দিয়ে ঈমানের চেয়ে নিম্নপর্যায়ের।

দ্বিতীয়: আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আত্মীয়তা সম্পর্ক অটুট রাখা:

প্রমাণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أحبُّ الأعمال إلى الله إيمانٌ بالله، ثم صِلَةُ الرحم»

“আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তারপর আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখা” [3]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

«إنَّ الله خلق الخَلْقَ حتى إذا فرَغَ من خَلْقه قالتِ الرَّحِمُ: هذا مقامُ العائذ بك من القطيعة، قال: نعم؛ أمَا تَرْضَيْنَ أن أصلَ من وصلَكِ، وأقطعَ من قطعَكِ؟! قالَتْ: بلى يا رب، قال: فهو لَكِ، قال رسولُ الله صلى الله عليه و سلم: فاقرؤوا إن شئتم: ﴿ فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣ ﴾ [محمد: ٢٢،  ٢٣] » [رواه مسلم].

“আল্লাহ তা‘আলা মাখলুককে সৃষ্টি করেন। মাখলুককে সৃষ্টি করার কাজ সম্পন্ন করার পর আত্মীয়তার-সম্পর্ক বলল, এ (আল্লাহর কাছে) হল, আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি কি খুশি হবে না, আমি সম্পর্ক রাখি যে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখে এবং আমি সম্পর্ক কর্তন করি যে তোমার সাথে সম্পর্ক কর্তন করে। সে বলল, হ্যাঁ হে রব! তিনি বললেন, তোমাকে তা দেয়া হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি চাও তোমরা এ আয়াত তিলাওয়াত কর-

﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣﴾ [محمد: ٢٢،  ٢٣]   [رواه مسلم].

“তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেন, তাদেরকে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টি সমূহকে অন্ধ করেন” [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২২, ২৩[4]

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لعن الله قاطع الرحم».

 “আল্লাহ আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট কারীকে অভিশাপ করেন” [5]

আলেমগণ বলেন, ‘আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষার মূল কথা হচ্ছে, মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা’। আল্লামা কুরতবী রহ. বলেন, ‘রাহেম বা সম্পর্ক বজায় রাখা’ এর-সম্পর্ক দু ধরনের হয়ে থাকে। এক-সাধারণ সম্পর্ক, দুই-বিশেষ সম্পর্ক”।

সাধারণ সম্পর্ক: ব্যাপক ও বিস্তৃত: আর এটি হল, দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সাথে ঈমানী বন্ধনের কারণে, তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখা, ঈমানদারদের মহব্বত করা, তাদের সহযোগিতা করা, তাদের কল্যাণে কাজ করা, তাদের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করা, তাদের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, তাদের লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের হকগুলো আদায় করা। যেমন, অসুস্থদের দেখতে যাওয়া, তাদের হক সমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা, তাদের গোসল দেওয়া, তাদের উপর জানাযার সালাত আদায় করা, দাফন-কাফন ইত্যাদিতে শরিক হওয়া।

বিশেষ সম্পর্ক: আর তা হল, মাতা-পিতা উভয় দিক থেকে নিকটাত্মীয়তার-সম্পর্ক রক্ষা করা। সুতরাং তাদের হক্কসমূহ, তাদের বিশেষ অধিকারসমূহ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব আদায় করা সন্তানের উপর ওয়াজিব। যেমন, মাতা-পিতার খরচ বহন করা, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া, প্রয়োজনের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো থেকে বেখবর না থাকা ইত্যাদি। আর যখন বহু আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়, তখন যেটি নিকট হওয়ার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার পাবে সেটি, তারপর যেটি তুলনামূলক কাছে সেটি প্রদান করবে।

আল্লামা ইবনু আবি জামরাহ্‌ বলেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময় মালামাল বা ধন-সম্পদ দ্বারা হয়, প্রয়োজনের সময় সাহায্য করা দ্বারা হয়, ক্ষতিকে প্রতিহত করা দ্বারা হয়, মানুষের সাথে হাসি-খুশি ব্যবহার দ্বারা হয়, দো‘আ করা দ্বারা হয়, সাধ্য অনুযায়ী কারও কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারা হয়, সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে ক্ষতি হতে বাঁচানো দ্বারা এবং তাদের উপকার করা দ্বারা হয়। আর আত্মীয়তার-সম্পর্ক বজায় রাখা তখন কর্তব্য হয়, যখন আত্মীয়গণ ঈমানদার হয়ে থাকে। আর যদি ঈমানদার না হয়ে কাফের অথবা ফাজের হয়, তখন আল্লাহ্র সন্তুষ্টির তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাই হল সম্পর্ক বজায় রাখা। তবে শর্ত হল, তাদের নসিহত করতে হবে ও জানাতে হবে, তারা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনে এবং এ অবস্থার উপর অটল থাকে, তাহলে তারা সত্য থেকে অনেক দূরে সরে যাবে এবং তাদের  পিছনে পড়ে থাকতে হবে। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে তারা যাতে, ঈমান গ্রহণ করে তার জন্য দোয়া করা দ্বারা তাদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা যায়”।

তিন: আল্লাহর নিকট প্রিয় আমল হচ্ছে, সৎ কাজের আদেশ দেয়া অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা:

প্রমাণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أحبُّ الأعمال إلى الله الإيمانُ بالله، ثم صلةُ الرحم، ثم الأمرُ بالمعروف والنهيُ عن المنكر».

“আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, তারপর আত্মীয়-সম্পর্ক বজায় রাখা, তারপর ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা” [6]

মা‘রুফ: সমস্ত ভালো কাজ ও ইবাদতকে মারুফ বলা হয়ে থাকে। ভালো কাজকে মারূফ (জানা বিষয়) এ জন্য বলা হয়, কারণ, একজন জ্ঞানী লোক বা সঠিক প্রকৃতির অধিকারী লোক বলতেই এটি জানে। আর সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মারূফ হল, একমাত্র আল্লাহ যার কোনো শরিক নাই তাঁর ইবাদত করা, ইবাদতকে শুধু তাঁর জন্যই একনিষ্ঠ করা এবং  ইবাদতে তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করা। তারপর যত ইবাদত বন্দেগী আছে যেমন-ফরয, ওয়াজিব, নফল ইত্যাদি সবই সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত।

মুনকার [অগ্রহণযোগ্য কাজ]: যে সব কাজ থেকে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, সবই হল, মুনকার। সুতরাং সব ধরনের গুনাহ, তা কবীরা হোক বা সগীরা সবই মুনকার। কারণ, বিশুদ্ধ বিবেক ও সঠিক প্রকৃতি এগুলোকে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে। আর সবচেয়ে বড় মুনকার বা অন্যায় হল, আল্লাহর সাথে শরীক করা।

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা মুমিন ও মুনাফেকদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করে দেয়, এটি মুমিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার তিনটি স্তর আছে, যেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

«مَنْ رأى منكم منكرًا فليغيِّره بيده، فإنْ لم يستطعْ فبلسانه، فإنْ لم يستطعْ فبقلبه؛ وذلك أضعف الإيمان» [أخرجه مسلم].

“তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন অন্যায় সংঘটিত হতে দেখে, তাকে হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, যদি তা করা সম্ভব না হয়, মুখের দ্বারা প্রতিহত করবে, আর তাও যদি সম্ভব না হয়, তা হলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। এটি হল, ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর” [7]

অনুরূপভাবে তিনটি গুণ আছে, একজন ভালো কাজের আদেশকারী ও অসৎ কাজের নিষেধকারীর মধ্যে এ তিনটি গুণ থাকা অতীব জরুরি।

১- ইলম: যে ভালো কাজটির আদেশ দেবে সে সম্পর্কে তাকে অবশ্যই জানতে হবে এবং যে খারাপ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে, তার সম্পর্কেও তার সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।

২- কোমলতা: যে কাজের আদেশ দেবে এবং যে কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে, সে বিষয়ে তাকে অবশ্যই কোমল হতে হবে।

৩- ধৈর্য: জুলুম নির্যাতনের উপর ধৈর্যশীল হতে হবে। যেমন,  লোকমান হাকিম তার ছেলেকে যে অসিয়ত করেন আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে তার বর্ণনা দেন, যাতে মানুষ তার অনুকরণ করে এবং তা তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰبُنَيَّ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱنۡهَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ١٧﴾ [لقمان: ١٧] 

“হে আমার প্রিয় বৎস, সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এ গুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ”।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার পূর্বে ইলম থাকতে হবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার সময় কোমল হতে হবে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার পর ধৈর্য ধরতে হবে।

 

চার: আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হচ্ছে, ফরযসমূহ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বীয় রবের পক্ষ হতে বর্ণনা করে বলেন,

«مَنْ عادى لي وليًا فقد آذنتُهُ بالحرب، وما تقرَّب إليَّ عبدي بشيءٍ أحبَّ إليَّ مما افترضْتُ عليه» [أخرجه البخاري].

“যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে দুশমনি করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। বান্দার উপর আমি যা ফরয করেছি, তা আদায় করার মাধ্যমে আমার বান্দা যতটুকু আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে, আর কোন কিছু দ্বারা সে তা করতে পারে না”। [বুখারি]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: «من عادى لي وليًا» এতে আল্লাহর অলি দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যারা আল্লাহ সম্পর্কে জানে, আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে অটুট ও অবিচল এবং আল্লাহর ইবাদতে একনিষ্ঠ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: «مما افترضته عليه» দ্বারা উদ্দেশ্য ফরযসমূহ। ফরযে আইন বা ফরযে কিফায়া  ও প্রকাশ্য ফরযসমূহ সবই এর অন্তর্ভুক্ত। তন্মধ্যে :

কর্মগত ফরযসমূহ যেমন, ওযু, সালাত, যাকাত, সদকায়ে ফিতর, রোযা, ইহরাম, হজ, আল্লাহর রাহে জিহাদ ইত্যাদি।

তাযকীয়া (আন্তরিক পবিত্রতা): যেমন, যেনা-ব্যভিচার, হত্যা, মদ্যপান, সুদ-ঘোষ, শূকরের গোস্ত খাওয়া, ইত্যাদি হারামসমূহ। অনুরূপভাবে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীল কর্মসমূহ।

তাছাড়া অপ্রকাশ্য ফরযসমূহ: যেমন আল্লাহ সম্পর্কে জানা, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহকে ভয় করা।

আর আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে অধিক শক্তিশালী মাধ্যম হল, ফরযসমূহ আদায় করা। আর ফরযসমূহকে যেভাবে আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেভাবে আদায় করার মাধ্যমে মূলত যিনি ফরযসমূহ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন, তার সম্মান, তা‘যীম ও তার পরিপূর্ণ আনুগত্য, আর রবুবিয়্যাতের বড়ত্ব এবং দাসত্বের হীনতা প্রকাশ পায়। সুতরাং ফরযসমূহ আদায় করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মহান আমল।

সবচেয়ে পছন্দনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফরয হচ্ছে, ওয়াক্ত মত সালাত আদায় করা।

عن عبد الله بن مسعود – رضي الله عنه – قال: سألتُ النبيَّ صلى الله عليه و سلم: أيُّ العمل أحبُّ إلى الله؟ قال: «الصلاة على وقتها».

“আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, সময়মত সালাত আদায় করা” [8]

আল্লামা ইব্‌ন বাত্তাল রহ. বলেন, সালাতকে সালাতের প্রথম সময়ের মধ্যে আরম্ভ করা, দেরিতে আরম্ভ করা হতে অধিক উত্তম। কারণ, সালাত প্রিয় আমল হওয়ার জন্য সালাতকে মোস্তাহাব সময়ের মধ্যে আদায় করা শর্ত করা হয়েছে।

ইমাম তাবারী রহ. বলেন,

“যে ব্যক্তি সালাতসমূহ নির্ধারিত সময়ে আদায় করার কষ্ট কম হওয়া এবং সময়মত আদায় করার মহান ফযিলত সম্পর্কে জানা থাকা স্বত্বেও কোনো প্রকার ওযর ছাড়া ফরয সালাতসমূহকে নির্ধারিত সময়ে আদায় করে না, সে অন্যান্য দায়িত্ব সম্পর্কে আরও বেশি উদাসীন”।

সুতরাং সালাতকে সালাতের ওয়াক্তের বাইরে আদায় করা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনে এ বিষয়ে বলেন,

﴿ فَوَيۡلٞ لِّلۡمُصَلِّينَ ٤ ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ ٥ ﴾ [الماعون: ٤،  ٥]  

অতএব সেই সালাত আদায়কারীর জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী। [সূরা মাউন, আয়াত: ৪, ৫]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী: لِّلۡمُصَلِّينَ  অর্থাৎ ‘সালাত আদায়কারী’ দ্বারা উদ্দেশ্য, যারা সালাত আদায়করার যোগ্য, আর তারা সালাত আদায় করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারপর তারা তাদের নিজেদের সালাত আদায় করা হতে অমনোযোগী। এই ‘অমনোযাগী’ কয়েকভাবে হতে পারে। এক- তারা একেবারে সালাত আদায় করা হতে গাফেল বা অমনোযোগী। দুই- তারা শরী‘আত নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা হতে অমনোযোগী। ফলে তারা এক ওয়াক্তের সালাতকে অন্য ওয়াক্তের মধ্যে নিয়ে আদায় করে। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তারা সালাতকে নির্ধারিত সময় থেকে দেরীতে আদায় করে। আবুল আলীয়া হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তারা সালাতকে নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করে না এবং সালাতের রুকু ও সেজদা ভালোভাবে আদায় করে না”।

সুতরাং﴿عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ﴾ [الماعون: ٥]   “যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী”। [সূরা মাউন, আয়াত: ৪, ৫] এর এক অর্থ, তারা প্রথম সময়ে সালাত আদায় করা থেকে অমনোযোগী। ফলে সে সব সময় অথবা অধিকাংশ সময় সালাতকে দেরীতে আদায় করে। অপর অর্থ, সে সালাতকে যেভাবে সালাতের আরকান ও শর্তসমূহ সহকারে আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেভাবে আদায় করা থেকে অমনোযোগী। অন্য অর্থ হচ্ছে, সে সালাতে একাগ্রতা এবং সালাতের অর্থ ও গুঢ় কথা সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করা থেকে অমনস্ক ও অমনোযোগী।

পাঁচ. আল্লাহ্ তাআলা বে-জোড়কে অধিক পছন্দ করেন

প্রমাণ:

قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: «وإن الله وترٌ يحبُّ الوتر» [رواه مسلم].

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা বেজোড়; তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন”  [মুসলিম] [9]

وتر  শব্দের অর্থ একা, আর আল্লাহর গুণ হওয়ার ক্ষেত্রে وتر  শব্দের অর্থ, আল্লাহ একক, যার কোনো শরিক নেই ও কোনো দৃষ্টান্ত নাই; তিনি তার সত্ত্বায় একক; সুতরাং তার অনুরূপ কিছু নেই, নেই কোনো সদৃশ। তিনি তার সিফাত সমূহে একক; তার কোনো সাদৃশ্য নেই; নেই কোনো প্রতিমূর্ত্তি। তিনি তার কর্মে একক; তার কর্মে কোনো শরিক নেই। আর নেই কোনো সহযোগী।

আবার কেউ কেউ বলেন, «يحب الوتر» -আল্লাহ্ তা‘আলা বে-জোড়কে পছন্দ করেন- এ কথার অর্থ হল, আল্লাহর দরবারে অধিকাংশ ইবাদত বন্দেগী ও আমলের ক্ষেত্রে বে-জোড় আমল ও ইবাদতের ফযিলত বেশি। [ফলে তিনি অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বে-জোড় নির্ধারণ করেছেন।] যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা সালাতকে পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারণ করেছেন। তাহারাতকে তিনবার করে করা, তাওয়াফ সাতবার, সাঈ সাতবার, পাথর নিক্ষেপ সাতবার, আইয়ামে তাশরিক তিনদিন, ঢিলা-কুলুখ দিয়ে পবিত্রতা হাসিল তিনবার ইত্যাদি। অনুরূপভাবে কাফনসমূহ তিন কাপড়। এছাড়াও আল্লাহ্ তা‘আলা তার অধিকাংশ বড় বড় মাখলুককে বেজোড় সৃষ্টি করেছেন। যেমন, আসমান সাতটি, জমিন সাতটি, সমুদ্র সাতটি, দিন সাতটি ইত্যাদি।

আবার কেউ কেউ বলেন, এ কথার অর্থ ঐ বান্দার গুণের সাথে সম্পৃক্ত যে আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহকে একক ও একা জেনে এবং আল্লাহকে এক জেনে খালেস করে তাঁর জন্য।

আবার কেউ কেউ বলেন, এর উপর সাওয়াব দেন এবং বে-জোড় আমলকারীর আমল কবুল করেন।

কাজী রহ. বলেন, যে কোনো বস্তু আল্লাহর সাথে সামান্য হলেও মুনাসেবত-সম্পর্ক- রাখে তা আল্লাহর নিকট অন্যান্য বস্তুসমূহ থেকে অধিক পছন্দনীয়, যার মধ্যে এ সম্পর্ক থাকে না।

আবার কেউ কেউ এখানে হাদিসটিকে وتر এর সালাত সম্পর্কে বলা হয়েছে বলে দাবি করেন; তাদের প্রমাণ হল, এ হাদিস যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إن الله وتر يحب الوتر؛ فأوتروا يا أهل القرآن»  

“আল্লাহ বে-জোড় তিনি বে-জোড়কে পছন্দ করেন, হে কুরআনের অনুসারী, কুরআন তোমরা ভিত্‌র (বিতির সালাত) আদায় কর ।” [10]

তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করেন। কিন্তু হাদিসটিকে শুধু এ অর্থের উপরই প্রয়োগ করার জন্য খাস বা নির্দিষ্ট করা জরুরি নয়। বরং হাদিসের অর্থটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করাই সুস্পষ্ট।

ছয়: আল্লাহর নিকট সর্ব উত্তম আমল- মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা।

প্রমাণ:

عن عبد الله بن مسعود – رضي الله عنه – قال: «سألتُ النبي صلى الله عليه و سلم: أي العمل أحب إلى الله؟ قال: «الصلاة على وقتها»، قلتُ: ثم أي؟ قال: «ثم بر الوالدين» [رواه البخاري].

অর্থ, আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, “সময় মত সালাত আদায় করা” তারপর আমি বললাম, তারপর কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, “তারপর মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা” । [বর্ণনায় বুখারি] [11]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে দেন, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদত সালাতের পর আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় আমল- মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে «ثم» শব্দ যা ধারাবাহিকতা বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে তা ব্যবহার করে কোন আমলের পর কোন আমল উত্তম তা বর্ণনা করে দিয়েছেন।

মাতা-পিতার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤﴾ [الاسراء: ٢٣،  ٢٤] 

“আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলবে না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন”। [সূরা ইসরা, আয়াত: ২৩, ২৪]

 

আল্লাহ রাব্বুল আলমীন আরও বলেন,

﴿أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ ﴾ [لقمان: ١٤] 

সুতরাং, আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই। [সূরা লোকমান, আয়াত:১৪]

অর্থাৎ আমরা তাকে বললাম, أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡك ‘আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর’ আয়াতের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, ‘আল্লাহর জন্য শুকরিয়া ঈমানের নেয়ামতের কারণে, আর মাতা-পিতার শুকরিয়া তার লালন-পালনের কারণে’।

আলেমগণ বলেন, আল্লাহ তা‘আলার পরে কৃতজ্ঞতা ও সদ্ব্যবহার  (ইহসান ও শুকর) ভালো কাজের সম্পৃক্ততা, আনুগত্য ও মান্যতা পাওয়ার সব চেয়ে উপযুক্ত মাখলুক হল, মাতা-পিতা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইবাদত, আনুগত্য ও শুকরিয়া আদায়ের সাথে যাদের সম্পৃক্ত করেন, তারা হলেন, মাতা-পিতা।

মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তাদের সাথে সম্মানের সাথে উত্তম কথার মাধ্যমে তাদের মুখোমুখি হওয়া; আর সেটি হবে তখনই যখন তা হবে সব রকমের দোষ-ত্রুটিমুক্ত।

وقد قال صلى الله عليه و سلم: «رغم أنفه، ثم رغم أنفه، ثم رغم أنفه!! قيل: من يا رسول الله؟ قال: من أدرك أبويه عند الكبر أحدهما أو كليهما، فلم يدخل الجنة» [رواه مسلم].

আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “লোকটির নাক কর্দমাক্ত হোক, আবারো লোকটির নাক কর্দমাক্ত হোক, আবারো লোকটির নাক কর্দমাক্ত হোক, জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল লোকটি কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি তার বৃদ্ধ মাতা-পিতা অথবা তাদের যে কোনো একজনকে জীবিত পেল অথচ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না” [12]

সৌভাগ্যবান ব্যক্তি: যে মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে, যাতে তাদের মারা যাওয়ার কারণে এ সুযোগ তাদের হাতছাড়া না হয়। অন্যথায় তাদের মারা যাওয়ার কারণে, সে পরবর্তীতে লজ্জিত হবে। আর হতভাগা লোক: যে তার মাতা-পিতার নাফরমানি করে। বিশেষ করে, যার নিকট মাতা-পিতার প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ পৌঁছেছে।

মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয় হচ্ছে: তাদের কোনো প্রকার ধমক না দেওয়া, বরং তাদেরকে সব সময় সুন্দর কথা ও বিনম্র ব্যবহার দ্বারা সম্বোধন করবে। যেমন তাদের এ বলে ডাকবে, হে আমার পিতা, হে আমার মাতা। পিতা-মাতাকে তাদের নাম ধরে বা তাদের উপনাম ধরে ডাকবে না। তাদের প্রতি দয়া পরবশ হবে, দাস যেমন তার মনিবের সামনে নমনীয় থাকে তেমনি মাতা-পিতার সামনে তার সন্তানরাও নমনীয় থাকবে। তাদের প্রতি রহমতের দো‘আ করবে। তাদের জন্য দো‘আ করবে। মাতা-পিতা সন্তানের প্রতি যেভাবে দয়া করেছিল, তারা তাদের মাতা-পিতার প্রতি অনুরূপ দয়া করবে। ছোট বেলা মাতা-পিতা তাদের প্রতি যেভাবে দয়া করেছে তারা তাদের মাতা-পিতার প্রতি অনুরূপ দয়া করবে।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার ও তাদের আনুগত্য করা যেন কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণ না হয় এবং আল্লাহর ফরযসমূহ ছুটে যাওয়ার কারণ না হয়।

[চলবে]

[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৯০ ; মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৩৬২১। দুর্বল সনদে। তবে তিরমিযী এর অপর বর্ণনা,

«وَأَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ، وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُ إِلَى حُبِّكَ »

হাদীস নং ৩২৩৫; এর পক্ষে সমর্থক হাদীস হিসেবে বিবেচিত। যা একটি সহীহ হাদীস। [সম্পাদক]

[2] আবু ইয়া‘লা, ১২/২২৯; হাদীস নং ৬৮৩৯। মুনযিরী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

[3] এর তাখরীজ গত হাদীসের আলোচনায় এসেছে।

[4] বুখারী, ৪৮৩০; মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৪। [সম্পাদক]

[5] হাদীসটি এ শব্দে কোথাও পাই নি। [সম্পাদক]

[6] প্রাগুক্ত হাদীস।

[7] মুসলিম, হাদীস নং ৪৯।

[8] বুখারী, হাদীস নং ৫২৭।

[9] মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭৭।

[10] তিরমিযী, হাদীস নং ৪৫৩।

[11] বুখারী, হাদীস নং ৫২৭।

[12] মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫১।


ইসলামে ‘তাকওয়া’র স্বরূপ ও সমাজ জীবনে এর প্রভাব~ পর্ব~ ১

$
0
0

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

লিখেছেনঃ ড. মোঃ ছানাউল্লাহ    ।    ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবনে গাফফার

পর্ব~ ১ | পর্ব~ ২ | পর্ব~ ৩

172

 একজন মুসলিমের সামাজিক জীবনমানের অপরিহার্য ও অনিবার্য গুণ হল তাকওয়া। এর অর্থ বেঁচে থাকা, সাবধানতা অবলম্বন করা ও ভয় করা। সাধারণত যে বোধ মানবীয় সহজাত প্রবৃত্তি (নফস) মানুষকে অন্যায়, অশ্লীল, খারাপ ও অনিষ্টিকর কথা, কাজ ও চিন্তা থেকে বিরত রাখে মুলত সেটাই হচ্ছে তাকওয়া। আর এ তাকওয়াই সমাজে মানবতাবোধ, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ নামে পরিচিত। উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, সাদা-কালো নির্বিশেষে যে কোন মুসলিম নারী পুরুষ তাকওয়া অবলম্বন করে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক তথা সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করেন, তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে মু্ত্তাকী নামে পরিচিত। মানুষের জীবনে সাফল্য অর্জনে তাকওয়ার প্রভাব অনবদ্য ও অপরিমেয়। বিশেষ করে সকল মুসলিমের সমাজ জীবনে তাকওয়ার সুদূর প্রসারী প্রভাব অনস্বীকার্য। সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে তাকওয়া তথা সুস্থ মানসিকতা, মননশীলতা ও আল্লাহ ভীতির কোন বিকল্প হয় না। বর্তমান প্রবন্ধে উপর্যু্ক্ত দিকগুলোর পযালোচনা কুরআন, সুন্নাহ ও যুক্তির আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

 

তাকওয়া পরিচিতি

‘তাকওয়া’ শব্দটি ইসলামের একটি মৌলিক পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হল- ভালভাবে বেঁচে থাকা , পরহেয করা, রক্ষা করা, দূরে থাকা, সচেতনতা, জবাবদিহীতা, সচ্ছতা, বিরত থাকা ও সাবধান থাকা। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন, তাকে বলা হয় ‘মুত্তাকী’ আল্লামা যামাখশারী [৫৬৭-৫৩৮ হি.] বলেন, শাব্দিকভাবে ‘মুত্তাকী’ কর্তাবাচক বিশেষ্য, যা আরবদের কথা ‘ওয়াক্বাহু ফাত্তাক্বা’- ‘সে তাকে বাঁচিয়েছে, ফলে সে বেঁচে গেছে’ থেকে এসেছে।

 

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর [2]।”

 

অন্যত্র বলা হয়েছে,

“আল্লাহুর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউ নেই [3]।”

 

যে ঘোড়া কাঁদা ও ধুলোবালি থেকে নিজ ক্ষুর বাঁচিয়ে রাখে তাকে ‘ফারাস ওয়াক্বি’ বলা হয়। কারণ কষ্টদায়ক সামান্য কিছুর স্পর্শ থেকেও সে তার ক্ষুরকে রক্ষা করে [4]।”

 

আভিধানিকভাবে তাকওয়া শব্দের আর এক অর্থ হল- ভয়, সতর্কতা ও জবাবদিহিতা। ‘তাকওয়াল্লাহ’ মানে ‘আল্লাহ্‌র বিষয়ে সতর্ক হওয়া’ [5] তাঁর (আল্লাহর) যাবতীয় নির্দেশসমূহ প্রতিপালন ও সকল নিষেধাধ্জ্ঞা থেকে দূরে থাকা, বেঁচে থাকার মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করা [6] এই দ্বিতীয় অর্থে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার রয়েছে।

 

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

“হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর।[7]

 

নূহ (আ) , হূদ (আ), সালেহ (আ), লুত (আ) এবং শুআইব (আ) নিজ নিজ জাতিকে বলেছিলেন,

“তোমরা কি আল্লাহ্‌কে ভয় করবে না?”[8] তাঁরা এও বলেছিলেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।” [9]

 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তাকওয়া শব্দটি আভিধানিকভাবে দু’টি অর্থ ধারণ করে। এক, আত্মরক্ষা, বেঁচে থাকা, বিরত থাকা, মুক্ত থাকা, রক্ষা করা ও পরহেয করা। দুই, ভয়-ভীতি তথা কোন প্রকার অনিষ্ট ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা মিশ্রিত ভয়  [10]। ইসলামী শরী’আতের পরিভাষায় তাকওয়া অর্থ হল, আল্লাহ্‌ তা’আলার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে দূরে থেকে ইসলাম নির্ধারিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। অথবা, যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহ্‌র শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাকওয়া। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে প্রাপ্ত করুণা, ভালবাসা, দয়া ও অনুগ্রহ হারানোর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত থাকার নাম তাকওয়া  [11]

 

 

মুত্তাকীর পারিভাষিক সংজ্ঞায় কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (র) [মৃ. ৬৮৫ হি] বলেন,

“শরীয়তের পরিভাষায় মুত্তাকী বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যিনি নিজেকে এমন সব কিছু থেকে রক্ষা করেন, বাঁচিয়ে রাখেন, যা তাকে পরকালে ক্ষতির সম্মুখিন করবে”  [12]

 

আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইব্‌ন মাসউদ আল বগবী (র) [মৃ. ৫১০ হি] বলেন,

“মুত্তাকী ঐ ব্যক্তি, যিনি শির্‌ক, কবীরা গুনাহ ও সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। মুত্তাকী শব্দটি আল ইত্তিকাউ থেকে নির্গত। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দু‘বস্তুর মাঝখানের অন্তরাল-দেয়াল। যেমন এক হাদীসে আছে, সাহাবায়ে কিরামের উক্তি, “যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আড়াল করে থাকতাম। অর্থাৎ যখন যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যেত তখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আমাদের ও শুক্রদের মাঝখানে অন্তরায় করে রাখতাম। সুতরাং মুত্তাকী আল্লাহর আদেশ পালন এবং তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকাকে তার এবং আল্লাহর শাস্তির মাঝখানে অন্তরায় তৈরী করে বলেই তাকে মুত্তাকী বলা হয়।[13]

 

আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশারী (রা) [মৃত. ৫৩৮ হি] বলেন,

“ ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় মুত্তাকী হল ঐ ব্যক্তি, যে নিজ সত্তাকে রক্ষা করে এমন বিষয় থেকে, যার জন্য সে শাস্তির উপযোগী হয়ে যায়; সেটি করণীয় হোক বা বর্জনীয়।[14]

 

 

পবিত্র কুরআনে তাকওয়া

পবিত্র কুরআনের পনের জায়গায় তাকওয়া শব্দটির উল্লেখ রয়েছে।[15]” ‘আল-মুত্তাকুন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ছয় জায়গায় এবং ‘আল-মুত্তাক্বীন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ৪৩ জায়গায়  [16]। এছাড়া ‘আলবিকায়াতু’ ও ‘আল-ইত্তিকাউ’ শব্দমূল থেকে গঠিত বিশেষ্য-বিশেষণ বা ক্রিয়ারূপে ব্যবহার রয়েছে প্রায় দু’শ জায়গায়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত করণীয় বা বর্জনীয় প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনার সাথে ‘তাকওয়া’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। ‘তাকওয়া’র আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের সাথে মিল রেখে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ এর কিছু নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

 

তাকওয়া অর্থ ঈমান। যেমন, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

“কুরআন মাজীদ মুত্তাকীদের তথা মু’মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক [17]

 

অন্যত্র বলা হয়েছে,

“আর তিনি তাদের জন্য তাকওয়ার বাণী তথা তাওহীদের বাণী অর্থাৎ ঈমান অবধারিত করে দিলেন [18]”।

 

আরো বলা হয়েছে,

“তারাতো ঐ ব্যক্তি যাদের অন্তরসমুহকে আল্লাহ তা‘আলা তাকওয়ার তথা ঈমানের জন্য নির্বাচন করেছেন।[19]” “ফিরআউন সম্প্রদায়, তারা কি তাকওয়া অবলম্বন তথা ঈমান গ্রহণ করবে না? [20]

 

 

তাকওয়া অর্থ তাওবা-অনুশোচনা। যেমন, “আর যদি গ্রামের অধিবাসীরা ঈমান গ্রহণ করে ও তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ তওবা করে তবে তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।[21]” তাকওয়া অর্থ আনুগত্য। যেমন, “তোমরা ভীত হও যে, আমি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই আনুগত্য কর [22]” অতএব, তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া আর কারও আনুগত্য করছ? [23]” “আর তোমরা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর অর্থাৎ তাঁর অবাধ্য হয়ো না।[24]

 

 

তাকওয়া অর্থ নিষ্ঠা-আন্তরিকতা বা একাগ্রতা। যেমন,

“ আর নিশ্চয়ই এটি মনের তাকওয়া অর্থাৎ মনের একাগ্রতা।[25]

 

তাকওয়া হচ্ছে মূল্যবোধ, মানসিক শুদ্ধতা ও দৃঢ়তা। এটি যে কোন ধরনের পদঙ্খলন থেকে মানুষকে রক্ষা করে; সকল মন্দ ও অশ্লীল কথা, কাজ ও পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে রাখে; ‘খাহেশাতে নাফসানী’ তথা প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি বা অভিলাষ ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করা থেকে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করে। জনমানব শূন্য নির্জন স্থানে বা দুর্নীতি করার অসংখ্য সহজ পথ উন্মুক্ত থাকার পরও যে শক্তি মানুষকে তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখে তা-ই তাকওয়া। যাদের মনে তাকওয়া রয়েছে, তাদের ওপর শয়তান তথা দুষ্টচক্রের আক্রমণ ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জগ্রত হয়ে উঠে। [26]

 

 

তাকওয়া মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার শক্তি জাগ্রত করে। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,

“হে বিশ্বাসীগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাকওয়া অর্জন কর, তবে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ পার্থক্য করার শক্তি দান করবেন।…[27].

 

”অর্থাৎ তাকওয়ার ফলে মানুষের বিবেক বুদ্ধি প্রখর হয় এবং সুষ্ঠ বিচার-বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়। তাই সে সত্য-মিথ্যা ন্যায়-অন্যায় ও ভাল-মন্দ চিনতে এবং তা অনুধাবন করতে ভূল করে না। তার হাতে তাকওয়ার আলোকবর্তিকা থাকার ফলে জীবন পথের মন্দ দিকসমূহ সে স্পষ্টত দেখতে পায়। বিবেচনার শক্তির প্রখরতা ও বুদ্ধিদীপ্ততা তার মধ্যে এমনভাবে কাজ করে যে, তার কাছে তখন ইহ-পারলৌকিক যে কোন বিষয়ের কোনটি সঠিক আর কোনটি ভূল তা স্পষ্টতই ধরা পরে। ফলে সে কোন সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ইতস্তত, দুর্বলতা ও হীনমন্যতা ছাড়াই দিবালোকের মত সুস্পষ্ট ও সঠিক পথে চলতে সক্ষম হয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর-তাকওয়া অর্জন কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুন প্রতিদান তোমাদেরকে দিবেন এবং তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি-আলো, যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে।[28]

 

অর্থাৎ তাকওয়া জীবনকে এমন এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করে, যা সকল প্রকার ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা, প্ররোচনা-প্রতারণা, প্রলভন-পদস্খলন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর সমুদ্রে কম্পাস বা দিক-দর্শন যন্ত্র যেমন সমুদ্রভিযাত্রীকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে, সমস্যা-সংকুল জীবন পথে তাকওয়াও তেমনি মানুষকে নির্ভূল পথের সন্ধান দেয়।

 

 

তাকওয়া একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতির পরিচায়ক একটি শক্তি। ভালকে গ্রহণ করার তীব্র আগ্রহ এবং মন্দকে পরিহার করে চলার দৃঢ় মনোবলই হচ্ছে তাকওয়া। মানুষের সকল সৎগুণের সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে তাকওয়া। এ ক্ষেত্রে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের বর্ণনা সম্বলিত নিম্নোক্ত আয়াতগুলো প্রণিধানযোগ্য। যেমন, “এ গ্রন্থ (আল কুরআন) পথ প্রদর্শণকারী পরহেযগারদের জন্য। পরহেযগার হচ্ছে তারা, যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে; এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, এবং যা কিছু আপনার পূর্ববর্তীদের ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারা আখিরাতের প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে।[29]

এখানে তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে সৎকাজ সম্পাদন করা। কারণ, অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

“ পবিত্র কুরআন সৎকর্মশীলগণের জন্য পথপ্রদর্শক ও অনুগ্রহ স্বরূপ”।  [30]  আর সৎকর্মশীলগণের পরিচয়ে তা-ই বলা হয়েছে, যা মুত্তাকীগণের পরিচয়ে বিধৃত হলো।

 

অন্যত্র বলা হয়েছে,

“শুধমাত্র পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে, যে ঈমান আনবে আল্লাহ্‌র ওপর, কিয়ামত দিবস, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও নবী-রাসূলগণের ওপর; আর তাঁরই ভালবাসার মানসে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির-পথিক, ভিক্ষুক ও সর্ব প্রকার দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তির জন্য সম্পদ ব্যয় করবে; আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে; আর যারা তাদের অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে যখন তারা অঙ্গীকার করে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী। আর তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই তাকওয়া অবলম্বনকারী-মৃত্তাকী।[31]

 

‘তারাই হল সত্যাশ্রয়ী’ অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “আয়াতে বর্ণিত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন কর্মকান্ডসমূহ যখন তারা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে তখনই তারা মুত্তাকীরূপে পরিগণিত হবে।[32]

“তারাই তো সেসব লোক যারা সত্য প্রমাণিত করেছে, আর তারাই হল মুত্তাকী” আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান (র) বলেছেন, ‘সত্যবাদীতা দিয়ে এখানে কথাবার্তায় সত্যবাদীতা বোঝানো হয়ে থাকতে পারে; যদি তা-ই হয় তবে তা হবে মিথ্যার বিপরীত। তখন এর অর্থ হবে তাদের কথাবার্তা তাদের তৃদয়ে যে ঈমান ও কল্যাণ রয়েছে তার অনুরূপ। সুতরাং তারা যদি কোন বিষয়ে সংবাদ দেয় তখন তা হয় এমন সত্য সংবাদ যার মধ্যে কোন মিথ্যা মিশ্রিত হয় না।[33]

বস্তুত, “যারা সত্য নিয়ে এসেছে এবং যারা সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করেছে তারাইতো মুত্তাকী  [34]

 

সুতরাং জেনে-বুঝে কোন অন্যায়তো সে করেই না; বরং সঙ্গদোষ বা পরিবেশ-পরিস্থিতির শিকার হয়ে কোন অন্যায়, অনৈতিক বা পাপের কাজে প্রবৃত্ত হলে অথবা যে কোন ধরনের ভূল করলে মনে পড়ার সাথে সাথে সে নিজেকে সুধরে ফেলে[35]। কোন কুসংস্কার বা গর্হিত কাজ যারা করে না তারই মুত্তাকী।

 

“ঘরের পিছন দিক থেকে প্রবেশের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে পিছন দিক থেকে প্রবেশের মত কুসংস্কার বর্জন করে ঘরের দরজা দিয়ে-সামনের দিক থেকে প্রবেশ করা।[36]” কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (র) বলেন, ‘কল্যানের অধিকারী সে ব্যক্তি, যে সকল হারাম ও শাহ্ওয়াত-লালসা থেকে বেঁচে থাকে।[37]

 

যুদ্ধ চলাকালীন কঠিন অবস্থায় ধৈর্যধারণের সাথে তাকওয়ার সংযোগ ঘটলে বিজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। “ আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না।[38] এ আয়াতসমূহে মানুষের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং এগুলো তখনই মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, যখন তারা এগুলো জীবনের বাঁকে বাঁকে মেনে চলে ও বাস্তবায়ন করে।

আল্লাহ্‌ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,

“ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক।[39] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান, ইব্‌নু মাসঊদ, রবী, কাতাদাহ (রা) ও হাসান বসরী (র) বলেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি-যথাযথ ভয়’ হল প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ রাখা-কখনও কিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অকৃতজ্ঞ না হওয়া। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি’ এর অর্থ হল, আল্লাহর সকল অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি বিধানের কাজে কোন ব্যক্তির ভর্ৎসনা বা নিন্দা তাকে কুন্ঠিত করে না। সে ন্যায়-নীতি অবলম্বন করে সকল কাজ সামাধা করে; হোক সে কাজ তার নিজের অথবা তার সন্তানের অথবা তার পিতার বিরুদ্ধে।[40]” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কাযী নাসির উদ্দীন বায়যাবী (র) বলেন, “এখানে স্পষ্টত বা প্রচ্ছন্নভাবে প্রমাণ রয়েছে যে, এটি পূর্ণাঙ্গ মানবীয় গুনাবলী সম্বলিত একটি আয়াত। এখানে বর্ণিত সমুদয় বিষয় এর শাখা-প্রশাখাসহ মুলত তিন ভাগে বিভক্ত। এক. মানুষের আকিদা-বিশ্বাসের বিশুদ্ধতার বিবরণ, দুই. সুন্দর আচার-আচরণ এবং তিন. ব্যক্তি-মানসের কুদৃষ্টি-কালচার। প্রথমটির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে আল্লাহর বাণী মান আমানা থেকে ওয়ান্‌নাবিয়্যীন’ পর্যন্ত অংশে, এবং তৃতীয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ‘ওয়া আকামাস সালাতা’ থেকে শেষ পর্যন্ত অংশ দিয়ে। এ কারনেই আয়াতে বর্ণিত সমুদয় গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে তার সুদৃঢ় ঈমান ও ই’তিকাদের ভিত্তিতে সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাকে মুত্তাকী বল হয়েছে তার সুন্দর ব্যবহার ও যথাযথ লেন-দেনের ভিত্তিতে।

আর এ জন্যই মহানবী (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এ আয়াতের উপর আমল করল সে অবশ্যই তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।[41]

তাকওয়ার দাবী হচ্ছে বেশি বেশি ভাল কাজ করা ও আল্লাহর ইবাদত করা। কল্যাণমূলক কাজে দ্রুত এগিয়ে আসা; চাই তা জাগতিক হোক বা পারলৌকিক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন;

“ আর তোমাদের প্রভূর ক্ষমার প্রতি এবং জান্নাতের প্রতি দ্রুত এগিয়ে যাও, যার পরিধি হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। (মুত্তাকী হচ্ছে তারা) যারা সচ্ছলতা ও অভাবের সময় (মানুষের প্রয়োজনে সম্পদ) ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগ-ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (মুত্তাকী তারাও) যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর যুলম করে ফেললে (সাথে সাথে) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ্ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? আর তারা জেনে-শুনে নিজেদের (ভূল) কৃতকর্মসমূহ বারংবার করতে থাকে না।[42]

 

“তারা (আহলে কিতাবগণ) সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবগনের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যারা অবিচলভাবে আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদায় রত থাকে। তারা আল্লাহ্‌র প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়: অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল। তারা যেসব সৎকাজ করবে, কোন অবস্থাতেই সেগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শণ করা হবে না. আর আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের বিষয়ে অবগত।[43]

এ আয়াতসমূহে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ই আমাদের বাস্তব জীবনে অবশ্য করণীয় ও পালনীয়। সুতরাং একজন মানুষ যত বেশী ভাল কাজ করবে তার মধ্যে ততবেশী তাকওয়া বদ্ধমূল হবে।

 

 

মুত্তাকীগণ অনুসন্ধিৎসু, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী হয়। দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবর্তন-বিবর্তন তাকে স্পর্শ করে, তাকে নাড়া দেয়, ঘটনার মূল কারণ সন্ধানে ব্যাপৃত করে। ফলে সে বিভিন্ন সূত্র আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখতে সক্ষম হয় [44]

চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র তথা সৌর জগত এবং পৃথিবীর জীব-জন্তু, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা, খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর, রাত-দিনের পরিবর্তন ইত্যাদি মুত্তাকীদের কাছে গবেষণার উপাদান হয় এবং গবেষণার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও এর থেকে উপকৃত হওয়ার বিষয়ও তাদের সাথে সম্পর্কিত, যারা তাকওযার অধিকারী [45]

বৃষ্টির পানি দিয়ে জমিতে উৎপন্ন ফল-ফসল ও উদ্ভিদের কথা চিন্তা করে এর উৎকর্ষ সাধন ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও মুত্তাকীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে [46]

 

বদান্যতা প্রদর্শন হচ্ছে তাকওয়া। বিয়ে করার সময় মোহর ধার্য করে বা পূর্ণমোহর প্রদান করে যদি বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং যুক্তিসঙ্গত কোন কারণে সে বিয়ে বহাল রাখা সম্ভব না হয় তাহলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী (স্ত্রী) তার জন্য নির্ধারিত মোহরের অর্ধাংশের অধিকারী হবে। বাকী অর্ধেক পুরুষকে (স্বামীকে)ফিরিয়ে দিবে। তবে নারী সম্পূর্ণ মোহর ফিরিয়ে দিলে বা পুরুষ সম্পূর্ণ মোহর আদায় করে দিলে তা হবে বদান্যতার ব্যাপার। আর এ বদান্যতা-উদারতা পুরুষের পক্ষ থেকে হোক এটিই তাকওয়া  [47]

এমনিভাবে নিয়ম মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে খোর –পোষ দেয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যাক্তির ওপর কর্তব্য  [48] বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং বড় মনের অধিকারী হওয়া, উদারতা প্রদর্শন করা ও কর্তব্য কাজ যথাযথ সম্পাদন করা হল তাকওয়ার দাবী।

 

 

পৃথিবীতে বসবাসরত অসংখ্য মানুষের মধ্যে সবাই একত্ববাদের বিশ্বাসী নয়। আল্লাহ্‌র একত্ববাদে বিশ্বাসী মুসলিম জাতি অন্যান্য কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী জাতি-গোষ্ঠীর সাথে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্পর্ক রক্ষা করা ও লেনদেন করাতে ইসলামে কোন বাধা নেই। কারণ, ইসলামে সংকীর্ণতা বা প্রতিবন্ধকতা নেই।[49]

মুসলিম-অমুসলিম যে কোন ব্যক্তি, জাতি-গোষ্ঠি বা রাষ্ট্রের সাথে কৃত চুক্তি বা অঙ্গীকার পূর্ণ করা এবং তাতে আন্তরিক হওয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য। এরুপ ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ্‌র ভালবাসার পাত্র বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।[50]

তবে সম্পর্ক রক্ষা ও লেন-দেনের আড়ালে যেন মুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার, ধর্মীয় বিশ্বাস হারিয়ে না যায় এবং অমুসলিমদের কোন চক্রান্তে না পড়ে সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে চলার জন্য পবিত্র কুরআনে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে,

“ যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে  [51]

 

 

স্বাবলম্বন বা আত্মনির্ভরতা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ তাকওয়া। আয়-উপার্জন, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে স্বাবলম্বী হয়ে চলার নাম তাকওয়া। সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়া, স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হওয়া, জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে কারো গলগ্রহ হওয়া, হাত পাতা, ভিক্ষে করা ও পরনির্ভরশীল হওয়া তাকওয়া হতে পারে না। কেবল হাদীয়া-তোহ্‌ফার ওপর নির্ভর করে যারা জীবন-যাপন করে, তারা মুত্তাকী হতে পারে না। আত্মনির্ভরশীল জীবন গঠন এবং ব্যাক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর বোঝা হয়ে জীবন-যাপন থেকে বিরত থাকার মনোবৃত্তিকে তাকওয়া বলা হয়েছে।

 

 

আল্লাহ্ তা’আলা হজ্জের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন,

“আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। আর হে বুদ্ধিমানগণ! তোমরা আমাকেই ভয় করতে থাকো [52]

এখানে তাকওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে, “এমন সহায়-সম্বল অবলম্বন যা থাকার ফলে অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না [53]

এ আয়াতের শানে নুযুল ও ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “ এ আয়াতটি ইয়ামানের অধিবাসীদের প্রতি নাযিল হয়েছে। তারা হজ্জ করত এমন অবস্থায় যে, প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী কিছুই তারা সঙ্গে নিয়ে যেত না এবং বলত, আমরা আল্লাহর নির্ভরশীল। ফলে তারা স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হয়ে থাকত।[54]

কাজেই সর্বপ্রকার পরাধীনতা তথা জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থ-সামর্থ, শক্তি-সাহস, কৃষ্টি-কালচার,সংস্কতি-সভ্যতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্তি অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা মুত্তাকী হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন।

মুত্তাকী ব্যক্তিকে কতগুলো বিষয় বর্জন করে চলতে হয়। মানুষের মধ্যে দুটি পরস্পর বিরোধী প্রবনতা বা শক্তি পাশাপাশি সাংঘর্ষিক অবস্থানে বিদ্যমান। তা হল, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, আলো-অন্ধকার ইত্যাদি। এ পরস্পর বিরোধী দুই প্রবণতার মধ্য থেকে ভাল ও কল্যাণময় প্রবণতা বেছে নিয়ে সেটাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলে যত কঠিন পরীক্ষা ও অবস্থারই মুকাবিলার সম্মুখীন হোক না কেন, তা ধৈর্য ও সাহসের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া এটাই প্রকৃত তাকওয়া। অর্থাৎ মানবীয় সহাজাত সুকুমার বৃত্তি বা আকাঙ্খা যা মানুষকে কুপ্রবৃত্তি তথা মন্দ কথা, খারাপ কাজ ও দুষ্ট চিন্তা থেকে বিরত রাখে, তাকেও তাকওয়া বলা হয়। যারা তাকওয়া অবলম্বনে জীবন যাপন করেন এবং মুত্তাকীদের নেতা বা আদর্শ যারা হতে চান, তারা যেসব বিষয় বর্জন করে জীবন যাপন করেন, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন,

“ আর যখন তারা (সম্পদ) ব্যয় করে তখন অনর্থক ব্যয় করে না, আবার কার্পণ্যও করে না; বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে (ব্যয় করে)। [55]

 


[2]. আল কুরআন ২:২৪।

[3]. আল কুরআন, ১৩:৩৪।

[4]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইব্‌ন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশ্‌শাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, মিশর, মাকতাবা মিশর, তা.বি, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।

[5]. fear is of many kinds : (1) the abject fear of the coward; (2) the fear of a child or an inexperienced person in the face of an unknoun danger; (3) the fear of a resonable man who wishes to protect. (4) the reverence which is akin to love. For it fears to doanything which is no pleasing to the object of love. The first is third is a many precaution against ebil as long as it is unconquered; and the fourth is the seed-bed of ighteousness. Those mature in faith cultivate the fourth : at earlier stages, the third or the second may be necessary; rhey are fear. But not the fear of Allah. The first is a feeling of which anyone should be ashamed. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 247.

[6]. ড. ইবরাহীম মাদকূর, আল-মুজাম আল ওয়াসীত, দেওবন্দ, কুতুবখানা হুসাইনিয়াহ, তা.বি.,পৃ. ১০৫২।

[7] . আল-কুরআন. ২২:০১।

[8]. আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।

[9] . আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।

[10]. Taqwa, and the verbs and nouns connected with the root, signify : (1) the fear of Allah, which, according of wisdom: (2) rwstraingt, or guarding on’s tongue, hand and heart from evil: (3) hence righteousness, piety, good conduct. All these ideas are imtlied : in the translation, only one or other of these ideas can be indicated, according to the context. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 26.

[11]. সম্পাদনা পরিষদ, ইসলমী বিশ্বকোষ, ঢাকা, ইফাবা, ১৯৯২, ১২শ খণ্ড, পৃ. ১০৭।

[12]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬।

[13]. আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগভী (মৃ. ৫১০ হি.), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, বৈরুত, দার আল ফিক্‌র, ১৯৮৫, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।

[14]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইবন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশশাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।

[15]. যেমন, আল-কুরআন, ২:১৯৭, ২৩৭, ৫: ২.৮, ৭: ২৬. ৯: ১০৮, ২০: ১৩২, ২২: ৩২, ৩৭, ৪৮:২৬, ৪৯: ৩, ৫৮: ৯, ৭৪: ৫৬, ৯৬: ১২; মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, বৈরুত, দার আল মারিফাহ্ ১ম মুদ্রণ ১৪২৩ হি./২০০২, পৃ. ৩৭৯।

[16]. মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, প্রাগুক্ত,পৃ.৮৪৫-৮৪৬।

[17]. আল কুরআন, ২:২; আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)সহ অন্যান্য অনেক সাহাবা (রা) বেলন, তারা হলেন ঈমানদার ব্যক্তিগণ। আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্‌র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭।

[18] আল-কুরআন. ৪৮: ২৬।

[19]. আল-কুরআন. ৪৯:০৩।

[20]. আল-কুরআন. ২৬:১১।

[21]. আল-কুরআন. ৭:৯৬।

[22].. আল-কুরআন. ১৬:০২।

[23]. আল-কুরআন. ১৬:২৬।

[24]. আল-কুরআন. ২৩:৫২।

[25]. আল-কুরআন. ২২:৩২।

[26]. আল-কুরআন. ৭ : ২০১-২০২।

[27]. আল-কুরআন. ৮ : ২৯।

[28]. আল-কুরআন. ৫৭ : ২৮।

[29]. আল-কুরআন. ২ : ২-৪।

[30]. আল-কুরআন. ৩১ : ১-৫।

[31]. আল-কুরআন. ২ : ১৭৭।

[32].. শায়খ আবদুর রহমান ইবন হাসান, ফাতহুল মাজীদ, রিয়াদ, আল রিয়াসাহ আল ‘আম্মাহ, ১৯৮৩, পৃ. ৩৩৩।

[33]. মুহাম্মদ ইব্‌ন ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, কায়রো, দারুল কিতাব আল-ইসলামী, ৩য় মুদ্রণ, ১৪১৩ হি, /১৯৯২, খণ্ড ২ , পৃ. ৮।

[34]. আল-কুরআন. ৩৯: ৩৩।

[35]. আল-কুরআন. ৭ : ২২১।

[36]. আল-কুরআন. ২ : ১৮৯।

[37]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৩।

[38]. আল-কুরআন. ৩ : ১২০।

[39]. আল-কুরআন. ৩: ১০২।

[40]. মুহাম্মদ ইব্নু ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, ৩য় খণ্ড, পৃ.১৭।

[41]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৫।

[42]. আল কুরআন, ৩ : ১৩৩-১৩৫।

[43]. আল কুরআন, ৩ : ১১৩-১১৫।

[44]. আল কুরআন, ১০ : ৬।

[45]. আল কুরআন, ১০ :৬।

[46]. আল কুরআন, ১০ : ৩১।

[47]. আল কুরআন, ২ : ২৩৭।

[48]. আল কুরআন, ২ : ২৪১।

[49]. আল কুরআন, ২২ : ৭৮।

[50]. আল কুরআন, ৩ : ৭৬।

[51]. আল কুরআন, ৩ : ২৮।

[52]. আল কুরআন, ২ : ১৯৭।

[53]. জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী, তাফসীর জালালাইন, সিঙ্গাপুর : এদারা নশর ওয়া ইশা’আতে ইসলামিয়্যাহ্, তা.বি., পৃ . ২৯।

[54]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৭।

[55]. আল কুরআন, ২৫ : ৬৭-৬৮, ৭২-৭৪।

 

 

ইউনুস عليه السلام এর ঘটনা

$
0
0

Post

লেখকঃ শেইখ ড. সালেহ আলে তালেব | অনুবাদ : আলী হাসান তৈয়ব |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

بسم الله الرحمن الرحيم

পূর্ববর্তী নবী ‘আলাইহিমুস সালামগণের ঘটনাবলিতে রয়েছে শিক্ষা ও উপদেশ। তারা আমাদের আলোকবর্তিকা ও আলোর মিছিল। আল্লাহ বলেন,

﴿ لَقَدۡ كَانَ فِي قَصَصِهِمۡ عِبۡرَةٞ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِۗ مَا كَانَ حَدِيثٗا يُفۡتَرَىٰ وَلَٰكِن تَصۡدِيقَ ٱلَّذِي بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيلَ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١١١ ﴾ [يوسف: ١١١]

‘তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, এটা কোনো বানানো গল্প নয়, বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর হিদায়াত ও রহমত ঐ কওমের জন্য যারা ঈমান আনে।’ {সূরা ইউসূফ, আয়াত : ১১১}

মক্কায় যখন ঈমানদারের সংখ্যা মুষ্টিমেয়, পথ যখন দুর্গম অথচ দীর্ঘ- মুসলিমরা যখন এর শেষের দেখা পাচ্ছিল না, তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এসব বৃত্তান্ত নাযিল হত। এসব বৃত্তান্ত তাদের পথের শেষ উন্মোচিত করত। গন্তব্যের শেষ রেখা উদ্ভাসিত করত। তাদের সঙ্গে পথ চলত এবং তাদের হাত ধরত। এসব ছিল রাসূল ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হৃদয় স্থির করার অভিপ্রায়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَكُلّٗا نَّقُصُّ عَلَيۡكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِۦ فُؤَادَكَۚ وَجَآءَكَ فِي هَٰذِهِ ٱلۡحَقُّ وَمَوۡعِظَةٞ وَذِكۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِينَ ١٢٠ ﴾ [هود: ١٢٠]

‘আর রাসূলদের এসব সংবাদ আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি যার দ্বারা আমরা তোমার মনকে স্থির করি আর এতে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ ও স্মরণ। {সূরা হূদ, আয়াত : ১২০}

আল্লাহ যেন তাঁর নবীকে বুঝাতে চান, আপনি দুর্গম পথে একা নন। আল্লাহর ভাষ্য যেমন বলছে,

﴿ فَٱصۡبِرۡ كَمَا صَبَرَ أُوْلُواْ ٱلۡعَزۡمِ مِنَ ٱلرُّسُلِ ٣٥ ﴾ [الاحقاف: ٣٥]

‘অতএব তুমি ধৈর্যধারণ কর, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল সুদৃঢ় সংকল্পের অধিকারী রাসূলগণ।’ {সূরা আল-আহকাফ, আয়াত : ৩৫}

আজ আমরা নবীদের মধ্যে একজনের ঘটনা শুনব, যে ঘটনা আমাদের নবীকে বলছিল- সাবধান তুমি যেন দাওয়াতের দায়িত্ব ও রেসালতের গুরুভার ফেলে যেও না। যেন বলছিল,

﴿ فَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ وَلَا تَكُن كَصَاحِبِ ٱلۡحُوتِ إِذۡ نَادَىٰ وَهُوَ مَكۡظُومٞ ٤٨ ﴾ [القلم: ٤٨]

‘অতএব তুমি তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্যধারণ কর। আর তুমি মাছওয়ালার মত হয়ো না, যখন সে দুঃখে কাতর হয়ে ডেকেছিল।’ {সূরা আল-কলম, আয়াত : ৪৮}

এ হলো ইউনুস ‘আলাইহিস সালামের ঘটনা। আল্লাহ তাকে মসুলের নাইনাওয়াবাসীর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ ও ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানান। তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নিজেদের কুফরী ও অবাধ্যতায় অটল থাকে। তাদের এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে ইউনুস ‘আলাইহিস সালাম রাগে-ক্ষোভে তাদের ছেড়ে চলে আসেন। তিনি তাদেরকে তিনদিন পর আযাব নাযিলের সতর্কবার্তা ঘোষণা করেন।

রাগত অবস্থায় ইউনুস ‘আলাইহিস সালাম তাদের ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন এ কথা ভেবে যে পৃথিবীর ব্যাপ্তি অনেক, গ্রামের সংখ্যা বহু ও জাতির ধরন বিভিন্ন। ফলে আল্লাহ একে সংকীর্ণ করবেন না। আর এরা যেহেতু দাওয়াতের অবাধ্যতায় অপরিবর্তিত, সেহেতু আল্লাহ হয়তো অন্য জাতিকে তাঁর প্রতি ঝুঁকে দেবেন। আর এটাই আল্লাহর বাণীর মর্ম :

﴿ وَذَا ٱلنُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَٰضِبٗا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقۡدِرَ عَلَيۡهِ ﴾ [الانبياء: ٨٧]

‘আর স্মরণ কর যুন-নূনের কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার ওপর সংকীর্ণ করব না।’ {সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭}

অর্থাৎ তার জন্য দুনিয়াকে সংকীর্ণ করব না। এদিকে ইউনুস ‘আলাইহিস সালামের উম্মত যখন দেখল নবী চলে গেছেন এবং তাদের ওপর আযাব অবতরণ অবধারিত, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরে তাওবা ও অনুশোচনা ঢেলে দিলেন। নবীর সঙ্গে কৃত আচরণের জন্য তারা অনুতপ্ত হলো। আল্লাহর প্রতি বিনত হলো এবং তাঁর সামনে বিগলিত হলো। এ ছিল এক বড় মুহূর্ত। ফলে নিজ শক্তি ও সামর্থ্য এবং দয়া ও করুণায় আল্লাহ তাদের পরিত্রাণ দিলেন। তাদের আযাব উঠিয়ে নিলেন যার কারণ ও অনুঘটক কেবল তাদের সঙ্গেই মিলে গিয়েছিল, তারা ছাড়া অন্য কারও ছিলো না।

যখনই কোনো উম্মত তাদের নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে অতঃপর তাদের ওপর আযাব নাযিল হয়েছে, তখন তারা ঈমান এনেছে আর সে ঈমান তাদের কাজে এসেছে এমনটি দৃশ্যমান হয় না, তবে ইউনুসের কাওম এর ব্যতিক্রম। আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইউনুসে বলেন,

﴿ فَلَوۡلَا كَانَتۡ قَرۡيَةٌ ءَامَنَتۡ فَنَفَعَهَآ إِيمَٰنُهَآ إِلَّا قَوۡمَ يُونُسَ لَمَّآ ءَامَنُواْ كَشَفۡنَا عَنۡهُمۡ عَذَابَ ٱلۡخِزۡيِ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَمَتَّعۡنَٰهُمۡ إِلَىٰ حِينٖ ٩٨ ﴾ [يونس: ٩٨]

‘সুতরাং কেন হল না এমন এক জনপদ, যে ঈমান এনেছে এবং তার ঈমান তার উপকারে এসেছে? তবে ইউনুসের কওম ছাড়া যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমরা তাদের থেকে দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনাকর আযাব সরিয়ে দিলাম এবং আমরা তাদেরকে একটি সময় পর্যন্ত ভোগ করতে দিলাম।’ {সূরা ইউনুস, আয়াত : ৯৮}

অসন্তুষ্টি ইউনুস ‘আলাইহিস সালামকে সমুদ্রতীরে নিয়ে উপনীত করল। সেখানে তিনি যাত্রী ও মাল বোঝাই এক জাহাজে চড়লেন। মাঝ দরিয়ায় ঢেউ ও বাতাস জাহাজটিকে ঝুঁকিয়ে ফেলল। সহযাত্রীরা এ থেকে ইঙ্গিত খুঁজে পেল যে যাত্রীদের মধ্যে কেউ একজন রয়েছে যার ওপর আল্লাহ অসন্তুষ্ট। তিনি কোনো অনুচিত কাজ করে এসেছেন। সেহেতু জাহাজটিকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে তাকে পানি ফেলে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অথবা ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে জাহাজের বোঝা হাল্কা করতে চাইল। এ লক্ষ্যে তারা যাত্রীদের নামে লটারি দিল। দেখা গেল ইউনুস ‘আলাইহিস সালামের নামই বেরিয়ে এলো। তাদের অন্তর তাঁকে ফেলে দিলে সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু বারবার লটারি দিলেও একের পর এক শুধু তার নামই বেরিয়ে আসতে থাকল। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَإِنَّ يُونُسَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ١٣٩ إِذۡ أَبَقَ إِلَى ٱلۡفُلۡكِ ٱلۡمَشۡحُونِ ١٤٠ ﴾ [الصافات: ١٣٩، ١٤٠]

‘আর নিশ্চয় ইউনুসও ছিল রাসূলদের একজন। যখন সে একটি বোঝাই নৌযানের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল।’ {সূরা আস-সাফফাত, আয়াত : ১২৯-১৪০}

আল্লাহ তাঁর বেরিয়ে যাওয়াকে পালানো বলেছেন যেভাবে গোলাম তার মুনিবকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। কারণ তিনি আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই জনপদ থেকে বেরিয়েছিলেন। পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন,

﴿ فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ ٱلۡمُدۡحَضِينَ ١٤١ ﴾ [الصافات: ١٤١]

‘অতঃপর সে লটারিতে অংশগ্রহণ করল এবং তাতে সে হেরে গেল।’ {সূরা আস-সাফফাত, আয়াত : ১৪১}

এরপর তাকে সাগরে নিক্ষেপ করা হলো। আল্লাহ বলেন,

﴿ فَٱلۡتَقَمَهُ ٱلۡحُوتُ وَهُوَ مُلِيمٞ ١٤٢ ﴾ [الصافات: ١٤٢]

‘তারপর বড় মাছ তাকে গিলে ফেলল। আর সে (নিজেকে) ধিক্কার দিচ্ছিল।’ {সূরা সাফফাত, আয়াত : ১৪২}

তিনি ধিক্কারযোগ্য হয়ে যান। কারণ তিনি সে মহান দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন আল্লাহ যা দিয়ে তাঁকে প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁকে অনুমতি না দিতেই তিনি স্বজাতিকে ত্যাগ করে যাচ্ছিলেন অসন্তুষ্টিবশত। মাছ তাঁকে আহার বানাল অথচ তাঁর এতটুকু গোশত খেল না কিংবা তার কোনো হাড্ডিতে ঠোকর দিল না। মেছের পেটে তিনি থাকলেন যতক্ষণ আল্লাহ তাঁকে রাখতে চাইলেন। মাছের অন্ধকার, সাগরের অন্ধকার ও রাতের অন্ধকার- অন্ধকারের পর অন্ধকারে তিনি নিজের রবকে কাতরভাবে ডাকলেন,

﴿ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٧ ﴾ [الانبياء: ٨٧]

‘আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম।’ {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭}

বর্ণিত হয়েছে যে ফেরেশতারা তাঁর এ কাতর প্রার্থনা শুনে বললেন, হে রব, এ দেখি অচেনা দেশ থেকে আসা চেনা মানুষের ক্ষীণ কণ্ঠ! আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করলেন। আল্লাহর ভাষায়,

﴿ فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ وَنَجَّيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡغَمِّۚ وَكَذَٰلِكَ نُ‍ۨجِي ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٨٨ ﴾ [الانبياء: ٨٨]

‘অতঃপর আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমরা মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।’ {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮৮}

এমন ঘনঘোর বিপদে ইউনুস ‘আলাইহিস সালাম মাছের পেটে আল্লাহর তাছবীহ পড়তে লাগলেন এবং দো‘আ করতে থাকলেন। মাছ তাঁকে সমুদ্রতীরে উগড়ে দিল। এমন স্থানে যেখানে কোনো উদ্ভিদ বা ছায়া ছিল না। তিনি তখন শারীরিকভাবে একেবারে দুর্বল। আল্লাহ বলেন,

﴿ ۞فَنَبَذۡنَٰهُ بِٱلۡعَرَآءِ وَهُوَ سَقِيمٞ ١٤٥ وَأَنۢبَتۡنَا عَلَيۡهِ شَجَرَةٗ مِّن يَقۡطِينٖ ١٤٦ ﴾ [الصافات: ١٤٥، ١٤٦]

‘অতঃপর আমরা তাকে তৃণলতাহীন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম এবং সে ছিল অসুস্থ। আর আমরা একটি ইয়াকতীন (লাউজাতীয়) গাছ তার ওপর উদগত করলাম।’ {সূরা আস-সাফফাত, আয়াত : ১৪৫-১৪৬}

এটি এমন গাছ যা তাকে বড় পাতা দিয়ে ছায়া দেয় এবং তার গায়ে মাছি বসতে বাধা দেয়। নবী ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে তিনি লাউ পছন্দ করতেন এবং বাসনের পাশ থেকে খুঁজে নিয়ে খেতেন।

অতঃপর আল্লাহ তাঁকে উম্মতের কাছে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। তারা তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনে। তাদের সংখ্যা ছিল অন্যূন এক লাখ। এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর নবীকে সম্মানিত করা ও শ্রেষ্ঠত্ব দানের নমুনা। আর আমাদের নবী মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন উম্মতের সংখ্যার দিক দিয়ে সব নবীর সেরা। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ نَبِيٌّ إِلَّا أُعْطِيَ مَا مِثْلهُ آمَنَ عَلَيْهِ البَشَرُ، وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَاهُ اللَّهُ إِلَيَّ، فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ القِيَامَةِ»

‘প্রত্যেক নবীকেই এমন কিছু (অলৌকিক নিদর্শন) প্রদান করা হয়েছে যার অনুযায়ী তাঁর ওপর মানুষ ঈমান এনেছে। আর আমাকে যে নিদর্শন দেওয়া হয়েছে তা হলো অহী, যা আল্লাহ আমার ওপর প্রত্যাদেশ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। (যা কিয়ামত পর্যন্ত অবিকল টিকে থাকবে)। সেহেতু আমি আশা করি আমি কিয়ামতের দিন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুসারীর অধিকারী হব।’ [বুখারী : ৪৯৮১]

এ হলেন ইউনুস ‘আলাইহিস সালাম। আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী। আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَقُولَ أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى»

‘কারও জন্য এমন বলা সমীচীন নয় যে আমি ইউনুস ইবন মাত্তা থেকে উত্তম।’ [বুখারী : ৪৬০৩; মুসলিম : ২৩৭৬]

এমন সম্মানিত নবী সূরা নিসা ও আন‘আমে উল্লেখিত সম্মানিত নবীদের কাতারে যাকে রাখা হয়েছে আর যাদের সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অনুসরণের। আল্লাহর ভাষায়,

﴿ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ هَدَى ٱللَّهُۖ فَبِهُدَىٰهُمُ ٱقۡتَدِهۡۗ ٩٠ ﴾ [الانعام: ٩٠]

‘এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন। অতএব তাদের হিদায়াত তুমি অনুসরণ কর।’ {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ৯০}

আর ইউনুস ‘আলাইহিম সালামের এ ঘটনায় মহান অনুসরণ হলো ওই হিদায়াত বা পথনির্দেশ যার কথা আল্লাহ বলেছেন নিম্নোক্ত আয়াতে। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ فَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ وَلَا تَكُن كَصَاحِبِ ٱلۡحُوتِ إِذۡ نَادَىٰ وَهُوَ مَكۡظُومٞ ٤٨ ﴾ [القلم: ٤٨]

‘অতএব তুমি তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্যধারণ কর। আর তুমি মাছওয়ালার মত হয়ো না, যখন সে দুঃখে কাতর হয়ে ডেকেছিল।’ {সূরা কলম, আয়াত : ৪৮}

অতএব দাওয়াতপ্রচারকদের কাজ হবে যে কোনো মূল্যে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এবং এ পথে পাওয়া কষ্ট ও মিথ্যা অভিযোগে ধৈর্য ধরা। অটল অবিচল থাকা এবং বারবার সুপথে আহ্বান অব্যাহত রাখা।। মানুষ যতই বিমুখতা দেখাক তাদের সংশোধন থেকে নিরাশ না হওয়া।

তাই রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদেরও অবশ্য কর্তব্য হবে, ধৈর্যধারণ করা এবং সহ্য করা। অবিচল থাকা এবং অধ্যবসায় চালিয়ে যাওয়া। সর্বোপরি বারবার দাওয়াতের পুনরাবৃত্তি করতে থাকা। তেমনি তার জন্য বৈধ নয় মানুষের অন্তর সংশোধিত হওয়া বা হৃদয় সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে হতাশ হওয়া। যতই তারা অস্বীকার বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করুক কিংবা অবাধ্যতা ও বিমুখতা দেখাক না কেন।

ডাকে সাড়া না দেওয়ায় মানুষের ওপর রাগ করা তো সংশোধন প্রত্যাশীদের জন্য সহজ বৈ কি। কিন্তু এটা তো সত্যকে সাহায্য করবে না। মুমিন তাই নিজের ক্রোধ হজম করে এবং চলমান থাকে। তার জন্য সবরই শ্রেয়। আর শেষ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। আল্লাহর ভাষায়,

﴿ وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدۡرُكَ بِمَا يَقُولُونَ ٩٧ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَكُن مِّنَ ٱلسَّٰجِدِينَ ٩٨ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٧، ٩٩]

‘আর অবশ্যই আমরা জানি যে, তারা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হয়। সুতরাং তুমি তোমার রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। আর ইয়াকীন (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত কর।’ {সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৯৭-৯৯}

হে বিপন্ন ব্যথিত চিন্তিত ব্যক্তি, নবীদের দোয়ায় তোমার জন্য রয়েছে আদর্শ। ইমাম আহমদ ও তিরমিযী রহিমাহুমাল্লাহ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الحُوتِ: لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ.»

‘মাছের পেটে করা জুন্নুনের (মাছওয়ালা অর্থাৎ ইউনুস ‘আলাইহিস সালামের) দো‘আ ‘আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আপনি সপ্রশংস মহান, নিশ্চয় আমি জুলুমকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ (উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোলিমীন) এটি যে কোনো মুসলিম কোনো সময় পড়বে, আল্লাহ অবশ্যই তার দো‘আ কবুল করবেন।’ [তিরমিযী : ৩৫০৫; মুসনাদ আহমাদ : ১৪৬২]

আমাদেরকে অবশ্যই অমূল্য এ দো‘আটি ভেবে দেখা দরকার। এতে রয়েছে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা, অংশীদারিত্বের অস্বীকৃতি ও নিজের যাবতীয় ভুলের স্বীকারোক্তি। (অতএব নিজের দো‘আ কবুলের জন্য এ তিন বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে করা দরকার।)

ইমাম আহমদ রহ. আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَا قَالَ عَبْدٌ قَطُّ إِذَا أَصَابَهُ هَمٌّ وَحَزَنٌ: اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، وَابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي، إِلَّا أَذْهَبَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَمَّهُ، وَأَبْدَلَهُ مَكَانَ حُزْنِهِ فَرَحًا

‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদ বা দুশ্চিন্তায় পড়ে বলবে (দু‘আর উচ্চারণ),

আল্লাহুম্মা ইন্নী ‘আব্দুকা অবনু ‘আব্দিকা অবনু ‘আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা, সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতা-বিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’’সারতা বিহী ফী ‘ইলমিল গাইবি ‘ইন্দাক; আন তাজ‘আলাল ক্বুরআ-না রাবী‘আ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজালা-আ হুযনী অযাহা-বা হাম্মী।

(অর্থ- হে আল্লাহ, নিঃসন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র ও তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে। তোমার বিচার আমার জীবনে বহাল। তোমার মীমাংসা আমার ভাগ্যলিপিতে ন্যায়সঙ্গত। আমি তোমার নিকট তোমার প্রত্যেক সেই নামের অসীলায় প্রার্থনা করছি- যে নাম তুমি নিজে নিয়েছ। অথবা তুমি তোমার গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গায়বী ইলমে নিজের নিকট গোপন রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত কর, আমার বক্ষের জ্যোতি কর, আমার দুশ্চিন্তা দূর করার এবং আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।) আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তার বিষাদকে হর্ষে বা আনন্দে পরিণত করে দেবেন।’ [মুসনাদ আহমাদ : ৪৩১৮]

একইভাবে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় বলতেন :

«لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ العَلِيمُ الحَلِيمُ، لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ العَرْشِ العَظِيمِ، لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ رَبُّ العَرْشِ الكَرِيمِ»

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল আলীমুল হালীম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাব্বুল ‘আরশিল আযীম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাব্বুস সামা-ওয়া-তি ওয়ারাব্বুল আরদি ওয়ারাব্বুল আরশিল কারীম।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই; যিনি সর্বজ্ঞ, সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; যিনি মহান ‘আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য আরাধ্য নেই; যিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও সম্মানিত ‘আরশের অধিপতি। [বুখারী : ৭৪২৬]

এ হলো দুশ্চিন্তা-টেনশনের নববী চিকিৎসা। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে এসব পড়বে, আল্লাহ তার অন্তর উন্মোচন করে দেবেন ফলে তার কষ্টের কারণ দূর হয়ে যাবে।

সুত্রঃ শেইখ ড. সালেহ আলে তালেবের খুতবা হতে অনুদিত


আল্লাহর দৃষ্টি থেকে যারা বঞ্ছিত থাকবে!

$
0
0

Wallpaper-Black-Background-Red-Color-Paint-Explosion-Burst-Red-Black-768x1366

সংকলনঃ দাওয়াহ অফিস, রাওদা, রিয়াদ। | অনুবাদঃ শেইখ আব্দুর রাকীব মাদানী

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ। আম্মাবাদঃ

এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা কিয়ামত দিবসে দয়াময় আল্লাহর সুদৃষ্টি থেকে বঞ্ছিত থাকবে, তিনি তাদের দিকে তাকাবেন না আর না তাদের প্রতি সুনজর দিবেন। তাদের সংখ্যা অনেক। [আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে এই বঞ্ছিতের অনিষ্ট থেকে হেফাযতে রাখেন, এর কারণ থেকে দূরে রাখেন এবং সেই বঞ্ছিত সম্প্রদায় থেকেও দূরে রাখেন।]

১-যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ও শপথকে সামান্য বিনিময়ে বিক্রয় করেঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখেরাতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [আল্ ইমরান/৭৭] এই আয়াতে মিথ্যা কসম করা হারাম এর প্রমাণ রয়েছে, যা মানুষ সামান্য পর্থিব লাভের জন্যে করে থাকে। উলামাগণ এই কসম কে আল্ ইয়ামীন আল্ গামূস বা ডুবানোর কসম আখ্যা দিয়েছেন কারণ; তা এই কসমকারীকে পাপে ডুবায় অতঃপর জাহান্নামে। [আল্লাহই আশ্রয়দাতা]

২- গিঁটের (টাখনুর) নিচে বস্ত্র পরিধানকারী।

৩-মিথ্যা কসম দিয়ে পণ্য বিক্রয়কারী।

৪- কারো উপকার করে তাকে উপকারের খোটা দাতা।

আবু হুরাইরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “ তিন প্রকার এমন লোক রয়েছে, যাদের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না আর না কেয়ামতের দিন তাদের দিকে দেখবেন আর না তাদের পবিত্র করবেন বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি”। আমি (আবু হুরাইরা) বললামঃ আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? ওরা তো ক্ষতিগ্রস্ত! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “গিঁটের বা টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, ব্যবসার সামগ্রী মিথ্যা কসম দিয়ে বিক্রয়কারী এবং কাউকে কিছু দান করার পর তার খোটা দাতা”। [মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং২৯৪]

গিঁটের নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধানকারী হচ্ছে, সেই ব্যক্তি যে তার লুঙ্গি ও কাপড় এত ঝুলিয়ে পরে যে তার দুই গিঁটের নিচে চলে যায়। যদি সে অহংকার স্বরূপ এমন করে, তাহলে তার জন্য উপরোক্ত শাস্তির ঘোষণা কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না যে, তার লুঙ্গি অহংকার স্বরূপ ঝুলিয়ে পরে”। [বুখারী, নং৫৭৮৩/ মুসলিম] আর যে অহংকার স্বরূপ নয় বরং এমনি ঝুলিয়ে পরে, তাহলে তার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই বাণী প্রযোজ্যঃ “লুঙ্গির যতটা গিঁটের নিচে থাকবে, ততটা জাহান্নামে যাবে”। [বুখারী,নং৫৭৮৭ ] এই ভাবে হাদীসগুলির মাঝে সমন্বয় সাধন হবে। আল্লাহই বেশী জানেন।

পর্দার উদ্দেশ্যে মহিলাদের এক গজ ঝুলিয়ে পরা বৈধ কিন্তু এর বেশী করবে না।

আর মিথ্যা শপথ করে সামগ্রী বিক্রয়কারী হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে মহান আল্লাহকে তুচ্ছকারী। তাই সে (আল্লাহার কসম দিয়ে) মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লোকদের নিকট পণ্য বিক্রি করে।

আর খোটাদাতা হচ্ছে, যে দান করার পর খোটা দেয়।

৫- যে মুসাফিরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থেকে বাধা দেয়।

৬-যে পার্থিব লাভের আশায় কোন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বায়আত (অঙ্গীকার) করে।

আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন প্রকারের লোকের সাথে মহান আল্লাহ কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন না, না তাদের দিকে তাকাবেন আর না তাদের পবিত্র করবেন; বরং তাদের জন্য রয়েছে শক্ত আযাব। ঐ ব্যক্তি যার নিকট র্নিজন প্রান্তরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থাকা সত্ত্বেও মুসাফিরকে তা ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে আমার অতিরিক্ত (রহমত) থেকে বঞ্ছিত করবো, যেমন তুমি তোমার বিনা পরিশ্রমে অর্জিত অতিরিক্ত পানি থেকে বঞ্ছিত কেরেছ এবং সেই ব্যক্তি যে আসরের পর কোন ব্যক্তিকে তার সামগ্রী বিক্রয় করে। আল্লাহর কসম খেয়ে বলে আমি এটা এই এই দামে ক্রয় করেছি। ক্রেতা তার কথা সত্য মনে করে তার কাছ থেকে পণ্য খরিদ করে অথচ সে সত্য নয়। আর সেই ব্যক্তি যে কোন মুসলিম ইমামের (রাষ্ট্রপরিচালকের) হাতে কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যেই বাইআত (অঙ্গীকার) করলো; সে যা চায় যদি তাকে তা দেওয়া হয় তো অঙ্গীকার পূরণ করে, আর না দিলে ভঙ্গ করে। [বুখারী, নং ৭২১২/ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং২৯৭]

মরুভূমীতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থেকে মুসাফিরকে বাধাদানকারীকে আল্লাহ তার কৃত কর্ম অনুযায়ী বদলা দিবেন। তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা আছে তার তুলনায় আল্লাহর রহমত ও ফযলের প্রয়োজন অনেক বেশী। আর যে দুনিয়া পাবার আশায় ইমামের হাতে বাইআত করে, সে যেন এই অঙ্গীকারকে পার্থিব উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়। আর ইসলামের মূল বিধান শাষকের আনুগত্ব করা, তাকে সদুপদেশ দেওয়া, সাহায্য করা এবং ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা, এসবের অবজ্ঞা করে। সে মুসলিম শাষক ও ইমামদের প্রতারনাকারী স্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত।

৭-বৃদ্ধ ব্যভিচারী।

৮-মিথ্যুক বাদশাহ।

৯-অহংকারী দরিদ্র।

আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ আল্লাহ তাআ’লা কেয়ামত দিবসে তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, আর না তাদের পবিত্র করবেন, না তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তিঃ বৃদ্ধ যেনাকারী, মিথ্যুক রাজা এবং অহংকারী দরিদ্র”। [মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং২৯৬]

বিশেষ করে এদের সম্পর্কে উক্ত শাস্তির কারণ বর্ণনায় কাযী ইয়ায বলেনঃ “তাদের প্রত্যেকে উক্ত পাপ থেকে দূরে থাকার পরেও তা করে। যদিও কোনো পাপীর পাপের অজুহাত গ্রহণীয় নয়, কিন্তু একথা বলা যেতে পারে যে, উক্ত পাপ করার ক্ষেত্রে তাদের অতীব প্রয়োজন ছিল না আর না তাদের সচরাচর স্বাভাবিক কোনো অন্য কারণ ছিল। তা সত্ত্বেও তাদের উক্ত পাপে লিপ্ত হওয়াটা যেন আল্লাহর অধিকারকে তুচ্ছ মনে করা, বিরোধিতা করা এবং অন্য কোন কারণ নয় বরং স্রেফ পাপ করার উদ্দেশ্যেই তা করা”।

১০- পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।

১১- নারী হয়ে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি।

১২-দাইযূস।

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ তিন প্রকার লোকের দিকে আল্লাহ তাআ’লা কিয়ামতের দিনে দৃষ্টিপাত করবেন নাঃ পিতা-মাতার অবাধ্য, পুরুষের সদৃশ অবলম্বনকারীনি মহিলা এবং দাইয়ূস। আর তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে নাঃ পিতা-মাতার অবাধ্য, মদ পানে আসক্ত এবং অনুদানের পর খোটাদাতা” [মুসনাদ আহমদ, নং ৬১১/নাসাঈ]

পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের বিষয়টি স্পষ্ট, কারণ আল্লাহ তাআ’লা পিতা-মাতার অধিকারকে মর্যাদা দিয়েছেন, তিনি নিজ অধিকারকে তাদের অধিকারের সাথে সংযুক্ত করেছেন এবং তাদের উভয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ করেছেন; যদিও তারা কাফের হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি”। [তিরমিযী, নং ১৯৬২, আলবানী সহীহ বলেছেন]

পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি বলতে সেই মহিলাকে বুঝায় যে, পোষাক-পরিধানে, চাল-চলনে, কাজে-কর্মে এবং কথার শুরে পুরূষের অনুকরণ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বণকারী পুরূষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বণকারীনি মহিলাদের প্রতি অভিষাপ করেছেন”। [বুখারী]

আর দাইয়ূস হচ্ছে, যে নিজ পরিবারে অশ্লীলতা প্রশ্রয় দেয়, তাদের সম্ভ্রম রক্ষায় আত্মসম্মানী নয়, সে মানবিকতাহীন, অপুরুষত্ব, অসুস্থ মস্তিষ্ক এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারী। তার তুলনা অনেকটা শুকরের মত, যে নিজ সম্ভ্রম রক্ষা করে না। তাই ঐ সকল লোককে সতর্ক থাকা উচিৎ যারা নিজ পরিবারে এবং তার দায়িত্বে থাকা লোকদের মাঝে অশ্লীলতা বা অশ্লীলতার উপকরণ প্রশ্রয় দেয়। যেমন বাড়িতে এমন টিভি চ্যানেল রাখা যা যৌনতা উষ্কে দেয় এবং অশ্লীলতা বৃদ্ধি করে।

১৩- যে তার স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করেঃ

ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা সেই ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না যে, পুরুষের সাথে সঙ্গম করে কিংবা স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করে”। [তিরিমিযী, নং১১৭৬ আলবানী সহীহ বলেছেন]

আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “সে অভিশপ্ত যে স্ত্রীর পায়ু পথে সঙ্গম করে”। [আহমদ, আবু দাউদ, নং ২১৬২/ আলবানী সহীহ বলেছেন]

কার্যকর অধ্যনের ৫টি ফলপ্রসূ বৈশিষ্ট্য

$
0
0

লেখক : ইয়াকুব আলী | ভাষান্তর : মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

crop380w_istock_000002193842xsmall-books

 

অনেকেই বই পড়েন। কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করা হয় কী পড়েছেন, তখন মস্তিকের সাথে যুদ্ধ করতে হয়! আপনিও কি তেমন পাঠক? আপনি কি শেখার অনেক আগ্রহ নিয়ে দীন শিক্ষার ক্লাসে বসছেন কিন্তু মনে হচ্ছে কিছুই শিখতে পারেননি? ক্লাসে বসে কি মণে হয়, “থাক, এটা লিখে রাখার দরকার নেই। এটা আমি কখনোই ভুলবো না,” কিন্তু একসপ্তাহ পরে ওই ক্লসের একটি বাক্যও আপনি স্মরণ করতে পারছেন না?

আপনি যখনই কোনো ক্লাসে যাচ্ছেন, বই পড়া শুরু করছেন কিংবা এমপি-থ্রী প্লেয়ারে ইসলামী বক্তৃতা শুনতে যাচ্ছেন, আপনাকে কয়েকটি কল্যাণমুখী মনোভাব নিয়ে সেগুলো শুরু করতে হবে। নীচে এমনই কয়েকটি প্রয়োজনীয় মনোভাব তুলে ধরা হলো :

. ইখ্‌লাস (আন্তরিকতা বা অন্তরের বিশুদ্ধতা)

নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, “আমি কেন এটা শিখছি বা পড়ছি?” “এটা কি এজন্য যে, লোকে আমাকে জ্ঞানী বলে ডাকবে?” “এটা কি বিতর্কে জয়ী হওয়ার জন্য?” “এটা কি আমার প্রতি মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য?” যদি এগুলোর কোনো একটি আপনার ক্ষেত্রে সত্য হয়, তাহলে এই পড়াশোনা দিয়ে আপনি সত্যিকার অর্থে মোটেই উপকৃত হবেন না।

ইবনু মাসুদ (রা) বলেন, “জ্ঞান কোনো ধারাবাহিক বর্ণনা নয়; বরং তা অন্তরে স্থাপিত এক আলো।”

“নিশ্চয়ই যারা জ্ঞানী তারাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা আল-ফাতির; ৩৫:২৮]

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র একারণেই যে, তা ব্যক্তিকে আল্লাহর ভয় ও আনুগত্য শেখায়, নয়তো তা (জ্ঞান নয়) অন্যকিছু।”

. নিয়্যত (মনের উদ্দেশ্য)

প্রথমেই যে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো, আপনার জ্ঞানার্জন হলো একটি ইবাদত কর্ম। এটি ব্যক্তিগত তথা গোপন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) এবং আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “আমার নিয়্যতের (মনের ইচ্ছা) চেয়ে আমার কাছে আর কিছু বেশি কঠিন মনে হয়নি।”

নিজের প্রকাশ্য ও গোপন উভয় ধরণের ‘আমলের দিকে লক্ষ করুন। প্রকাশ্য ‘আমলের চেয়ে গোপন ‘আমলের সংখ্যা কি বেশি? গোপন ‘আমলের চেয়ে প্রকাশ্য ‘আমল করতেই কি আপনার বেশি আগ্রহ জাগে? যদি তা-ই হয়, তবে আপনাকে নিয়্যতের (মনের উদ্দেশ্য) প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হতে হবে। আপনি যে ‘আমল করছেন, তা কার জন্য? মানুষ নাকি আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) জন্য?

. তাকওয়া

যে বক্তি তার প্রতিপালককে স্মরণ করে এবং যিনি তা করেন না, তাদের প্রথম জন জীবিত আর পরের জন মৃতের ন্যায়।

জ্ঞান শিক্ষার্থী আল্লাহর নামে জ্ঞানার্জন করবেন এবং খেয়াল রাখবেন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) তাকে দেখছেন। যদি আল্লাহ চান তো, এতেই আপনার পড়াশোনায় বরকত নেমে আসবে।

“যিনি জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে সফল হতে চান আবার একই সাথে অতিমাত্রায় পানাহার ও নিদ্রাকে সমান গুরুত্ব দেন, তিনি আসলে অসম্ভব সাধনের চেষ্টা করছেন।” [ ‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

. নীরবতা

অনেক কিছু জানার পর সেগুলো মুখে প্রকাশ করে নিজের জ্ঞান জাহির করার ইচ্ছা জাগবে। অনেক সময় শোনার চেয়ে বলতেই বেশি ভালো লাগবে। এমন মানুষের জন্য সতর্কবাণী:

“যে কিয়ামতে বিশ্বাস করে, সে ভালো কথা বলুক অথবা নিশ্চুপ থাকুক।” [আল-বুখারি; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৬, হাদীস নং ৪৮২]

ইমাম শাফে‘ঈ বলেন, “আপনি যদি কিছু বলতে চান, তবে  [আগে] চিন্তা করুন। যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এতে কোনো ক্ষতি নেই, তবে বলুন। যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, আপনার কথায় ক্ষতি হবে, তবে বলবেন না।

লোকমানকে (রা) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “আপনি কীভাবে এত জ্ঞানী হলেন?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন: “ আমার যা প্রয়োজন নেই, আমি তা চাই না, আর যা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তা বলি না।” [‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

৫. বিনম্রতা

আমাদের থাকতে হবে এমন আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা এবং মনে রাখা যে, এমন অনেকেই আছেন যিনি আমার থেকে বেশি জ্ঞানের অধিকারী।

ইমাম শাফে‘ঈ বলেছেন: “আমি ইমাম মালিকের (র) উপস্থিতিতে বইয়ের পাতা খুবই আস্তে করে, নিঃশব্দে উল্টাতাম যাতে তিনি শব্দে বিরক্ত না হন; এটা করতাম তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার কারণে।”

ইবনু ‘আব্বাস বলেন: “ছাত্র হিসেবে আমি নিজেকে বিনয়ী রেখেছিলাম। তাই শিক্ষক হিসেবে আমি সম্মানিত হয়েছি।”

শেষ কথা

কেউ জ্ঞানার্জন করলে, তার জ্ঞান তাকে বনয়ী করবে। আপনি যদি এমন কোনো জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেখে থাকেন যার আচরণ মন্দ, তাহলে তার ক্ষেত্রে বলা যায়, ওই জ্ঞানী ব্যক্তি মুখ দিয়ে যা বলে অন্তরে তা প্রত্যাখ্যান করে। যে জ্ঞান তার জীবনে এসেছে, তা আসলে আন্তরিক, উপকারী জ্ঞান নয়।

নিজেকে কল্যাণমুখী, চৌকস করে গড়তে হলে শিষ্টাচার শিখতে হবে যা হবে জ্ঞানভিত্তিক শিষ্টাচার।

আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক বলেন : “আমি শিষ্টাচার শিখতে ত্রিশ বছর ব্যয় করেছি আর জ্ঞানার্জনে ব্যয় করেছি বিশ বছর।”

 

এখন থেকে আমরা যখন পড়তে বসবো, আমরা যেন উল্লিখিত পাঁচটি মনোভাব সঙ্গে নিয়ে পড়তে বসি। যাতে করে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ অর্জন করতে পারি।

 

অহংকার থেকে মুক্তির উপায়

$
0
0

arrogance

প্রশ্ন: কিভাবে একজন মানুষ অহংকার থেকে মুক্তি পেতে পারে?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

এক: 

অহংকার একটি খারাপ গুণ। এটি ইবলিস ও দুনিয়ায় তার সৈনিকদের বৈশিষ্ট্য; আল্লাহ যাদের অন্তর আলোহীন করে দিয়েছেন।

সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির উপর যে অহংকার করেছিল সে হচ্ছে— লানতপ্রাপ্ত ইবলিস। যখন আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিলেন— আদমকে সেজদা কর; তখন সে অসম্মতি জানিয়ে বলল: “আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে বানিয়েছেন আগুন দিয়ে; তাকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে।”

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করলাম, এরপর আকার-অবয়ব তৈরি করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম – আদমকে সেজদা কর; তখন সবাই সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস সেজদাকারীদের মধ্যে ছিল না। আল্লাহ বললেন: আমি যখন তোকে সেজদা করার আদেশ দিলাম তখন কিসে তোকে সেজদা করতে বাধা দিল? সে বলল: আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে বানিয়েছেন আগুন দিয়ে; তাকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে।” [ সূরা আরাফ, আয়াত: ১১-১২ ]

তাই অহংকার ইবলিসি চরিত্র। যে ব্যক্তি অহংকার করতে চায় সে জেনে রাখুক সে শয়তানের চরিত্র গ্রহণ করেছে। সে সম্মানিত ফেরেশতাদের চরিত্র গ্রহণ করেনি, যারা আল্লাহর আনুগত্য করে সেজদায় লুটিয়ে পড়েছিল।

অহংকার অহংকারীর জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ, ইজ্জতের মালিক আল্লাহকে সরাসরি দেখতে না পাওয়ার কারণ। দলিল হচ্ছে এ দুইটি হাদিস:

আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একলোক বলল: যে কোন লোক পছন্দ করে তার জামাটা ভাল হোক, তার জুতাটা ভাল হোক? তিনি বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর; তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হচ্ছে – সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।” [ সহিহ মুসলিম ]

সত্যকে উপেক্ষার অর্থ: সত্য জেনেও সেটাকে প্রত্যাখ্যান করা।

মানুষকে তুচ্ছ করার অর্থ: মানুষকে ছোট করা, হেয় করা।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে হাঁটবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। আবু বকর (রাঃ) বললেন: আমার কাপড়ের একটা অংশ ঝুলে পড়ে যায়; আমি বারবার সেটাকে টেনে নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি তো অহংকারবশতঃ সেটা কর না।” [ সহিহ বুখারী – ৩৪৬৫]

দুই:

অহংকার এমন একটি গুণ যা শুধু আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। যে ব্যক্তি এ গুণ নিয়ে আল্লাহর সাথে টানাটানি করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন, তার প্রতাপ নস্যাৎ করে দেন ও তার জীবনকে সংকুচিত করে দেন।

আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: সম্মান হচ্ছে- আল্লাহর পরনের কাপড়; আর অহংকার হচ্ছে- আল্লাহর চাদর। যে ব্যক্তি এটা নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করে আমি তাকে শাস্তি দেই।” [ সহিহ মুসলিম – ২৬২০]

নববী বলেন:

সহিহ মুসলিমের সব কপিতে এভাবে আছে। ازاره ও رداؤه শব্দদ্বয়ের ه জমির (সর্বনাম) দ্বারা আল্লাহকে বুঝানো হচ্ছে। এখানে বাক্যের কিছু অংশ উহ্য রয়েছে সেটা হচ্ছে-قال الله تعالى : ومن ينازعني ذلك أعذبه ( অর্থঃ আল্লাহ বলেন: যে ব্যক্তি সেটা নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করবে আমি তাকে শাস্তি দিব)

আমার সাথে ‘টানাটানি’ করবে এর অর্থ- এ গুণ লালন করবে; ফলে সে অংশীদার এর পর্যায়ে পড়বে। এটি অহংকারের কঠিন শাস্তি ও অহংকার হারাম হওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা।[ শারহু মুসলিম (১৬/১৭৩)]

যে ব্যক্তি অহংকার করতে চায় ও বড়ত্ব দেখাতে চায় আল্লাহ তাকে নীচে ছুড়ে ফেলে দেন ও বেইজ্জত করেন। যেহেতু সে তার মূলপরিচয়ের বিপরীতে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছে তাই আল্লাহ তাকে তার ইচ্ছার বিপরীতে শাস্তি দিয়ে দেন। বলা হয়: শাস্তি আমলের সম জাতীয় হয়ে থাকে।

যে ব্যক্তি মানুষের উপর অহংকার করে কিয়ামতের দিন তাকে মানুষের পায়ের নীচে মাড়ানো হবে। এভাবে আল্লাহ তাআলা অহংকারের কারণে তাকে লাঞ্ছিত করবেন।

আমর ইবনে শুয়াইব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে ছোট ছোট পিপীলিকার ন্যায় মানুষের আকৃতিতে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। অপমান ও লাঞ্ছনা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে। তাদেরকে জাহান্নামের একটি জেলখানায় একত্রিত করা হবে, যার নাম হবে “বুলাস। আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঢেকে ফেলবে। জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম তাদেরকে পান করতে বাধ্য করা হবে।”। [সুনানে তিরমিজি – ২৪৯২, আলবানী সহিহ তিরমিজি গ্রন্থে – ২০১৫ এ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

তিন:

অহংকারের নানান রূপ রয়েছে:

১. সত্যকে গ্রহণ না করা; অন্যায়ভাবে বিতর্ক করা। যেমনটি আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের হাদিসে উল্লেখ করেছি। “অহংকার হচ্ছে- সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।”

২. নিজের সৌন্দর্য্য, দামী পোশাক ও দামী খাবার ইত্যাদি দ্বারা অভিভূত হয়ে পড়া এবং মানুষের উপর দাম্ভিকতা ও অহংকার প্রকাশ করা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা আবুল কাসেম বলেছেন: একদা এক ব্যক্তি হুল্লা পরে, আত্মম্ভরিতা নিয়ে, মাথা আঁচড়িয়ে হাঁটছিল এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে সহ ভূমি ধ্বস করে দিলেন এবং এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সে নীচের দিকে যেতে থাকবে।”[সহিহ বুখারি – ৩২৯৭ ও সহিহ মুসলিম – ২০৮৮]

এ ধরণের অহংকারের মধ্যে ঐ ব্যক্তির আচরণও পড়বে যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

“সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।” [ সূরা কাহাফ, আয়াত: ৩৪]

কখনো কখনো আত্মীয়স্বজন ও বংশধরদের নিয়ে গৌরবের মাধ্যমেও অহংকার হতে পারে.

চার:

অহংকার প্রতিরোধ করার উপায় হল- নিজেকে অন্য দশজন মানুষের মত মনে করা। অন্যসব লোককে নিজের সমতুল্য মনে করা। তারাও এক বাপ-মা থেকে জন্মগ্রহণ করেছে। যেভাবে আপনিও এক বাপ-মা এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। আর আল্লাহভীতি ব্যক্তির মর্যাদা পরিমাপের মানদণ্ড। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“নিশ্চয় তোমাদের যে ব্যক্তি বেশি তাকওয়াবান সে আল্লাহর নিকট বেশি সম্মানিত।” [ সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩]

অহংকারী মুসলিমের জানা থাকা উচিত সে যতই বড় হোক না কেন পাহাড় সমান তো আর হতে পারবে না; জমিন ছিদ্র করে তো বেরিয়ে যেতে পারবে না। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

“অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।” [ সূরা লোকমান, আয়াত: ১৭-১৮]

ইমাম কুরতুবী বলেন:

“পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না” এখানে অহংকার থেকে বারণ করা হয়েছে এবং বিনয়ী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আয়াতে المرح শব্দের অর্থ- তীব্র আনন্দ। কেউ কেউ বলেছেন: হাঁটার মধ্যে অহংকার করা, কেউ বলেছেন: কোন মানুষের তার মর্যাদার সীমা অতিক্রম করে যাওয়া।

কাতাদা বলেছেন: হাঁটার ক্ষেত্রে অহংকার। কেউ কেউ বলেছেন: প্রত্যাখান। কেউ কেউ বলেছেন: উদ্যম।

এ উক্তিগুলো সমার্থবোধক। কিন্তু এগুলো দুইভাগে বিভক্ত:

একটি: নন্দিত অপরটি: নিন্দিত।

অহংকার, প্রত্যাখান, দাম্ভিকতা এবং কোন মানুষের তার সীমা অতিক্রম করা: নিন্দিত।

আর আনন্দ ও উদ্যমতা: নন্দিত। [ তাফসিরে কুরতুবী ১০/২৬০]

অহংকার প্রতিরোধ করার আরেকটি উপায় হলো- এটি মনে রাখা যে, অহংকারীকে কিয়ামতের দিন পিঁপড়ার ন্যায় ছোট করে হাশর করা হবে মানুষের পায়ের নীচে মাড়ানো হবে। অহংকারী মানুষের নিকট অপছন্দীয় যেমনিভাবে সে আল্লাহর নিকটও অপছন্দনীয়। মানুষ বিনয়ী, নম্র, ভদ্র, সহজ, সরল মানুষকে ভালবাসে। আর কঠিন ও রুঢ় স্বভাবের মানুষকে ঘৃণা করে।

অহংকার প্রতিরোধ করার আরেকটি উপায় হলো- অহংকারী যে পথ দিয়ে বের হয়েছে পেশাবও সে পথ দিয়ে বের হয়। তার সৃষ্টির সূচনা হয়েছে নাপাক বীর্য থেকে। তার সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে- পচা লাশ। এ দুই অবস্থার মাঝখানে সে পায়খানা বহন করে চলছে। সুতরাং অহংকার করার মত কী আছে?!!

আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে অহংকার থেকে মুক্তি দেন এবং আমাদেরকে বিনয় দান করেন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

নামায নষ্ট করলে কি সিয়াম কবুল হয় ?

$
0
0

ramadan_moon2

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

বে-নামাযীর যাকাত, রোজা, হজ্জ ইত্যাদি কোনো আমলই কবুল হয় না।

বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

( مَنْ تَرَكَ صَلاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ )

“যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যায়।” [ বুখারী – ৫২০ ]

“তার আমল নিষ্ফল হয়ে যায়” এর অর্থ হল: তা বাতিল হয়ে যায় এবং তা তার কোনো কাজে আসবে না। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, বেনামাযীর কোনো আমল আল্লাহ কবুল করেন না এবং বেনামাযী তার আমল দ্বারা কোন ভাবে উপকৃত হবে না। তার কোনো আমল আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হবে না।

ইবনুল কায়্যিম তাঁর ‘আস-স্বালাত’  নামক গ্রন্থের ৬৫ পৃষ্ঠায় এ হাদিসের মর্মার্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন –

এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নামায ত্যাগ করা দুই প্রকার:

  • (১) পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করা। কোন নামাযই না-পড়া। এ ব্যক্তির সমস্ত আমল বিফলে যাবে।
  • (২) বিশেষ কোন দিন বিশেষ কোন নামায ত্যাগ করা। এক্ষেত্রে তার বিশেষ দিনের আমল বিফলে যাবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে সালাত ত্যাগ করলে তার সার্বিক আমল বিফলে যাবে। আর বিশেষ নামায ত্যাগ করলে বিশেষ আমল বিফলে যাবে।” 

“ফাতাওয়াস সিয়াম” (পৃ-৮৭) গ্রন্থে এসেছে শাইখ ইবনে উছাইমীনকে বেনামাযীর রোজা রাখার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তিনি উত্তরে বলেন:

“বেনামাযীর রোজা শুদ্ধ নয় এবং তা কবুলযোগ্য নয়। কারণ নামায ত্যাগকারী কাফের, মুরতাদ।”

এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে-

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী:

[ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ][ التوبة : 11]

“আর যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।” [ সূরা  তওবা: ১১]

নবী ﷺ এর বাণী:

( بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاةِ ) رواه مسلم (82)

“কোন ব্যক্তির মাঝে এবং শির্‌ক ও কুফরের মাঝে সংযোগ হচ্ছে সালাত বর্জন।”[ সহিহ মুসলিম ৮২]

এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণী –

( الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ ) (رواه الترمذي (2621) . صححه الألباني في صحيح الترمذي)

“আমাদের ও তাদের মধ্যে চুক্তি হলো নামাযের। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল, সে কুফরি করল।”

[জামে তিরমিযী (২৬২১), আলবানী ‘সহীহ আত-তিরমিযী’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলে চিহ্নিত করেছেন]

এই মতের পক্ষে সাহাবায়ে কেরামের ‘ইজমা’ সংঘটিত না হলেও সর্বস্তরের সাহাবীগণ এই অভিমত পোষণ করতেন।

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে শাক্বিক রাহিমাহুমুল্লাহ বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ নামায ছাড়া অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরি মনে করতেন না।”

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, যদি কোন ব্যক্তি রোজা রাখে; কিন্তু নামায না পড়ে তবে তার রোজা প্রত্যাখ্যাত, গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌র কাছে কোন উপকারে আসবে না। আমরা এমন ব্যক্তিকে বলবো: আগে নামায ধরুন, তারপর রোজা রাখুন। আপনি যদি নামায না পড়েন, কিন্তু রোজা রাখেন তবে আপনার রোজা প্রত্যাখ্যাত হবে; কারণ কাফেরের কোন ইবাদত কবুল হয় না।”

আল-লাজনাহ আদ্‌দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল (১০/১৪০): যদি কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র রমজান মাসে রোজা পালনে ও নামায আদায়ে সচেষ্ট হয় আর রমজান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নামায ত্যাগ করে, তবে তার সিয়াম কি কবুল হবে?

এর উত্তরে বলা হয়- “নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। সাক্ষ্যদ্বয়ের পর ইসলামের স্তম্ভগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফরজে আইন। যে ব্যক্তি এর ফরজিয়তকে অস্বীকার করে কিংবা অবহেলা বা অলসতা করে তা ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল। আর যারা শুধু রমজানে নামায আদায় করে ও রোজা পালন করে তবে তা হলো আল্লাহ্‌র সাথে ধোঁকাবাজি। কতইনা নিকৃষ্ট সেসব লোক যারা রমজান মাস ছাড়া আল্লাহ্‌কে চেনে না! রমজান ব্যতীত অন্য মাসগুলোতে নামায ত্যাগ করায় তাদের সিয়াম শুদ্ধ হবে না। বরং আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নামাযের ফরজিয়তকে অস্বীকার না-করলেও তারা বড় কুফরে লিপ্ত কাফের।” সমাপ্ত

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

নিয়ত: একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা

$
0
0

intentionflower

শব্দ-বিশ্লেষণ:

নিয়ত আরবী শব্দ (نية বা نيَّة) অর্থ:  اَلْقَصْدُ وَ الْاِرَادَةউদ্দেশ্য, অভিপ্রায়, অভিলাষ, মনোবাঞ্ছা, মনের ঝোঁক, কোনো কিছু করার ইচ্ছা, কোনো কাজের প্রতি মনকে ধাবিত করা ইত্যাদি। ইংরেজিতে বলা হয় Intension[1]

ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, মনের মধ্যে কোনো ভাবের উদয় হলে, সে ভাব অনুযায়ী ‘আমল করা কিংবা না করার কোনো দিকেই মন ধাবিত না হলে, মনের ভেতরে ঘুরপাক খাওয়া সে ভাবকে বলা হয় হাদসুন-নাফস বা ওয়াস্ওয়াসা। আর সে ভাবকে বাস্তবে রূপদানের জন্য মনকে ধাবিত করার নাম ‘হাম্ম’ বা নিয়ত (অভিপ্রায়) এবং মজবুত নিয়তকে বলা হয় ‘আযম তথা সংকল্প।[2] আবার  নিয়ত  (অভিপ্রায়) এবং ইরাদাহ (ইচ্ছা) শব্দ দু’টি বাহ্যত সমার্থক মনে হলেও এবং কখনো কখনো এক অর্থে ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও উভয়ের মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন,

এক. ইরাদাহ (ইচ্ছা)-এর সম্পর্ক নিজের কাজের সাথেই নির্দিষ্ট নয়; বরং অন্যের কাজের সাথেও ইরাদাহ (ইচ্ছা)-এর সম্পর্ক হতে পারে। পক্ষান্তরে নিয়তের সম্পর্ক শুধু নিয়তকারীর কাজের সাথেই হয়ে থাকে। যেমন, এটা বলা চলে যে, “আমি তোমার নিকট এ ধরণের আচরণের ইরাদাহ বা ইচ্ছা (কামনা) করি নি” কিন্তু এভাবে বলা যায় না যে, ‘‘আমি তোমার নিকট এ ধরণের আচরণের নিয়ত বা উদ্দেশ্য করি নি।”

দুই. ইরাদাহ (ইচ্ছা) সম্ভাব্য কাজের ব্যাপারেই কেবল ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে নিয়ত শব্দটি সম্ভব-অসম্ভব সকল কাজের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর এজন্যই আল্লাহর ব্যাপারে নিয়ত শব্দের ব্যবহার করা যায় না। যেহেতু তাঁর নিকট সবকিছুই সম্ভব তাই তিনি কোনো কাজ করার ইরাদাহ বা  ইচ্ছা করেন, নিয়ত নয়। তবে যেহেতু কখনো কখনো উভয় শব্দ একই অর্থে ব্যবহৃত হয় তাই কুরআন মাজীদে অনেক স্থানে আল্লাহ তা‘আলা ইরাদাহ শব্দটিকে নিয়ত অর্থে ব্যবহার করেছেন।[3]

শরী‘আতের দৃষ্টিতে নিয়ত ও তার প্রকারভেদ:

আল্লামা মাওয়ারদী রহ. বলেন:

النية هي قصد الشيء مقترنًا بفعله

“কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট মনের উদ্দেশ্য।”[4]

আল্লামা কাযী বায়যাভী রহ. বলেন:

النية هي عبارة عن انبعاث القلب نحو ما يراه موافقا لغرض من جلب نفع اودفع ضرر حالا اومالا

“বর্তমান বা ভবিষ্যতের ভালো কিংবা খারাপ কোনো স্বার্থের জন্য কোনো কাজের প্রতি মনের অভিনিবেশ।”[5]

অর্থাৎ মানুষ কোনো কাজ করার সময় তার মনের অভ্যন্তরে যে উদ্দেশ্য থাকে, যার কারণে মানুষ কাজটি করার জন্য উদ্ভুদ্ধ হয় সে উদ্দেশ্য বা কারণটিকেই শরী‘আতের পরিভাষায় নিয়ত বলা হয়। কোনো ইবাদত করার সময় সে ইবাদতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সংক্রান্ত মনের ভাব বা অবস্থাই নিয়ত। নিয়ত ভালো কিংবা খারাপ উভয়ই হতে পারে। শরী‘আতের দৃষ্টিতে নিয়ত দু প্রকার।

  • ইখলাস
  • রিয়া

যখন কোনো মানুষ আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত করে তখন সে ইবাদত সংক্রান্ত মনের ঐ অবস্থাকে ইখলাস বলা হয়। আর কেউ লোক দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইবাদত করলে ইবাদতকালীন মনের সেই অবস্থাকে বলা হয় রিয়া।

নিয়তের শর‘ঈ বিধান:

ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। সকল ইবাদতের জন্য শুরুতে মনে মনে নিয়ত করে নেওয়া আবশ্যক। নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদতই আদায় হবে না।

নিয়তের উদ্দেশ্য:

নিয়তের দু’টি উদ্দেশ্য থাকে:

এক. ‘আমল বা কাজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ। অর্থাৎ ‘আমলের উদ্দেশ্য কি লা-শরীক আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, নাকি সরাসরি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো সন্তুষ্টি অথবা আল্লাহর সাথে সাথে অন্য কারো সন্তুষ্টিও? -তার পার্থক্য নিরূপণ করা। উদাহরণত: সালাত আদায় করা। নিয়তের মাধ্যমে সহজে এ পার্থক্য নির্ণয় করা যায় যে, বান্দা কি শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে ও তাঁর নির্দেশ পালনার্থেই তা আদায় করছে, নাকি তার সালাত আদায়ের পেছনে লোক-দেখানো কিংবা যশ-খ্যাতি পাওয়ার মতো হীন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে।

দুই. আমল বা ইবাদতের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করা অথবা ইবাদতকে অভ্যাসগত নিত্যকর্ম থেকে পৃথক করা। যেমন, যোহরের সালাতকে আসরের সালাত থেকে পৃথক করা এবং রমযান মাসের সাওমকে অন্য মাসের সাওম থেকে পৃথক করা যায় নিয়তের মাধ্যমে। আবার নিয়তের দ্বারাই অপবিত্রতার গোসলকে অভ্যাসগত পরিচ্ছন্নতা ও শীতলতা লাভের গোসল থেকে ভিন্ন করা যায়।

নিয়ত: প্রসঙ্গ আল-কুরআন

এক. আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ [الزمر: ٢

“তুমি আল্লাহর ইবাদত করো তাঁরই জন্য ইবাদতকে বশুদ্ধ করে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ০২]

তিনি অন্যত্র আরো বলেন:

أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصَُۚ [الزمر: ٣

“জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ০৩]

উক্ত আয়াতদ্বয়ে দীন (دين) শব্দটি আনুগত্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যকে তারই জন্য খাঁটি করুন। যাতে শির্ক, রিয়া ও যশ-খ্যাতির উদ্দেশ্যের নাম-গন্ধও না থাকে। এরই তাগিদার্থে দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে যে, খাঁটি ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই শোভনীয়। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ এর যোগ্য নয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, ‘আমি মাঝে মাঝে দান-খয়রাত করি অথবা কারো প্রতি অনুগ্রহ করি, এতে আমার নিয়ত আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিও থাকে এবং এটাও থাকে যে, মানুষ আমার প্রশংসা করুক।’

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে সত্ত্বার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আল্লাহ তা‘আলা এমন কোনো বস্তু কবূল করেন না, যাতে অন্যকে শরীক করা হয়। অতঃপর তিনি প্রমাণস্বরূপ ﴿ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصَُۚ﴾ [الزمر: ٣] আয়াতখানি তিলাওয়াত করলেন।[6]

বস্তুত নিয়তের একনিষ্ঠতা অনুপাতে আল্লাহর নিকট ‘আমল গৃহীত হয়। কুরআনে কারীমের অনেক আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহর কাছে ‘আমলের হিসাব গণনা দ্বারা নয় -ওজন দ্বারা হয়ে থাকে। আর ‘আমলের মূল্যায়ন ওজন নিষ্ঠাপূর্ণ নিয়তের অনুপাতে হয়ে থাকে এবং পূর্ণ খাঁটি নিয়ত এই যে, আল্লাহ ব্যতীত কাউকে লাভ-লোকসানের মালিক গণ্য করা যাবে না। নিজের কাজকর্মে কাউকে ক্ষমতাশীল মনে করা যাবে না এবং কোনো ইবাদত ও আনুগত্যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কল্পনা ও ধ্যান করা যাবে না। যে সাহাবায়ে কেরাম মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম সারিতে অবস্থিত, তাদের ‘আমলের পরিমাণ তেমন একটা বেশি দেখা যাবে না। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তাদের সামান্য ‘আমল অবশিষ্ট উম্মতের বড় বড় ‘আমলের চেয়ে উচ্চতর ও শ্রেষ্ঠ তো তাদের পূর্ণ ঈমান ও পূর্ণ নিষ্ঠার কারণেই ছিল।[7]

ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারীর  শেষ বাবের শিরোনাম করেছেন:

بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالَى  – وَنَضَعُ ٱلۡمَوَٰزِينَ ٱلۡقِسۡط [الانبياء: ٤٧

“অধ্যায়: ‘আমি ইনসাফের পাল্লা স্থাপন করবো” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৪৭]

আল্লাহর এ উক্তি।”[8]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ ‘আলেমের মত হলো, কিয়ামতের দিন মানুষের ‘আমলকে ওজন করা হবে; গণনা নয়। আর এ ক্ষেত্রে মানুষের একই ‘আমলের মধ্যে ওজনের কম বেশি হবে তাদের নিয়তের কারণে এবং ‘আমলের মধ্যে ইখলাস কম-বেশি হওয়ার কারণে।

আবদুল্লাহ ইবন মুবারক রহ. বলেন:

رُبَّ عَمَلٍ صَغِيْرٍ تُعَظِّمُهُ النِّيَّةُ، وَرُبَّ عَمَلٍ كَبِيْرٍ تُصَغِّرُهُ النِّيَّةِ

“নিয়ত অনেক ক্ষুদ্র ‘আমলকে মহৎ আমলে রূপান্তরিত করে। আবার অনেক বৃহৎ ‘আমলকেও তা ক্ষুদ্র করে দেয়।”[9]

নিয়তের গুরুত্ব আমলের চেয়েও বেশি। মানুষের নিয়ত তার ‘আমলের চেয়ে অধিক কার্যকারী। যেমন, এক ব্যক্তি ৬০/৭০ বছর ঈমান অবস্থায় জীবিত ছিলো এবং ইবাদত করল; কিন্তু তার এ নিয়ত ছিলো যে, সে যদি সব সময় জীবিত থাকতো তাহলে ঈমান অবস্থায়ই থাকতো এবং ইবাদত করতে থাকতো। এজন্যই মৃত্যুর পর সে অনন্ত কাল জান্নাতে থাকবে। পক্ষান্তরে বেঈমানরা ৬০/৭০ বছর জীবিত থাকলেও তাদের নিয়তে এটা থাকে যে, তারা যত দিন জীবিত থাকবে বেঈমান অবস্থাতেই থাকবে। তাই তারাও এরূপ বদ-নিয়তের কারণে সব সময় জাহান্নামে থাকবে।[10]

দুই. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

مَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلۡأٓخِرَةِ نَزِدۡ لَهُۥ فِي حَرۡثِهِۦۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرۡثَ ٱلدُّنۡيَا نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ  [الشورا: ٢٠

“যে পরকালের ফসল প্রত্যাশা করে আমরা তার জন্য সে ফসল আরো বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে আমরা তাকে এর কিছু দিয়ে দেই। কিন্তু পরকালে তার জন্য কিছু থাকবে না।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২০]

তিন. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

فَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنۡ خَلَٰقٖ [البقرة: ٢٠٠  

“যে সকল লোকেরা বলে যে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে দান করুন। তাদের জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই।” [সূরা  আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০০]

চার. অন্য আয়াতে আছে:

لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ  [الحج: ٣٧

“আল্লাহর কাছে কখনো এগুলোর (কুরবানীর) গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের (অন্তরের) তাক্বওয়া।” [সূরা আল-হজ, আয়ত: ৩৭]

কুরবানীর ক্ষেত্রে করবানীর জন্তুর গোশত ও রক্ত নয়; বরং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে আল্লাহর আদেশ পালন করাই কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফতী শফী রহ. লিখেন যে, কুরবানী একটি মহান ইবাদত। কিন্তু আল্লাহর কাছে এর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না এবং করবানীর উদ্দেশ্যও এগুলো নয়; বরং আসল উদ্দেশ্য জন্তুর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা এবং পূর্ণ আন্তরিকতাসহ রবের আদেশ পালন করা।[11] অন্যান্য সব ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যও তাই। সালাতে উঠা-বসা করা এবং সাওমে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকা আসল উদ্দেশ্য নয় । বরং আল্লাহর আদেশ পালন করাই আসল লক্ষ্য। আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বর্জিত ইবাদত প্রাণহীন কাঠামো মাত্র।

পাঁচ. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ (١٥) أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ (١٦) [هود: ١٥،  ١٦

“যারা পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে, আমি তাদের দুনিয়াতে ‘আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেই এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সে সব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছুই নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে আর যা কিছু উপার্জন করেছিল সবই বিনষ্ট হলো।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১৫-১৬]

মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, মায়মুন ইবনে মিহরান ও মুজাহিদ রহ.প্রমুখ উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: অত্র আয়াতে ঐ সব লোকের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে যারা তাদের যাবতীয় সৎকাজ শুধু পার্থিব ফায়দা হাসিলের জন্য করে থাকে, চাই সে আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাসী কাফির হোক অথবা নামধারী মুসলিম হোক, যে পরকালকে মৌখিক স্বীকার করেও কার্যত: সে দিকে কোনো লক্ষ্য রাখে না বরং পার্থিব লাভের দিকেই সম্পূর্ণ মগ্ন ও বিভোর থাকে।[12] সহীহ মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি যুলুম করেন না। সৎকর্মশীল মু‘মিন ব্যক্তিরা দুনিয়াতে আংশিক প্রতিদান লাভ করে থাকে এবং পূর্ণ প্রতিদান আখেরাতে লাভ করবে। আর কাফিররা যেহেতু আখেরাতের কোনো ধ্যান-ধারনাই রাখে না, তাই তাদের প্রাপ্য হিস্যা ইহজীবনেই তাদেরকে পুরোপুরি ভোগ করতে দেওয়া হয়। তাদের সৎ কার্যাবলীর প্রতিদানস্বরূপ তাদেরকে ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশ, বস্তুগত উন্নতি ও ভোগ-বিলাসের সামগ্রী দান করা হয়। অবশেষে যখন আখেরাতে উপস্থিত হবে, তখন সেখানে তাদের প্রাপ্তব্য কিছুই থাকবে না।”[13]

আয়াতটি অবতরণের প্রেক্ষাপট বা শানে নুযূল:

ইসলাম বিরোধীদেরকে যখন ‘আযাবের ভয় দেখানো হতো, তখন তারা নিজেদের দান-খয়রাত, জনসেবা ও জনহিতকর কাজসমূহকে সাফাইরূপে তুলে ধরতো। তারা বলত যে, এতসব সৎকাজ করা সত্ত্বেও আমাদের শাস্তি হবে কেন? উক্ত আয়াতে সে মনোভাবেরই জবাব দেওয়া হয়েছে। জবাবের সারকথা এই যে, প্রতিটি সৎকার্য গ্রহণযোগ্য ও পারলৌকিক মুক্তির কারণ হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে, সেটি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা মোতাবেক হতে হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তদিয় রাসূলের প্রতি ঈমানই রাখে না ,তার কার্যকলাপ গুণ-গরিমা, নীতি-নৈতিকতা প্রাণহীন দেহের ন্যায়। যার বাহ্যিক আকৃতি অতি সুন্দর হলেও আখেরাতে তার কানাকড়িরও মূল্য নেই। তবে দৃশ্যতঃ সেটা যেহেতু পুণ্যকার্য ছিল এবং তা দ্বারা বহু লোক উপকৃত হয়েছে, তাই আল্লাহ তা‘আলা এহেন তথাকথিত সৎকার্যকে সম্পূর্ণ বিফল ও বিনষ্ট করেন না; বরং এসব লোকের যা মুখ্য উদ্দেশ্য ও কাম্য ছিল যেমন তার সূনাম ও সম্মান বৃদ্ধি হবে, লোকে তাকে দানশীল, মহান ব্যক্তিরূপে স্মরণ করবে, নেতারূপে তাকে বরণ করবে ইত্যাদি আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় ইনসাফ ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে তা ইহজীবনেই দান করেন । অপরদিকে আখেরাতে মুক্তি লাভ করা যেহেতু তাদেরও কাম্য ছিলনা এবং প্রাণহীন সৎকার্য আখেরাতের অপূর্ব ও অনন্ত নি‘আমতসমূহের মূল্য হওয়ার যোগ্য ছিলনা, কাজেই আখেরাতে তার কোনো প্রতিদানও লাভ করবে না । বরং নিজেদের কুফরী, শিরকী ও গুনাহের কারণে জাহান্নামের আগুনে চিরকাল তাদের জ্বলতে হবে।

ছয়. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

 فَوَيۡلٞ لِّلۡمُصَلِّينَ (٤) ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ (٥) ٱلَّذِينَ هُمۡ يُرَآءُونَ (٦) وَيَمۡنَعُونَ ٱلۡمَاعُونَ (٧)  [الماعون: ٤،  ٧

“অতএব, দুর্ভাগ্য সে সব সালাত আদায়কারীর, যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে বে-খবর। যারা তা লোক দেখানোর জন্য করেএবং নিত্য ব্যবহার্য বস্তু অন্যকে দেয় না।” [সূরা আল-মা‘ঊন: ৪-৭]

উক্ত পাঁচটি আয়াতে  সেসব মুনাফিকদের কথা আলোচনা করা হয়েছে যারা লোক দেখানো এবং ইসলামের দাবীকে প্রমাণ করার জন্য বাহ্যত সালাতসালাত আদায় করে। কিন্তু তারা যেহেতু সালাতসালাত ফরয হওয়াকেই স্বীকার করে না তাই তারা সময়ের কোনো গুরুত্ব প্রদান করে না। তদ্রূপ মূল সালাতেও অলসতা করে- এবং তারা (مَاعُونَ) তথা যৎকিঞ্চিৎ তুচ্ছ বস্তু যেমন- কুড়াল, কোদাল, রান্না-বান্নার পাত্র, ছুরি ইত্যাদি কার্পন্যবশতঃ প্রতিবেশিদেরকে দেয় না। উক্ত আয়াতগুলোতে এ কথার প্রতি কঠোর সতর্কবাণী রয়েছে যে, লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় বা অন্য কোনো ইবাদত করা মুনাফিকদের স্বভাব।  কোনো মুসলিম যদি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ছাড়া লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করে তবে তা হবে মুনাফিকসুলভ আচরণ। যা সওয়াব প্রাপ্তির যোগ্যতা রাখে না।

সাত. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

 وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَلَا تُطِعۡ مَنۡ أَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهُۥ عَن ذِكۡرِنَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ وَكَانَ أَمۡرُهُۥ فُرُطٗا  (٢٨) [الكهف: ٢٨

“আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে। এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নেবেন না এবং যার মনকে আমার স্মরণ হতে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ২৮]

অর্থাৎআপনি নিজেকে তাদের সাথে বেঁধে রাখুন। সম্পর্ক ও মনোযোগ তাদের প্রতি নিবদ্ধ রাখুন। কাজে কর্মে তাদের থেকেই পরামর্শ নিন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, তারা খাঁটি নিয়তে সকাল সন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইবাদত ও জিকির করে। তাদের কার্যকলাপ একান্তভাবেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিবেদিত।

আট. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

 مَّن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومٗا مَّدۡحُورٗا (١٨) وَمَنۡ أَرَادَ ٱلۡأٓخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعۡيَهَا وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ كَانَ سَعۡيُهُم مَّشۡكُورٗا(١٩) [الاسراء: ١٨،  ١٩

“যারা ইহকাল কামনা করে, আমি সে সব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।  আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মু‘মিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।” [সূরা বানী ইসরাঈল: ১৮-১৯]

উপরোক্ত প্রথম আয়াতটি কাফিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যারা নিজেদের প্রত্যেক কাজকে ক্রমাগতভাবে ও সদাসর্বদা শুধু ইহকালের উদ্দেশ্যেই আচ্ছন্ন করে রাখে-পরকালের প্রতি কোনোই লক্ষ্য রাখে না। দ্বিতীয় আয়াতে মু‘মিনদের কথা বলা হয়েছে অর্থ এই যে, মু‘মিন যখনই যে কাজে পরকালের ইচ্ছা ও নিয়ত করবে, তার সে কাজ গ্রহণযোগ্য হবে। মু‘মিনের যে কর্ম খাঁটি নিয়ত সহকারে অন্যান্য শর্তানুযায়ী হবে, তা কবুল করা হবে আর  যে কর্ম এরূপ হবে না, তা কবুল করা হবে না।

নয়. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ  [البينة: ٥

“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।” [সূরা আল-বাইয়িনাহ: ০৫]

দশ. অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

 قُلۡ إِن تُخۡفُواْ مَا فِي صُدُورِكُمۡ أَوۡ تُبۡدُوهُ يَعۡلَمۡهُ ٱللَّهُۗ  [ال عمران: ٢٩

“বলুন, তোমাদের মনে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ কিংবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তা অবগত আছেন।” [সূরা আলে ইমরান: ২৯]

নিয়ত: প্রসঙ্গ আল-হাদীস

এক. উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ

“যাবতীয় কাজ/আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের তাই প্রাপ্য যার সে নিয়ত করবে। অতএব, যে ব্যক্তির হিজরত আল্লাহর উদ্দেশ্যে ও তাঁর রাসূলের জন্য হবে তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোনো মহিলাকে বিবাহ করার জন্য হবে;  তার হিজরত যে নিয়তে করবে তারই জন্য হবে।”[14]

অন্তর্ভুক্তএ হাদীসটি ইসলামী জীবনাচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। মানুষের সকল প্রকার কাজকর্মের গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য হওয়া একমাত্র তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যাবতীয় আমলের প্রতিদান পাওয়া না পাওয়া সে আমলকারীর নিয়তের খাঁটি-অখাঁটি হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। এ হাদীস দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী শরী‘আতে নিয়তের অবস্থান অতি উঁচু স্থানে। বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য হয় না। আমলের শুদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়ত। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা সকল ইবাদতে নিয়তকে খাঁটি করার  নির্দেশ দিয়েছেন। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোনো আমল কিছুতেই সঠিক হতে পারে না। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত উক্ত হাদীস থেকে এ বিষয়টিও সাব্যস্ত হয় যে, মানুষ তার নিয়ত অনুসারেই কৃতকর্মের ফলাফল লাভ করে। এমনকি সে নিজের ব্যবহারিক জীবনে পানাহার, উপবেশন, নিদ্রা ইত্যাদির ন্যায় যে কাজগুলো সে অভ্যাস-বশে সম্পাদন করে সে সব কাজও সদিচ্ছা এবং সৎ নিয়তের কারণে পুণ্যময় আমলে পরিণত হতে পারে। পারে সওয়াব অর্জনের মাধ্যম হতে। যেমন কেউ হালাল খাবার খাওয়ার সময় উদর ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইবাদতের জন্য শক্তি ও সক্ষমতা  লাভের নিয়তও যদি করে নেয় তাহলে এর জন্য সে অবশ্যই সওয়াবের অংশিদার হবে।

এমনিভাবে মনোমুগ্ধকর ও মনোরঞ্জক যে কোনো বৈধ বিষয়ও নেক নিয়তের সঙ্গে উপভোগ করলে তা ইবাদতে রূপান্তরিত হয়। উক্ত হাদীসে এ বিষয়টিও লক্ষ্যনীয় যে, নিয়তের সম্পর্ক অন্তরের সাথে। কাজেই কোনো ইবাদতের সময় ‘নিয়তের দো‘আ’ জাতীয় কিছু  মুখে উচ্চারণ করা যাবে না; কাজের সাথে অন্তরের উদ্দেশ্যেরও সমন্বয় থাকতে হবে। বরং মুখে উচ্চারণের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তি জোহরের সালাত আদায় করার সময় অন্তরে জোহরের সালাত আদায় করার নিয়ত করে আর মুখে অন্য সালাতের কথা এসে যায় । তাহলে তার জোহরের সালাতই আদায় হবে। এতে জোহরের সালাতের নিয়তের কোনো ত্রুটি হবে না।[15]

দুই. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

يَغْزُو جَيْشٌ الْكَعْبَةَ، فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنْ الْأَرْضِ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ، قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ! كَيْفَ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَفِيهِمْ أَسْوَاقُهُمْ وَمَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ؟ قَالَ: يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ، ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيَّاتِهِمْ

“একটি বাহিনী কা‘বা ঘরের উপর আক্রমন করার উদ্দেশ্যে বের হবে। অতঃপর যখন তারা সমতল মরুপ্রান্তরে পৌছবে তখন তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তি সকলকেই যমীনে ধসিয়ে দেয়া হবে । তিনি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন যে, আমি (এ কথা শুনে) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তাদের প্রথম ও শেষ সকলকেই ধসিয়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের মধ্যে তাদের বাজারের ব্যবসায়ী এবং এমন লোক থাকবে যারা তাদের (আক্রমণকারীদের) অন্তর্ভুক্তঅন্তর্ভুক্ত নয়। তিনি বললেন, তাদের প্রথম ও শেষ সকলকেই ধসিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তাদেরকে তাদের নিয়ত অনুযায়ী পুনরুত্থিত করা হবে।”[16]

অর্থাৎ, বাহ্যত কা‘বা ঘরের উপর আক্রমনকারীদের দলভুক্ত থাকার কারণে সকলকেই ধসিয়ে দেওয়া হলেও কিয়ামত দিবসের চূড়ান্ত হিসাব নিয়তের ভিত্তিতেই হবে।

তিন. অন্যত্র আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لاَ هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا»

“মক্কা বিজয়ের পর (মক্কা থেকে) হিজরত নেই; বরং বাকী আছে জিহাদ ও নিয়ত। সুতরাং যদি তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাক দেওয়া হয় তাহলে তোমরা বেরিয়ে পড়।”[17]

চার. আবু আব্দুল্লাহ জাবের ইবন আব্দুল্লাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত; তিনি বলেন:

كُنَّا مَعَ النَّبيِّ ﷺ في غَزَاةٍ، فَقالَ : إِنَّ بالمدِينَةِ لَرِجَالاً ما سِرْتُمْ مَسِيراً، وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِياً، إلاَّ كَانُوا مَعَكمْ حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক অভিযানে ছিলাম। তিনি বললেন, মদীনাতে কিছু লোক এমন আছে যে, তোমরা যত সফর করছ এবং যে কোনো উপত্যকা অতিক্রম করছ, তারা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। অসুস্থতা তাদেরকে মদীনায় থাকতে বাধ্য করেছে।”[18]

অর্থাৎ পূর্ণ নিয়ত বা সদিচ্ছা থাকার পরও অসুস্থতার কারণে যারা অভিযানে অংশ নিতে পারে নি, শুধুমাত্র নিয়তের কারণে তারাও অভিযান পরিচালনাকারীদের সমপরিমান সাওয়াবের অধিকারী হবে।

পাঁচ. অন্য হাদীসে এসেছে,

وعَنْ أَبِي يَزيدَ مَعْنِ بنِ يَزيدَ بنِ الأخنسِ رضي الله عنه، وهو وأبوه وَجَدُّه صحابيُّون، قَالَ : كَانَ أبي يَزيدُ أخْرَجَ دَنَانِيرَ يَتَصَدَّقُ بِهَا، فَوَضعَهَا عِنْدَ رَجُلٍ في الْمَسْجِدِ، فَجِئْتُ فأَخذْتُها فَأَتَيْتُهُ بِهَا . فقالَ: واللهِ، مَا إيَّاكَ أرَدْتُ، فَخَاصَمْتُهُ إِلى رسولِ اللهِ ﷺ ، فقَالَ: لكَ مَا نَوَيْتَ يَا يزيدُ، ولَكَ ما أخَذْتَ يَا مَعْنُ

“আবূ ইয়াযীদ মা‘ন ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আখনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু- তিনি (মা‘ন) এবং তার পিতা ও দাদা সকলেই সাহাবীবলেন: আমার পিতা ইয়াযীদ দান করার জন্য কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা বের করলেন। অতঃপর তিনি সেগুলো (দান করার জন্য) মসজিদে একটি লোককে দায়িত্ব দিলেন। আমি মসজিদে এসে তার কাছ থেকে অন্যান্য ভিক্ষুকের মত তা নিয়ে নিলাম এবং তা নিয়ে বাড়ি এলাম। (যখন আমার পিতা এ ব্যাপারে অবগত হলেন তখন) বললেন, আল্লাহর কসম! ‘তোমাকে দেওয়ার নিয়ত আমার ছিল না’। ফলে (এগুলো আমার জন্য হালাল হবে কি না তা জানার জন্য) আমি আমার পিতাকে নিয়ে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, ‘হে ইয়াযীদ! তোমার জন্য সে বিনিময় রয়েছে যার নিয়ত তুমি করেছ আর হে মা‘ন! তুমি যা নিয়েছ তা তোমার জন্য হালাল’।”[19]

আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আতের সর্বসম্মতিক্রমে আকীদাহ হলো পিতা কর্তৃক নিজ সন্তানকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। এভাবে যাকাত আদায় হবে না।[20] কিন্তু উক্ত হাদীসে দেখা যাচ্ছে, পিতার যাকাতের টাকা পুত্র গ্রহণ করেছে। তথাপি পিতা কর্তৃক পুত্রকে দেওয়ার নিয়ত না থাকার কারণে এবং পুত্রের তা গ্রহণ করার সময় পিতার যাকাত হওয়ার কথা নিয়তে (জানা) না থাকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে ইয়াযীদ! তোমার জন্য সে বিনিময় রয়েছে যার নিয়ত তুমি করেছ আর হে মা‘ন! তুমি যা নিয়েছ তা তোমার জন্য হালাল।

ছয়. অন্য হাদীসে সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাসকে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«وَإنَّكَ لَنْ تُنفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغي بِهَا وَجهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ في فِيِّ امْرَأَتِكَ»

 “মনে রেখ, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তুমি যা ব্যয় করবে তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও তুমি বিনিময় পাবে।”[21]

স্ত্রীর মুখে গ্রাস তুলে দেওয়া নিত্য প্রয়োজনীয় একটি পার্থিব কাজ মাত্র। তথাপিও নিয়ত বিশুদ্ধ রেখে শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তা করলে তারও বিনিময় বা সাওয়াব পাওয়া যাবে।

সাত. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«إنَّ الله لاَ ينْظُرُ إِلى أجْسَامِكُمْ، وَلاَ إِلَى صُوَرِكمْ، وَلَكن ينْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعمَالِكُم»

“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও ‘আমল দেখেন।”[22]

অর্থাৎ আমল ও আকৃতি মৌলিক বিষয় নয়; বরং নিয়তই মূল।

আট. আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত:

سُئِلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَنِ الرَّجُلِ يُقاتلُ شَجَاعَةً، ويُقَاتِلُ حَمِيَّةً، ويُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذٰلِكَ في سبيلِ الله ؟ فَقَالَ رَسُول الله: مَنْ قَاتَلَ لِتَكونَ كَلِمَةُ اللهِ هي العُلْيَا، فَهوَ في سَبِيلِ اللهِ

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য যুদ্ধ করে; এবং লোক দেখানোর (সুনাম অর্জনের) জন্য যুদ্ধ করে, এর কোনো যুদ্ধটি আল্লাহর পথে হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করার জন্য যুদ্ধ করে একমাত্র তারই যুদ্ধ আল্লাহর পথে হয়।”[23]

দেখুন, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য যুদ্ধ করাও -চাই সেটি মুসলিমদের পক্ষেই হোক না কেন- আল্লাহর পথের জিহাদ নয়। একমাত্র আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করার নিয়তই জিহাদ কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত।

নয়. আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

إِذَا التَقَى المُسلِمَان بسَيْفَيهِمَا فالقَاتِلُ وَالمَقْتُولُ في النّارِ قُلتُ : يا رَسُولَ اللهِ! هَذا القَاتِلُ فَمَا بَالُ المقْتُولِ ؟ قَالَ: إنَّهُ كَانَ حَريصاً عَلَى قتلِ صَاحِبهِ

“যখন দু‘জন মুসলিম তরবারী নিয়ে পরস্পরে লড়াই করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’ জনই জাহান্নামে যাবে। (বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন) আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কী?’ তিনি বললেন, ‘‘সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য লালায়িত ছিল’’।[24]

দেখুন, নিহত ব্যক্তির প্রতিপক্ষকে হত্যা করার নিয়ত, সংকল্প বা হত্যা করার জন্য লালায়িত থাকাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

দশ. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত:

عَن رَسُول الله ﷺ، فِيمَا يَروِي عَن رَبّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالى، قَالَ: إنَّ اللهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذلِكَ، فَمَنْ هَمَّ بحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَها اللهُ تَبَارَكَ وتَعَالى عِنْدَهُ حَسَنَةً كامِلَةً،وَإنْ هَمَّ بهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ عَشْرَ حَسَناتٍ إِلى سَبْعمئةِ ضِعْفٍ إِلى أَضعَافٍ كَثيرةٍ، وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ تَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً، وَإنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً

“ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান রব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ পুণ্য ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোনো নেকী করার সংকল্প করে কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত করতে পারে না, আল্লাহ তা‘আলা (শুধু নিয়ত করার বিনিময়ে) তাকে একটি পূর্ণ নেকী লিখে দেন । আর সে যদি সংকল্প করার পর কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুণ বরং তার চেয়েও অনেক গুণ বেশি নেকী লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার সংকল্প করে কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার নিকট একটি পূর্ণ নেকী হিসাবে লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর ঐ পাপ কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন। [25]

এগার. আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,

انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَوْا الْمَبِيتَ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنْ الْجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمْ الْغَارَ فَقَالُوا إِنَّهُ لَا يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلًا وَلَا مَالًا فَنَأَى بِي فِي طَلَبِ شَيْءٍ يَوْمًا فَلَمْ أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدْتُهُمَا نَائِمَيْنِ وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلًا أَوْ مَالًا فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ أَنْتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الْفَجْرُ فَاسْتَيْقَظَا فَشَرِبَا غَبُوقَهُمَا اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لَا يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ الْآخَرُ اللَّهُمَّ كَانَتْ لِي بِنْتُ عَمٍّ كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ فَأَرَدْتُهَا عَنْ نَفْسِهَا فَامْتَنَعَتْ مِنِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بِهَا سَنَةٌ مِنْ السِّنِينَ فَجَاءَتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفَعَلَتْ حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا قَالَتْ لَا أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الْخَاتَمَ إِلَّا بِحَقِّهِ فَتَحَرَّجْتُ مِنْ الْوُقُوعِ عَلَيْهَا فَانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ فَانْفَرَجَتْ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ الثَّالِثُ اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ فَأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهَبَ فَثَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الْأَمْوَالُ فَجَاءَنِي بَعْدَ حِينٍ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِي فَقُلْتُ لَهُ كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أَجْرِكَ مِنْ الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ وَالْغَنَمِ وَالرَّقِيقِ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ لَا تَسْتَهْزِئُ بِي فَقُلْتُ إِنِّي لَا أَسْتَهْزِئُ بِكَ فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فَاسْتَاقَهُ فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ فَانْفَرَجَتْ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ

“তোমাদের পূর্বে (বনী ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি একদা সফরে বের হল। চলতে চলতে রাত এসে গেল। তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত-গুহায় প্রবেশ করল। কিছুক্ষণ পরেই একটি বড় পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, এ বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে ওসীলা বানিয়ে আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। সুতরাং তারা স্ব স্ব আমলের ওসীলায় আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে লাগল।

তাদের মধ্যে একজন বলল: হে আল্লাহ! তুমি জান যে, আমার অত্যন্ত বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল এবং আমি সন্ধ্যাবেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসী কাউকেই পান করাতাম না। একদিন আমি ঘাসের খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ি ফিরে দেখতে পেলাম যে, পিতা-মাতা ঘুমিয়ে গেছে। আমি সন্ধ্যার দুধ দোহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম তারা ঘুমিয়ে আছে। আমি তাদেরকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসীকে দুধ পান করাই। তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবে ফজর উদয় হয়ে গেল এবং তারা জেগে উঠল। তারপর তারা নৈশদুধ পান করল । হে আল্লাহ!  আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য করে থাকি, তাহলে পাথরের কারণে যে আমরা গুহায় বন্দি হয়ে আছি এ থেকে তুমি আমাদেরকে উদ্ধার কর। এই দো‘আর ফলস্বরূপ পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

দ্বিতীয়জন দো‘আ করল: ‘হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সে আমার নিকট সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। (অন্য বর্ণনা মতে) আমি তাকে এত বেশি ভালোবাসতাম, যত বেশি ভালো পুরুষরা নারীদেরকে বাসতে পারে। একবার আমি তার কু-কর্মের ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল। পরিশেষে সে যখন এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল, তখন সে আমার কাছে এল। আমি তাকে এ শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম যেন সে আমার সঙ্গে কু-কর্মে লিপ্ত হয়। এতে সে (অভাবের তাড়নায়) রাজি হয়ে গেল। অতঃপর যখন আমি তাকে আয়ত্তে পেলাম। (অন্য বর্ণনা মতে) যখন আমি তার দু‘পায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে বলল, তুমি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং অবৈধভাবে আমার পবিত্রতা নষ্ট করো না। এটা শুনে আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল। এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তাও পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি তাহলে আমাদের উপর পতিত মুসীবতকে দূরীভূত কর।’ এই দো‘আর ফলস্বরূপ পাথর আরো কিছুটা সরে গেল কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

তৃতীয়জন দো‘আ করল: ‘হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। কাজ শেষ হলে আমি তাদের সকলকে মজুরি দিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মজুরি না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরির টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলাম। (কিছুদিন পর) তা থেকে প্রচুর অর্থ জমে গেল । অনেক দিন পর একদিন ঐ মজুর এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা তুমি আমার মজুরি দিয়ে দাও । আমি বললাম, এসব উট, গাভী, ছাগল এবং গোলাম যা তুমি দেখছ সবই তোমার মজুরির ফল। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করছ। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না (সত্য কথাই বলছি)। সুতরাং আমার কথা শুনে সে তার সমস্ত মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি তাহলে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা তুমি দূরীভূত কর। এই দো‘আর  ফলে পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সকলে (গুহা থেকে) বের হয়ে চলতে লাগল।[26]

বিশুদ্ধ নিয়তে সম্পাদিত আমল আল্লাহর নিকট অতি পছন্দনীয়। উক্ত ঘটনায় তিন ব্যক্তি তাদের বিশুদ্ধ নিয়তে সম্পাদিত আমলের উসিলায় বিপদ মুক্তির জন্য দো‘আ করার সাথে সাথেই তা গ্রহণ করা হয়েছে।

বারো. উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

لا عمل لمن لا نية له، ولا أجر لمن لا حسبة له

“যার নিয়ত নেই তার কোনো আমল নেই। এবং যার কোনো সাওয়াবের উদ্দেশ্য নেই তার কোনো পুরস্কার  নেই।”[27]

তেরো. আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

لا ينفع قول إلا بعمل، ولا عمل إلا بنية، ولا ينفع قول ولا عمل ولا نية إلا بما وافق السنة

“কাজ বা আমল ছাড়া কথায় কোনো ফল নেই। আর বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত কাজ বা আমল অসার। আবার কর্ম, কথা ও নিয়ত কোনোটিই কাজে আসবে না, যতক্ষণ না তা রাসূলের সুন্নাতের অনুসারে করা হবে।[28]

চৌদ্দ. অন্য হাদীসে এসেছে:

إنما هي أهل الدنيا أربعة نفر عبد رزقه الله فيها مالا وعلما فهو يتقي فيه ربه ويصل فيه رحمه ويعمل لله فيه بحقه فهذا بأفضل المنازل وعبد رزقه الله علما ولم يرزقه مالا فهو صادق النية يقول : لو أن لي مالا عملت بعمل فلان فأجرهما سواء

“পৃথিবী তো চার শ্রেণির লোকের, এক শ্রেণির লোক রয়েছে যাকে আল্লাহ তা‘আলা ইলম ও সম্পদ দুটিই দিয়েছেন। সে ইলম অনুযায়ী আমল করা ও সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। এ হলো সর্বোৎকৃষ্ট শ্রেণি। আবার এমন শ্রেণির ব্যক্তিও রয়েছে যাকে আল্লাহ ইলম দিয়েছেন কিন্তু সম্পদ দেন নি। সে বিশুদ্ধ নিয়তের অধিকারী। সে মনে মনে বলে- ‘যদি আল্লাহ আমাকে সম্পদ দিতেন তাহলে আমি তাঁর সন্তুষ্টির জন্য অমুক অমুক কাজ করতাম’। এ উভয় শ্রেণির সাওয়াব সমান।”[29]

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে  বিশুদ্ধ নিয়তে যাবতীয় আমল সম্পাদন করার  তাওফীক দান করুন। আমীন।

সমাপ্ত

………………………………………………………………

[1]. লিসানুল আরব (১৪/৩৭৮), আল-মু‘জামুল ওয়াফী (১০৯১)

[2]. ইযাহুল মিশকাত বাংলা (১/২৪৭)

[3]. بدائع الفوائد [৩/১৯০], ডক্টর ওসমান শাব্বীর: القواعد الكلية والضوابط الفقهية[৯৩-৯৪],

[4]. আল-মানসূর ফিল কাওয়ায়েদ, খ-৩, পৃষ্ঠা-২৮৪।

[5]. আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ের (৩০)

[6]. তাফসীরে কুরতুবি এর সূত্রে মা‘আরিফুল কুরআন বাংলা (মুফতী শফী রহ.) [১১৭২]।

[7]. মাআরিফুল কুরআন বংলা: মুফতী শফী রহ. [১১৭৩]

[8]. বুখারী: খণ্ড-২ অধ্যায় ৫৮।

[9]. যাদুদ দা-‘য়িয়াহ: [৬]

[10]. কাশফুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী [১/৪৮৮]।

[11]. আল্লামা মুফতী শফী রহ.: মা‘আরিফুল কুরআন বাংলা [৯০২]।

[12]. মুফতী শফী রহ., তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন বাংলা [৬২৫]।

[13]. মুফতী শফী রহ., তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন বাংলা [৬২৪-৬২৫]।

[14]. বুখারী, হাদীস নং [৬৬৮৯],  মুসলিম হাদীস নং [৫০৩৬]।

[15]. আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ:  الفتاوى الكبرى(১/২১৪-২১৫)

[16]. বুখারী, হাদীস নং [২১১৯]

[17]  বুখারী [২৮২৫] মুসলিম [৪৪৫]

[18]. মুসলিম [৫০৪১]

[19] . বুখারী [১৪২২]

[20]. হিদায়া, কিতাবুয্-যাকাত (১/৯৫)

[21]. বুখারী [১২৯৫, ৬৩৭৩]।

[22]. মুসলিম [৬৭০৮]

[23] . বুখারী [২৮১০], মুসলিম  [৫০২৮]।

[24]. বুখারী,[৬৮৭৫] মুসলিম [৭৪৩৫]।

[25]. মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৫, সহীহ ইবন হিব্বান [১০৫]।

[26]. বুখারী [২২৭২], মুসলিম [১০০]।

[27]. যাদুদ দায়িয়াহ [৬]।

[28]. যাদুদ দায়িয়াহ [৬]।

[29]. তাবরানী [৩৪৫]।

উহুদ শহীদগণের কবরস্থান যিয়ারতের বিধান

$
0
0

Mount-Uhud-Cemetery-Where-Hamzah-ra-and-Other-Martyrs-are-Buried-Photos-of-Mount-Uhud-

অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফফান | সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

প্রথমত: স্থান পরিচিতি

উহুদ: মদীনার একটি প্রসিদ্ধ পাহাড়। বর্তমানেও এ নামে প্রসিদ্ধ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড় সম্পর্কে বলেন:

“উহুদ আমাদেরকে ভালোবাসে আমরাও তাকে ভালোবাসি।”[1]

এ উহুদে সেই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল, যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হামযা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুসহ মুসলিমদের সত্তর জন শহীদ হন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁত ভাঙ্গে ও তাঁর সম্মানিত চেহারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

এ ঘটনা ঘটে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরতের তৃতীয় বছর, দু’বছর নয় মাস সাত দিন পর।[2]

দ্বিতীয়ত: যিয়ারতের বিধান এবং যিয়ারতকারী যা বলবে

উহুদ শহীদগণের কবরস্থানে গিয়ে তাদের প্রতি সালাম ও তাদের জন্য দো‘আ করার উদ্দেশ্যে যিয়ারত করা পুরুষদের ক্ষেত্রে শরী‘আতসম্মত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কবর যিয়ারত করেন।

তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমরা বের হলাম, তিনি তখন উহুদ শহীদগণের কবরস্থান অভিমুখী হন। যখন আমরা হাররা ওয়াকিম দেখতে পেলাম এবং তাঁর নিকট হলাম, তখন দেখা গেল সেখানে বেশ কিছু কবর। তিনি বললেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, এগুলো কি আমাদের ভাইগণের কবর? তিনি বলেন: “আমাদের সঙ্গীদের কবর।” অতঃপর যখন (উহুদ) শহীদগণের কবরের নিকট আসলাম, তিনি বললেন: “এ কবরগুলো আমাদের ভাইদের।”[3]

এ কবরস্থানের জন্য কোনো নির্ধারিত দো‘আ নেই। অবশ্য সেই দো‘আই করবে যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। যখন তারা কবরস্থান যিয়ারত করতেন তখন বলতেন:

«السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، يرحم الله المستقدمين منكم والمستأخرين، نسأل الله لنا ولكم العافية»

“হে মুমিন কবরবাসীগণ আপনাদের প্রতি সালাম, নিশ্চয় আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আপনারা যারা অগ্রগামী হয়েছেন ও যারা পরবর্তীতে আসবে, আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন! আমরা আমাদের ও আপনাদের জন্য নিরাপত্তা চাই।”[4]

পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত করা জায়েয নেই, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لعن الله زوارات القبور».

“‘আল্লাহ বেশি বেশি কবর যিয়ারতকারীনিদের প্রতি লা‘নত করেন।”[5]

তৃতীয়ত: উহুদের পাদদেশে যে সব শহীদকে দাফন করা হয়

জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে প্রত্যেক দু’জনকে এক কাপড়ে জমা করেন ও বলেন: “তাদের মধ্যে কুরআন কার বেশি মুখস্ত আছে? যখন তাদের উভয়ের মধ্যে কারো প্রতি ইঙ্গিত করা হত, তিনি তাকে কবরে আগে রাখতেন এবং বলতেন আমি তাদের ওপর সাক্ষী রইলাম।” আর তিনি জানাযা ও গোসল না দিয়েই তাদেরকে তাদের রক্তমাখা অবস্থায় দাফন করার হুকুম দেন।

উহুদে দাফনকৃত শহীদগণের উল্লেখযোগ্য:

হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, মুস‘আব ইবন উমাইর, আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম, আমর ইবন জামূহ, সা‘দ ইবন রাবী‘, খারেজা ইবন যায়েদ, নু‘মান ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ।[6]

ইবন নাজ্জার বলেন: “বর্তমানে শহীদগণের কবরগুলোর মধ্যে হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর ব্যতীত কারো কবর চেনা যায় না….। সেখানে অবশিষ্ট কবরগুলোর জন্য কিছু পাথর স্থাপন করা আছে, যাতে বলা হয় যে, সেগুলো তাদের কবর…।”[7]

ইমাম ত্বাবারী বলেন: “উহুদ পাহাড়ের কিবলামুখী শহীদগণের কবর রয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে নিহত হন। তাদের মধ্যে হামযা ও তার ভাগ্নে আব্দুল্লাহ ইবন জাহাশের কবর ব্যতীত কারো কবর জ্ঞাত নয়। হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত বরণের স্থানের উত্তরে বেশ কিছু পাথর রয়েছে, সে সম্পর্কে বলা হয়, তা হলো শহীদগণের কবর। অনুরূপ তার শাহাদাতের স্থানের পশ্চিম পার্শ্বেও বেশ কিছু পাথর রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারেও বলা হয়ে থাকে যে, সেগুলোও শহীদগণের কবর; কিন্তু তা সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয় নি। কোনো কোনো “আল-মাগাযী” গ্রন্থে রয়েছে, এ কবরগুলো ঐ সমস্ত লোকেরা যারা নিহত হয়েছে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালে রামাদার বছর।[8]

চতুর্থ: এখানে সংঘটিত কতিপয় সুন্নাত পরিপন্থী বিষয় যাতে পতিত হওয়া থেকে সতর্ক হওয়া জরুরি:

যিয়ারতকারীর জন্য যিয়ারতের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত পদ্ধতি নিশ্চিত হওয়া এবং সুন্নাত পরিপন্থী বিষয়ে পতিত হওয়া থেকে সতর্ক হওয়া জরুরি, যা তাকে গুনাহে পতিত করে ছাড়বে বা তার সওয়াব কমিয়ে দেবে। নিম্নে এমন কতিপয় সুন্নাত পরিপন্থী বিষয় উল্লেখ করা হলো যাতে কোনো কোনো যিয়ারতকারী পতিত হয়ে থাকে, যেন যিয়ারতকারীগণ তাতে পতিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে:

১. উহুদের শহীদগণের কবর যিয়ারতের জন্য বৃহস্পতিবারকে নির্ধারণ করে নেওয়া।

২. উহুদের শহীদগণকে আহ্বান করা, বিশেষ করে হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। অনুরূপ তাদের নিকট ফরিয়াদ করা, সাহায্য কামনা করা ও তাদের জন্য মানত করা।

৩. হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহু বা অন্যান্য উহুদের শহীদগণের কবর যিয়ারতের জন্য কিছু কিছু দো‘আ নির্ধারণ করে নেওয়া।

৪. যিয়ারতকারীর মাথা নিচু করে উভয় হাত বুকে বা নাভীর নিচে বেঁধে সালাতে দাঁড়ানোর মতো দণ্ডায়মান হয়ে অবস্থান করা।

৫. কবরস্থান বা পার্শ্ববর্তী চত্তরে শস্য দানা, খাদ্যদ্রব্য বা টাকা-পয়সা নিক্ষেপ করা।

৬. নারী-পুরুষের অবাধ সংমিশ্রণ, যার ফলে সাধারণত ফিতনা সংঘটিতও হয়ে থাকে।

৭. নারীদের কবর যিয়ারত করা।

৮. কবরস্থানের জানালার গ্রীলে নেকড়া-সুতা বাঁধা।

৯. শহীদগণের কবরে বিলাপ ও কান্না-কাটি করা।

১০. যিয়ারতকারীর পক্ষ থেকে ‘রূমাহ’ পাহাড়ে আরোহণ করে বরকত গ্রহণ, এমন বিশ্বাস করে যে এখানে কতিপয় সাহাবীর পদচারণা হয়েছে।

১১. “রূমাহ” পাহাড়ের পাথর দ্বারা বরকত গ্রহণ ও তার দিকে ফিরে সালাত আদায় ও তার উপর সাজদাহ করা।

১২. উহুদ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হওয়া, সেখানে গিয়ে নেকড়া-সুতা বাঁধা এবং আল্লাহ যে সব দো‘আর অনুমতি দেন নি এমন এমন দো‘আয় সচেষ্ট হওয়া।

১৩. কোনো কোনো স্থান যিয়ারত করা এমন বিশ্বাস করে যে, সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিহ্ন রয়েছে। যেমন, কোন পাথরে।

সমাপ্ত

………………………………………………………………………………………..

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৬৫

[2] দেখুন: মু‘জামুল বুলদান: ১/১০৯ ইত্যাদি গ্রন্থ।

[3] মুসনাদে ইমাম আহমাদ: ১/১৬১, আবু দাঊদ, হাদীস নং ২০৪৩

[4] সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ৯৭৪

[5] তিরমিযী, হাদীস নং ৩/৩৭২

[6] ওয়াকেদী রচিত আল-মাগাযী: ১/৩১০

[7] দেখুন: আদ- দুররাতুস সামীন, পৃ: ৯৮-৯৯

[8] দেখুন: আত-তা‘রীফ: ১২৫-১২৬

Source: IslamHouse.Com

বই –আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবেন কিভাবে?

$
0
0

লেখকঃ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল মাদানী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ

আল্লাহর প্রিয় ও মাহবুব বান্দা হওয়া কী সম্ভব?
আল্লাহ কি তাঁর কোন বান্দাকে ভালবাসেন?
হ্যাঁ, সম্ভব এবং আল্লাহ তাঁর কিছু সংখ্যক বান্দাকে ভালবাসেন।

কেউ আল্লাহকে ভালবাসলে বা কেউ আল্লাহকে ভালবাসার দাবী করলেই যে, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন তা বলা অসম্ভব। অসংখ্য মানুষ আল্লাহর ভালবাসার দাবীদার। কিন্তু সত্যিকারে আল্লাহ তায়ালা কাকে ভালবাসেন এবং কাকে ভালবাসেন না তা একমাত্র আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবার জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান ও আমল।

আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীস এবং সালাফে সালেহীনদের নির্ভরযোগ্য বাণীসমূহ দ্বারা “আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবেন কিভাবে?” বিষয়ে আপনাদেরকে এ ছোট বইটি উপহার দিচ্ছি।

তাই দেরি না করে আমরা আজ থেকেই সঠিক জ্ঞানার্জন ও অমল করা শুরু করে দেই।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার একান্ত মাহবুবপ্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন

 

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবেন কিভাবে?- QA Server
আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবেন কিভাবে? – Mediafire


পরাজিত মানসিকতার মুসলিম

$
0
0

লেখকঃ আবু হামযা

195

‘তারবিয়াহ’ একটি আরবি শব্দ যার ভাষাগত অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি করা, জন্মানো, উন্নতি ইত্যাদি। প্রচলিত অর্থে, তারবিয়াহ’ মানে হচ্ছে মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে উন্নত করা ও প্রশিক্ষণ দান । তাকওয়া, ইলম অর্জন, অন্যদের ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দান এগুলো সবই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তারবিয়াহ’র অন্তর্ভুক্ত তবুও কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে মুসলিমদের মানসিকতা উন্নয়ন কিংবা ‘তারবিয়াহ’র বিষয়টি হয়তো সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে কিংবা সচেতনভাবে বাদ দেয়া হচ্ছে। এমন একটি ভুলে যাওয়া বিষয় হচ্ছে, কিভাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর অনুসারীদের মাঝে একটি বিজয়ী মন মানসিকতা রেখে গিয়েছিলেন, তাদের মাঝে তিনি এই বিজয়ী মানসিকতার লালন ও বৃদ্ধি শিখিয়েছেন। বর্তমান সময়ের মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিজয়ী মানসিকতা কিংবা এর লালন, বৃদ্ধি করা এগুলো নেই, অনুপস্থিত।
● সারা দুনিয়াজুড়ে মুসলিমদের আজ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা, নির্যাতন, নিপীড়নের এক অভিন্ন চিত্র সবখানে প্রতিফলিত হচ্ছে। এ কারণে এই কঠিন সময়ে এটা কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয় যে, মুসলিমদের সেই বিজয়ী মন মানসিকতা আর নেই, বরং তাদেরকে গ্রাস করেছে একটি বিপরীত পরাজিত ক্ষমাপ্রার্থী মানসিকতা। আর এটা যুলুম নির্যাতনের একটি সহজাত ও অনিবার্য ফলাফল। যত বেশি আপনি যুলুম নির্যাতনের ভিকটিম হবেন, তত বেশি আপনার মাঝে তৈরি হবে ভিকটিম মানসিকতা বা পরাজিত মানসিকতা, ক্ষমাপ্রার্থী মনোভাব, কিছু হলেই আপনি ভাবতে শুরু করবেন কিভাবে নিজেকে যুলুমের হাত থেকে রক্ষা করবেন, কুফফারদের থেকে নিজের পিঠ বাঁচাতে কি অজুহাত প্রদর্শন করবেন -এই মানসিকতা। এই পরাজিত অজুহাত প্রদর্শনকারী ক্ষমাপ্রার্থী মানসিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হচ্ছে, নিজের অবস্থানের উপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা, তা থেকে উত্তরণে অপারগতা প্রকাশ করা এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার প্রচেষ্টা । অতিরিক্ত রয়েছে হতাশা ও নিষ্কর্ম মনোভাব এর জন্মলাভ।

● এটা সেই পরাজিত মানসিকতা যা উম্মাহকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে এবং সমাজ বা আমাদের পরিবেশকে বর্তমান শোচনীয় অবস্থা থেকে উন্নত করে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দখলদারদের থেকে আমাদের মুসলিম ভূমিকে মুক্ত করা, ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা, দীন কায়েম করা কিংবা চূড়ান্ত লক্ষ্য জান্নাতুল ফিরদাউস অর্জন – এগুলোর পথে বড় বাধা আমাদের পরাজিত মানসিকতা।

●●► অনাকাংক্ষিতভাবে, এই পরাজিত মানসিকতা নিজেই একটি অভিশাপ। যত বেশি আপনি অজুহাত প্রদর্শনকারী পরাজিত মানসিকতার অধিকারী হবেন, এটা আপনাকে আরও পেঁচিয়ে ধরবে, এরপর তা আরও বাড়তে থাকবে, এটা থেকে কোন মুক্তি নেই, চক্রাকারে কেবল আপনাকে নিচের দিকে টেনে নামিয়ে নিয়ে যাবে। যারা সত্যিকারের ভিকটিম, তাদের সমবেদনা প্রাপ্য; কিন্তু অধিকাংশ সময়েই যারা নিজেরা পরাজিত মানসিকতার শিকার তাদের দুরবস্থার জন্য সমব্যথা অনুভব করাটাও কঠিন। এমনকি তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে কারণ তারা এমনভাবে কথা বলে, আচরণ করে বা বিশ্বাস করে যে, যেন তারা একটি ক্রমিক ক্ষয়ের মধ্যে রয়েছে !

●●► অথচ আমরা যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের দিকে মনোযোগী হই, আমরা দেখতে পাই যে তিনি এবং তাঁর সাথীরা সম্মুখীন হয়েছিল এরচেয়েও অনেক কঠিন অত্যাচার-নির্যাতনের। এত কিছুর পরেও তারা নিজেদের মানসিকতার পরাজয় ঘটতে দেননি। বরং, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মাঝে যে মানসিকতার বৃদ্ধি ঘটিয়েছিলেন ও লালন করেছিলেন তাতে তাঁরা শিখেছিলেন ও মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন যে তারাই সেই সকল লোক যারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করছেন আর জীবন ব্যবস্থা বা সিস্টেম হিসেবে ইসলাম চূড়ান্তভাবে বিজয় ও সফলতা লাভ করবে। তাদের প্রতি হুমকি আর যুলুম যত বেশি কঠিন হতো, তাঁরা তাদের মন মানসিকতাকে তার চেয়েও বেশি ইতিবাচক করে নিতেন।

উদাহরণস্বরূপ, খাববাব ইবন আল-আরাত রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য সাহাবীরা একবার আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে তাদের উপর চলমান অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে অনুযোগ অভিযোগ পেশ করলেন। তাঁরা চাইলেন, তিনি যেন তাদের জন্য মুশরিকদের বিরুদ্ধে দুয়া করেন ও আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন।

 বুখারী ৩৫৭৩ ৬ষ্ঠ খণ্ড হতে, “…আমি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে হাযির হলাম। তখন তিনি তাঁর নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে কা’বা গৃহের ছায়ার বসে বিশ্রাম গ্রহণ করছিলেন। আমরা মুশরিকদের পক্ষ থেকে কঠিন নির্যাতন ভোগ করছিলাম। তাই আমি বললাম, আপনি কি (আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তার)জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন না? তখন তিনি উঠে বসলেন এবং তাঁর চেহারা রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদারদের মধ্যে কারো কারো শরীরের হাড় পর্যন্ত সমস্ত মাংস ও শিরা উপশিরাগুলি লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে বের করে ফেলা হত। কিন্তু এসব নির্যাতনও তাদেরকে দীন থেকে বিমুখ করতে পারতো না। তাঁদের মধ্যে কারো মাথার মধ্যবর্তী স্থানে করাত স্থাপন করে তাকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হত। কিন্তু এ নির্যাতনও তাঁদেরকে তাঁদের দীন থেকে ফিরাতে পারতো না। আল্লাহর কসম, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এ দীনকে পরিপূর্ণ করবেন,ফলে একজন উষ্ট্রারোহী সান’আ থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সে ভয় করবে না”। রাবী (র) আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেন “এবং তার মেষ পালের উপর নেকড়ে বাঘের আক্রমণে সে ভয় করবে না”।

এরকম বিপরীত প্রতিক্রিয়ার কারণ ছিল এই যে, তিনি সাহাবাদেরকে আশ্বস্ত করলেন যে, তাদের উপর চলমান নিপীড়ন তো কেবল স্বল্প একটি সময়ের জন্য আর অচিরেই ইসলাম হবে বিজয়ী। তিনি সাহাবাদেরকে তাদের নিজেদের অবস্থার উপর দুঃখ অনুভব, সমবেদনা করতে নিষেধ করে দিলেন, বরং তাদের কষ্টকে তুলনা করলেন পূর্ববর্তী জাতির লোকেরা ঈমান আনার কারণে যে কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন সেই অবস্থার সাথে যেন তারা এই অত্যাচার নিপীড়নকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন, আর এটাও জানিয়ে আশ্বস্ত করলেন যে, চূড়ান্ত বিজয় হবে ইসলামের।

●●► মদীনার পথে হিজরতকালে, একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। আল্লাহর নবীকে ধরিয়ে দিলে ১০০ উট পুরষ্কার দেয়া হবে, এ লোভে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্ধান করতে এক ব্যক্তি বের হল, সে সুরাকা বিন মালিক। একসময় সে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হল। এই ভয়াবহ বিপদের মুহুর্তে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উলটো সুরাকা বিন মালিকের জন্য একটি নিরাপত্তা পত্র লিখে দিলেন ! বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি বিপদের কারণ ব্যক্তিকে নিরাপত্তা পত্র লিখে দিয়েছিলেন ! তদুপরি তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরাকাকে একটি সোনার বালা উপহার দিতেও রাজি হলেন, তাও কিনা পারস্য সম্রাটের রাজকোষ হতে! আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও সুরাকার অবস্থান হতে চিন্তা করলে, জীবন রক্ষার্থে উটের পিঠে চড়ে আপন জন্মভূমি হতে নির্বাসিত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এরকম কিছু লাভ করা শুধ অচিন্তনীয় নয়, বরং এক নিশ্চিত অসম্ভব ব্যাপার। অথচ, এরকম এক বিপর্যস্ত সময়ে এহেন সুমহান প্রতিশ্রুতি প্রদান শুধু আবু বকর সিদ্দিকের নিরাপদে মদীনায় গমনের আত্মবিশ্বাসকেই বৃদ্ধি করলো না বরং ইসলাম যে বিজয় লাভ করবে তার প্রতিও বিশ্বাস বৃদ্ধি হল। আর অবশ্যই, যখন পারস্য বিজয় হয়েছিল, সেই সোনার বালা ও খসরুর (পারস্য সম্রাট) মুকুট আনা হল হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট, তিনি সুরাকা ইবন মালিককে ডেকে পাঠালেন ও সেই রাজপোশাক পরিধান করিয়ে দিলেন।

●●► এমনকি জিহাদে রণাঙ্গনের কঠিন সময়েও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে উজ্জীবিত করার একটি আশ্চর্য সক্ষমতা ছিল, এমনকি যদি মনে হতো অনিবার্য পরাজয় সামনে তবুও তিনি তা করতে পারতেন। উহুদ যুদ্ধের কথা স্মরণ করুন, যেখানে কিছু মুসলিম তীরন্দাজের ভুল ও আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ অমান্য করার কারণে মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক বিশৃংখলা দেখা দিল, যার ফলে অনেক মুসলিম শহীদ হলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও মারাত্মক আহত হলেন। এমনি একটি পরিস্থিতিতে, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুসলিমেরা যুদ্ধের শেষে উহুদ পাহাড়ের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, কুফফারদের কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান বিজয়ের উদযাপনসূচক ভংগীতে বলে উঠল, হুবাল (আরবদের মূর্তি) এর জয় হোক এটা ছিল বিজয়ের উদযাপনের ভংগীতে বলা এবং মুসলিমদের প্রতি একটি বিদ্রুপ, যারা ময়দানের আকস্মিক পট পরিবর্তনের কারণে দুর্বলতা অনুভব করছিলেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা জবাব দিচ্ছো না কেন?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা কি জবাব দিব?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বলো, আল্লাহ তায়ালা মহান এবং সর্ব শক্তিমান।
মুসলিমদের পক্ষে জবাব দিচ্ছিলেন, হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু।
একথা শুনে আবু সুফিয়ান উচ্চস্বরে বললো, আমাদের জন্যে ওযযা আছে, তোমাদের ওযযা নেই।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা জবাব দিচ্ছো না কেন?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা কি জবাব দিব?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বলো, আল্লাহু মাওলানা ওয়া-লা মাওলা লাকুম– আল্লাহ তায়ালা আমাদের অভিভাবক, আর তোমাদের কোন অভিভাবক নেই

● এরপর আবু সুফিয়ান যে উক্তিটি করেছিল তা থেকে বোঝা যায় যে, মুসলিমদের ইতিবাচক মনোভাব দেখে সে আশ্চর্য হয়েছিল এবং সে বুঝতে পারল যে কথায় সে নীচু হয়ে যাচ্ছে, তাই সে কথার লড়াইয়ে সমতা আনার জন্য বলল, “দিনের বদলা দিন। তোমাদের জন্য বদর ছিল, আর আমাদের জন্য উহুদ…আজ বদরের যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের দিন। যুদ্ধ হচ্ছে একটা বালতি”।

হযরত উমার আবু সুফিয়ানের মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে বললেন, “ না, সমান নয়। আমাদের যারা নিহত হয়েছেন, তারা জান্নাতে রয়েছেন আর তোমাদের যারা নিহত হয়েছে, তারা জাহান্নামে রয়েছে”।

মুসলিমদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল চাঙ্গা করতে এই কথাগুলো দারুণ কার্যকরী ভূমিকা রাখল আর তারা ঘোষণা করলেন, বিজয় হয়েছে মুসলিমদেরই, ময়দানে কি হয়েছে তাতে কিছুই আসে যায় না।

 

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল ফাঁকা বুলি আওড়ানো মানুষ ছিলেন না।
উহুদের বিপর্যয়ের পরদিনের ঘটনা দেখুন,
 যখন অধিকাংশ মুসলিম ক্লান্ত ও আহত, তিনি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যারা লড়াই করেছিলেন তাদের সবাইকে আদেশ দিলেন যে তাঁরা তাদের লৌহবর্ম পড়ে নেয় ও হামরা আল-আসাদ পর্যন্ত যেন কুফফারদের সাথে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে তাড়া করে যায়। এটি ছিল এমন একটি সময়, যখন সাহাবাগণ শারিরীক ও মানসিক উভয় দিক থেকে চরমভাবে পরিশ্রান্ত ছিলেন, আহত মন ও দেহ, ব্যথায় অনেকে কাতরাচ্ছেন; এমন পরিস্থিতিতে এ ধরণের আদেশ কেবলমাত্র সেই নেতার কাছ থেকেই আসতে পারে যিনি দূরদর্শী ও অত্যন্ত কুশলী। কুরাইশরা, মক্কায় ফেরার পথে, তারাও চিন্তা করল মদীনায় ফিরে বাকি মুসলিমদের একেবারে চিরদিনের জন্য বিদায় করে দিতে কেননা এখন তারা দুর্বল, এমন সময়ে উলটো তারাই খবর পেল যে, হামরা আল-আসাদের দিকে মুসলিমরা রওনা দিয়েছে, এরপর তারা তড়িঘড়ি করে মক্কার পথে ছুটে পালাল ও আক্রমণের যাবতীয় কল্পনা মন থেকে বিদায় করে দিল। মুসলিমরা হামরা আল-আসাদে তিনি দিন পর্যন্ত অবস্থান করলেন মদীনায় ফেরত আসার পূর্বে; এবারে সমস্ত বাহিনী একেবারে চাঙ্গা ও খোশ মেজাজে ফিরে এলেন, বিজয়ের উদযাপনের আমেজ মন-মেজাজে চলে এল। সপ্তাহ খানেক আগের শারিরীক পরাজয়- বদলে গেল বিজয়ে।

 

আমাদের জন্যে আরও উদাহরণ হয়েছে খন্দকের যুদ্ধে
যখন মদীনার মুসলিমদের ঘিরে ফেলেছিল ১০,০০০ সৈন্যের এক বিশাল শক্তিশালী বাহিনী, যাদের মধ্যে ছিল কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র। মুসলিমদের ছিল মাত্র ৩০০০ জন, উপরন্তু এত বড় বাহিনী তাঁরা কখনো দেখেননি। তখন মদীনায় ছিল দুর্ভিক্ষ, তারা পেটে পাথর বেঁধে ক্ষুধা দূর করার চেষ্টা করতেন, আর চরম বৈরী আবহাওয়ার মাঝে নিজেদের রক্ষার্থে একটানা কাজ করে চললেন ও পরিখা খনন করলেন। যদি এই অবস্থা যথেষ্ট ভীতিকর বলে প্রতীয়মান না হয়, তবে জেনে রাখুন সেই কঠিন পরিস্থিতিতে খবর এল, মদীনার ভেতরকার ইহুদীরা মুসলিমদের সাথে চুক্তি ভংগ করেছে ও শহরের পিছন দিক থেকে আক্রমণের রাস্তা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তদুপরি, মুনাফিকরা মুসলিমদের সাথে এই কষ্টকর সংগ্রাম ত্যাগ করল ও আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বিদ্রুপ,কটাক্ষ করা শুরু করল। মুসলিমরা এত কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুর’আনে এ অবস্থাকে বর্ণনা করেছেন “…এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে”।
(আহযাব ১০)

এটা ছিল এক প্রাণান্তকর পরিস্থিতি, অথচ তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের সুসংবাদ দিলেন যে, তারা বিরাট শক্তিধর তৎকালীন ‘সুপার পাওয়ার’ পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য বিজয় করবেন, আর বাকি আরব্য উপদ্বীপ তো বিজয় হবেই। এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পেল ও চূড়ান্ত বিজয়ের সংবাদে আত্মবিশ্বাস ফিরে এল। আল্লাহ বর্ণণা করছেন, এরপর কিভাবে তারা সেই সম্মিলিত কুফফার সেনাবাহিনীর দিকে ফিরে তাকালো ও আল্লাহকে স্মরণ করলো, তিনি বলেন, “যখন মুমিনরা শক্রবাহিনীকে দেখল, তখন বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্য বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্নসমর্পণই বৃদ্ধি পেল”।(আহযাব ২২)

মানসিকতার পরিবর্তনের প্রভাব ছিল ব্যাপক, এবং এটা ছিল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ। তিনি আদেশ করেছিলেন যেন তারা পরাজিত ভিকটিম মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। যদি তারা পরাজিত মানসিকতার অধিকারী হতেন, হীনমন হয়ে থাকতেন, তারা সেই সুবিশাল শত্রুবাহিনীর সামনে নিঃশেষ হয়ে যেতেন।
অথচ, ইতিহাস সাক্ষী, এবারও তারাই বিজয়ী হলেন।

সীরাহ(জীবনী)গ্রন্থগুলো এমন ঘটনার বর্ণনায় ভরপুর।
যখন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাহিনীকে কৌশলগত কারণে মদীনার দিকে পিছু হটে নিয়ে এলেন, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে মুতার সেই ময়দানে রোমান সৈন্যদের সংখ্যাধিক্যের কাছে মুসলিমদের ক্ষুদ্র বাহিনীর সৈন্যসংখ্যার কোন তুলনাই হয় না। ফিরতি পথে, অনেকে খালিদ বিন ওয়ালিদকে ইয়া ফাররার (হে পলায়নকারী) বলে বিদ্রুপ করছিলেন। এই কথাগুলো খালিদকে মনোবল হারা করে দিতে পারতো, এমনকি তা মুসলিম সেনাবাহিনীর মাঝেও দুর্বলতা ছড়িয়ে দিতে পারতো, অথচ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে চাঙ্গা করে দিলেন ও শত্রুদের বিদ্রুপাত্মক কথাকে পালটে দিলেন, তিনি তাদের আদেশ করলেন যেন তারা বলেন, ইয়া কাররার(হে অগ্রগামী) এতে তারা বুঝতে পারলেন, কৌশলগত কারণে পিছু হটা আর পলায়ন করা এক নয়। এটা খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাহস শক্তি বৃদ্ধি করল আর তাঁরা এতে এরপর ডজনখানেক যুদ্ধে রোমান ও পারস্য বাহিনীকে পরাভূত করলেন।

 

●●►বিজয়ী মানসিকতা লালন করা ও তা ধরে রাখা, বৃদ্ধি করা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, 
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পরেও সাহাবীরা জিহাদ চালিয়ে গেলেন ও ইসলামের বিজয় আনতে লাগলেন। উদাহরণ দেখুন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন উসামা বিন যায়িদ(রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বাহিনীকে ফিরিয়ে আনতে অস্বীকার করেছিলেন তখন তিনি কি বলেছিলেন? অথচ সেই বাহিনী প্রেরণের দিনকয়েক পরেই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু বরণ করেন। এত বড় মানসিক আঘাত ও দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আরবের গোত্রগুলো পরিকল্পনা করছিল মদীনা আক্রমণের, একারণে অনেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এই পরিস্থিতিতে বাহিনী প্রেরণ করা উচিত হবে না। আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু জবাব দিলেন, যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীদের পায়ের গোড়ালি কামড়ে ধরে কুকুর টেনে নিয়ে যাও তারপরও আমি এই বাহিনী প্রেরণ করবো, আর যদি মদীনায় আমি ছাড়া আর কেউ নাও থাকে তারপরও আমি এই বাহিনী পাঠাব কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ দিয়েছেন!

তিনি কিছুতেই সেই বাহিনীকে ফেরত আনতে চাননি, যারা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশে বের হয়েছিলেন। আর যখন উসামার বাহিনী সামনে এগিয়ে চলল, শত্রুভাবাপন্ন আরব গোত্রগুলো লা-জওয়াব হয়ে গেল, তারা ভেবে পেল না, আল্লাহর নবীর মৃত্যুর মাত্র দিন কয়েকের মধ্যে কিভাবে এই বাহিনী জিহাদের ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। এটা সাক্ষ্য দেয়, বিপদের মুখে অবিচল ও অটল থাকার এই মানসিকতার কারণে শত্রুদের অন্তরে ভয় সৃষ্টি হল ও তারা মদীনা আক্রমণের যাবতীয় কল্পনা বাদ দিল।

সাহাবারা অনুধাবন করেছিলেন, মুসলিম হিসেবে যদি টিকে থাকতে হয়, যদি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে হয় তাহলে তাদেরকে অতিক্রম করতে হবে নানা রকম ফিতনা ও পরীক্ষা, সম্মুখীন হতে হবে যুলুম,নির্যাতন ও যন্ত্রণার। কিন্তু তারা জানতেন, দুনিয়া কিংবা আখিরাতে চূড়ান্ত বিজয় তাদেরই। তারা আরও জানতেন যে, ইসলামের বিজয় হবেই সেটা তাদের জীবদ্দশাতে না হলেও পরবর্তী সময়ে হবে। এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি যিনি আমাদেরকে কুর’আন ও হাদীসের বহু স্থানে অবগত করেছেন যে, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চলমান লড়াইয়ে মুসলিমরাই হবে চূড়ান্ত বিজয়ী আর ইসলাম টিকে থাকবে।

আমাদের অবশ্যই উচিত হল এই পরাজিত ভিকটিম মানসিকতা পরিত্যাগ করা, যাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি আমাদের দৈনন্দিন দুঃখ দুর্দশার কারণে, এগুলো ঝেড়ে ফেলে আমাদের উচিত একিন তথা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সামনে এগিয়ে যাওয়া কারণ বিজয় মুমিন ও মুসলিমদেরই। ফলে আমরা আমাদের বর্তমান অপমানজনক অবস্থা থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হব ইনশা আল্লাহ, অথচ আজ আমরা যুলুম ও বাতিলের মোকাবিলা করতে গিয়ে অন্যদের সাহায্য ও সমবেদনার দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকি। যদি আমাদের মত করে সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমও নিজেদেরকে খোলসের ভেতর গুটিয়ে নিতেন, নিজেদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী মনোভাব পোষণ করতেন, নিজেদের উপর চাপ অনুভব করতেন কিংবা অন্যদের কাছে সাহায্যের আবেদন করতেন, তাহলে আজ আমরা যেভাবে তাদের নাম ও খ্যাতির কথা জানি তা জানতাম না, এটা নিশ্চিত। একমাত্র আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মত ও পথে, তাঁর দেখানো পদ্ধতিতেই সর্বোত্তম উদাহরণ রয়েছে আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে, আমরা কি পারি না নিজেদের সম্মান ও মর্যাদাকে সেই পদ্ধতিতেই উদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে ?

আমরা কি পারি না নিজেদেরকে সেই সুনিশ্চিত বিজয়ের অংশ করতে, যার আগমন নিয়ে কোন সন্দেহ নেই?

 

কৃতজ্ঞতাঃ সরল পথ 

দৃষ্টি সংযত রাখার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা

$
0
0
ভাষান্তর : হামিদা মুবাশ্বেরা | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন, “(হে নবী) আপনি  মু’মিন পুরুষদের বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের  লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ্‌  সম্যক অবহিত। (সূরা আন-নূর; ২৪ : ৩০) অতএব, আল্লাহ্‌ পবিত্রতা ও আত্মিক উন্নয়নকে দৃষ্টি সংযত রাখার এবং লজ্জাস্থান হিফাযত […]

বাতিঘর

$
0
0
লেখিকাঃ রেহনুমা বিনত আনিস    কোণাচোখে তারিককে পাশের টেবিলে আরাম করে বসতে দেখে জামিল দ্রুত গলা নামিয়ে বলে, ‘শুনুন, আপনি কিন্তু কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেননা’। ঘটনার আকস্মিকতায় থতমত খেয়ে যায় ফারজানা। সে লোকটাকে চেনেনা, জানেনা, কোন সালাম নেই, সম্ভাষন নেই, হুট করে এই আচমকা অনুরোধ! তারিকের দিকে জামিলের চোরা চাহনি, ফিসফিস কথা বলার ভঙ্গি […]

এক মিনিটে আপনি কি কি আমল করতে পারেন

$
0
0
প্রশ্ন: আমরা অফিসে বা কর্মস্থলে ইবাদত-বন্দেগী ও নেককাজের তেমন কোন সময় পাই না। অফিসের পর বাকী যে সামান্য সময় পাই এর মধ্যে আমরা কি কি আমল করতে পারি এবং এ সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি? উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সময় মানুষের জীবন। সময়কে কখনো অপচয় হতে বা অকাজে নষ্ট হতে দেয়ার মত নয়। প্রজ্ঞাবান ও […]

কুরআন থেকে দূরে পলায়ন

$
0
0
লিখেছেনঃ   শায়েখ আবদুল আজিজ ইবনে বায  | বাংলা অনুবাদঃ  জহিরুল কাইয়ুম প্রশ্নঃ প্রিয় শেইখ, যারা এক মাস অথবা এমনকি অনেক অনেক মাস যাবত কুরআন পাঠ/তেলাওয়াত করে না এবং এমন আচরণের জন্য কোন অজুহাতও নেই তাদের জন্য আপনার উপদেশ কি ? যাই হোক, আপনি দেখে থাকবেন তাদের কেউ কেউ এমন সব ম্যাগাজিন পড়ে এবং গভীরভাবে অনুসরণ করে যেগুলো তাদের জন্য […]
Viewing all 402 articles
Browse latest View live